স্টাফ রিপোর্টার: তাঁর অপরাধ, তিনি এইচআইভি রোগী৷ সে কারণেই তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলাতে তৎপর হল গ্রামবাসীরা৷ অশিক্ষার কারণে মধ্যযুগীয় এই বর্বরতার শিকার হতে হল উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বেনা গ্রামের এই তরুণীকে৷ কোনও মতে নৃশংস গ্রামবাসীদের হাত থেকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হলেও বর্তমানে বারাসত হাসপাতালের ফিমেল ওয়ার্ডের ৩৮ নম্বর বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বছর সাতাশের ওই তরুণী৷
গত জুলাই মাসের ২৯ তারিখ রাতে ওই তরুণীর বাড়িতে চড়াও হন গ্রামবাসীরা৷ টেনে-হিঁচড়ে তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে মারধর করতে শুরু করেন তাঁরা৷ কিন্তু তাঁকে বাঁচানোর কেউ নেই৷ ছোট থাকতেই বাবাকে হারিয়েছেন৷ মা মানসিক ভারসাম্যহীন৷ পরিজন বলতে একজনই, তাঁর অন্ধ দাদা৷ তবে তিনি থাকেন পাশের পাড়ায়৷ মারধর করার পর কয়েকজন গ্রামবাসী মিলে শ্বাসরোধ করার জন্য তাঁর গলা টিপে ধরেন৷ এর পর চরম পর্যায়ে যায় তাদের বর্বরতা৷ গ্রামবাসীরা তার গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ৷
তবে লড়াই ছাড়েননি ওই তরণী৷ কোনও মতে নিজেকে গ্রামবাসীদের কবল থেকে ছাড়িয়ে প্রাণপণে ছুটে আশ্রয় নেন পাশের গ্রামে দাদার বাড়িতে৷ লড়াই যে তার অভ্যাস! কারণ কৈশোর কাটতে না কাটতেই লড়াই শুরু হয়েছে তাঁর৷
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছর আগে অসমে এক আত্মীয়ের শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছিলেন এই তরুণী৷ অভিযোগ, ওই আত্মীয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তাকে পাচার করে দেয়৷ মুম্বইয়ের নিষিদ্ধপল্লিতে বিক্রি করা হয় তাঁকে৷ তাঁর পরিবারের আশঙ্কা, সেখানে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি৷ নিষিদ্ধপল্লি থেকে পালিয়ে ফের গ্রামে ফিরে আসেন তিনি৷ এর পর কিছু দিন নরেন্দ্রপুরের একটি হোমে ছিলেন৷ গ্রামে ফিরে আসার পর অসুস্থ হওয়ায় এই গ্রামের এক ডাক্তার তথা ওই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য আবদুল রহিম তাঁকে সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান৷ ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসে তাঁর এডস ধরা পড়ে৷ গ্রামে ফিরে ওই ডাক্তার এলাকায় এডসের কথা জানিয়ে দেন৷ তার পর থেকেই ওই তরুণীকে একঘরে করে দেন গ্রমবাসীরা৷ তরুণীর অভিযোগ, তাঁকে পুকুরে যেতে দেওয়া হত না, কলে জল নিতে দেওয়া হত না৷ দীর্ঘদিন অমানুষিক এই অত্যাচারের পর শেষমেশ তাঁকে ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা করেন গ্রামবাসীরা৷
তরুণীর আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে হাসনাবাদে ছুটে যান এনএনবি প্লাস সংগঠনের সদস্যরা৷ তরুণীকে উদ্ধার করে প্রথমে টাকি হাসপাতাল, পরে বারাসত জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ উত্তর ২৪ পরগনা এনএনবি প্লাসের সহ-সভাপতি শুক্লা চক্রবর্তী জানান, তরুণীর অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাঁর শরীরে একাধিক আঘাত রয়েছে৷ মাথায় ও গলায় গুরুতর ক্ষত রয়েছে৷ এডস ছোঁয়াচে নয়, এই সচেতনতার বার্তা প্রচার সত্ত্বেও কেন বারবার রোগীদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এনএনবি প্লাস-এর সদস্যরা৷ বসিরহাটের মহকুমা শাসক নীতেশ ঢালি জানিয়েছেন, ঘটনার কথা শুনেছেন তিনি, বিডিও-কে তদন্ত করতে বলা হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.