Advertisement
Advertisement

Breaking News

মন্দারমণিতে তিন যুবকের মৃত্যু ফেরাল আবেশের ছায়া

ঝড় থামল৷ অ্যাকসিলারেটরে লাগামহীন গতি সেই ঝড় থামিয়ে দিল একরাশ প্রশ্নের ঝড় তুলে দিয়ে৷

Vaibhav's last Facebook status, posted at 7.01pm on Saturday, reads:
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 22, 2016 8:39 am
  • Updated:August 22, 2016 9:43 am  

অনির্বাণ বিশ্বাস ও নব্যেন্দু হাজরা: ‘স্ন্যাক বিফোর দ্য স্টর্ম’৷

সোনালি ভেজা বালিতে চাকার দাগ ধুয়ে দিয়ে গেল সমুদ্রের ঢেউ৷

Advertisement

বালিগঞ্জের সানি পার্কের বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পার্কিং জোনের পাশের ছোট্ট বাগান থেকে মন্দারমণির সৈকতের দূরত্ব অনেক৷ কিন্তু কোথাও যেন রবিবার উইক এন্ড-এর বৃষ্টিস্নাত সকাল মিলিয়ে দিল আবেশ দাশগুপ্তর সমবয়সি সুরজ দাশগুপ্ত, শিবরাজ নস্কর এবং বৈভব শাণ্ডিল্যকে৷

শনিবার সন্ধ্যায় চিনার পার্কের কাছে গরম পিৎজায় কামড় দেওয়ার পরই অ্যাকসিলারেটরে পা দিয়েছিল উড়তা কৈশোর৷ রাজারহাট নিউটাউনের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ছোটা শুরু করেছিল ফোর্ড ইকো স্পোর্টস (ডব্লুবি০বি এ-৬৪৭০)৷ গন্তব্য মন্দারমণির সোনালি সি-বিচ৷ ফেসবুকে বন্ধুদের জন্য আপডেট দিয়েছিল বৈভব, ‘স্ন্যাক বিফোর দ্য স্টর্ম’৷ সেই ঝড়ই থামল রবিবার সকালে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ির অন্দরে৷ রক্তাক্ত হয়ে৷ মৃত্যুতে৷

বন্ধুদের সঙ্গে উদ্দামতায় এক হয়ে গেল আবেশের জন্মদিনের পার্টি থেকে মন্দারমণির কার রেসের উন্মাদনা৷ তিন কিশোরের মৃত্যু আরও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল এই সমাজকে৷ উচ্চবিত্ত পরিবারের তিন সন্তান৷ ফোর্ড গাড়ি নিয়ে পাড়ি দেওয়া মন্দারমণি৷ ঘটনাক্রম থেকে যেটুকু জানা গিয়েছে তাতে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য৷ গাড়িতে ছিল মদের বোতল, গাঁজার পুরিয়া৷ রাতভর নাকি চলেছে বেহিসাবি নেশা৷ শিবরাজ অ্যাকাউন্টেন্সি নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে একটি ডিপ্লোমা কোর্স করতে বিদেশ গিয়েছিল৷ বৈভব দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র৷ শিবরাজ বেলেঘাটার নস্কর পরিবারের ছেলে৷ সুরজ ও বৈভব রাজারহাট-নিউটাউনের অভিজাত কমপ্লেক্সের বাসিন্দা৷ তিনজনের বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়েছিল ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে৷ স্কুলের পাঠ চুকলেও বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি৷ সুরজ, শিবরাজ এবং বৈভবের নেট দুনিয়ার অন্দরে চোখ রেখে জানা গিয়েছে, গতিময় জীবনে অভ্যস্ত ছিল তারা৷ কিন্তু সেই গতির ঝড়ই যে তিন পরিবারের উপর এমন সুনামি আছড়ে ফেলবে তা বোধহয় কল্পনাও করতে পারেননি কেউ৷

বেলেঘাটা থেকে নিউটাউন–তিন যুবকের পরিবারে শোকের ছায়া৷ পরিবারের নিকট আত্মীয়রা ইতিমধ্যেই রওনা হয়ে গিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের উদ্দেশে৷ বৈভবের বাবা অসুস্থ থাকায় ছেলের মৃত্যুর খবর তাঁকে জানানো হয়নি৷ প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব তিনজনের৷ পড়শোনাতেও ভাল ছিল তারা৷ তবে জেন ওয়াইয়ের উদ্দামতা ছিল জীবন ঘিরে৷

বৈভবের ফেসবুকের কভার ফোটোতে হারলে ডেভিডসন মোটরবাইকের পেট্রোল ট্যাঙ্কের ছবি৷ শহরের বিভিন্ন রেস্তোরা, নাইট ক্লাবে যাওয়ার কথাও পোস্ট করা হয়েছে সেখানে৷ নামী বার, হোটেলে সপ্তাহে দু’তিন দিন করে তাঁরা যেত পার্টি করতে৷ সেকথা ফলাও করে ফেসবুকে প্রচারও করত তারা৷ যেমনটা দেখা গিয়েছিল আবেশের সময়ও৷ তাহলে কি সপ্তাহান্তের নাইট পার্টি মন্দারমণিতে হওয়ার কথা ছিল? পুলিশ সূত্রে খবর, রাতভর মদ্যপান করার পর সকালে রীতিমতো বাজি ধরে কার রেসিংয়ে মেতেছিল তিন বন্ধু৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, ফোর্ড গাড়িটির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারের বেশি৷ তাই কন্ট্রোল না থাকায় গাড়িটি ধাক্কা মারে একটি বিএমডব্লুকে৷ দুর্ঘটনা তারই মর্মান্তিক পরিণতি৷

আবেশের মৃত্যুর পরও প্রশ্ন উঠেছিল কৈশোরের এমন বেহিসাবি উন্মাদনা নিয়ে৷ এবারও কি তেমনই লাইফস্টাইল প্রাণ কেড়ে নিল তিনজনের? নেশার আবেশে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছিল ফোর্ড গাড়িটা৷ শনিবার সন্ধ্যায় যে ঝড় তোলার কথা বলেছিল বৈভব৷ সেই ঝড়ই বোধহয় রবিবার উঠেছিল বৃষ্টিভেজা সৈকতে৷

ঝড় থামল৷ অ্যাকসিলারেটরে লাগামহীন গতি সেই ঝড় থামিয়ে দিল একরাশ প্রশ্নের ঝড় তুলে দিয়ে৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement