শুভময় মণ্ডল: শহরে পা রাখা শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রামের জন্য। কিন্তু কলকাতায় দুর্গাপুজোর সঙ্গে মিশে গেলেন স্রেফ ভালবাসার টানে। সুদূর মার্কিন মুলুকের ভারমন্ট থেকে যুবকের ঠিকানা হয়ে গেল শহরের পুজোমণ্ডপ। বকুল বাগান সর্বজনীনের পুজোমণ্ডপে নিজের আত্মার শান্তি খুঁজে পেয়েছেন আমেরিকান যুবক ডেন লিবারমান। গুরু হিসাবে পেয়েছেন শিল্পী বিমল সামন্তকে। যিনি এবছর বকুল বাগান সর্বজনীনের থিমসৃজনের দায়িত্বে। তাঁর সঙ্গে হাত লাগিয়ে মণ্ডপ নির্মাণ ও প্রতিমার অলঙ্করণেও সহযোগিতা করেছেন ডেন। কেন আচমকা পুজোর কাজে তিনি? কাঠের কাজের প্রতি ভালবাসাই এর নেপথ্যে। কাঠের চেনা গন্ধ তাঁকে টেনে এনেছে পুজোমণ্ডপে। সেই ভালবাসাতেই কলকাতার পুজোয় শামিল ডেন।
[মেয়েরাই ধারক, এ বার্তা নিয়েই মা আসছেন সোনাগাছিতে]
মাস দুয়েক আগে কলকাতায় আসা ডেনের। স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে মার্কিন মুলুক থেকে শহরে আসেন। ভরতি হন আলিপুরের লক্ষ্মীপত সিংঘানিয়া অ্যাকাডেমিতে। থাকতে শুরু করেন দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর থানার উল্টোদিকে বকুল বাগান অঞ্চলে। অ্যাকাডেমির ফ্যাকাল্টি অনীতা চন্দ্রের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর কলকাতার পুজোর বিষয়ে ওয়াকিবহাল হন তিনি। অনীতাদেবী আবার বকুল বাগান সর্বজনীনের একজন সদস্য। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে মণ্ডপ দেখতে আসেন ডেন। তারপর এখানে কাঠের এমন সুন্দর কাজ দেখে মোহিত হয়ে পড়েন ডেন। তখনই ডেন জানান, তাঁর একটা শখ হল কার্পেন্ট্রি। কাঠের কাজ ভাল লাগে বলেই শিল্পী বিমল সামন্তকে মণ্ডপসজ্জার কাজে সাহায্য করতে চান বলে অনুরোধ করেন ডেন। বিমলবাবুও রাজি হয়ে যান। ৯১তম বর্ষে বকুল বাগানের এবারের থিম ‘বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ’। প্রজন্মান্তরে যেমন জিনিসের মূল্য কমে তাই নিজের ভাবনায় মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী। সুপুরি গাছের পাতা, কাঠ দিয়ে অপরূপভাবে মণ্ডপ সাজিয়েছেন শিল্পী। কোয়েম্বাবাটুর থেকে এক বিশেষ প্রজাতির সুপুরি গাছের পাতা নিয়ে এসে তা দিয়ে মণ্ডপ গড়েছেন শিল্পী। প্রায় ৭০ হাজার পাতা। প্রতিমা গড়েছেন শিল্পী শুভেন্দু দাস। কিন্তু অলঙ্করণে বিমলবাবু নিজে। সেই কাজেই তাঁকে সাহায্য করেছেন ডেন।
[শহরের এই পুজোয় রূপান্তরকামী রূপে ধরা দিলেন উমা]
গত দু’মাস ধরে কলকাতায় থাকতে থাকতে শহরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন ডেন। আরও বেশি আপ্লুত হয়ে গিয়েছেন কলকাতার পুজো দেখে। কাঠ, বাঁশ ও অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে এভাবে যে উমার আরাধনায় মেতে ওঠা যায় তা ভাবতেই পারেননি ডেন। তাই বিমল সামন্তর সঙ্গে জুড়ে গিয়ে পুজোর প্রস্তুতিতে নিত্য আনাগোনা। প্রত্যেকদিন অ্যাকাডেমির পড়াশোনা চলার পর বাড়ি ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে ঠিক বিকেল ৪টে নাগাদ মণ্ডপে চলে যেতেন ডেন। তাঁর কথায়, কাঠের গন্ধ তাঁকে টানে। নিজের দেশে কাঠ দিয়ে ট্রি-হাউজও বানিয়েছেন। পুজো পাগল শিল্পী যেমন বিমল সামন্ত তেমনই তাঁর শিষ্য হিসাবে কাঠ পাগল ডেন ভালবেসে ফেলেছেন কলকাতার পুজোকে।
বকুল বাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তাদের মুখেও ডেনের প্রশংসা। এখন পাড়ার বাকিদের সঙ্গেও একাত্ম হয়ে গিয়েছেন মার্কিন যুবক। রীতিমতো পাঞ্জাবি পরে পাড়ার মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ধুনুচি নাচেও অংশগ্রহণ করছেন তিনি। গত কয়েকদিনে পুরোদস্তুর বাঙালি হয়ে উঠেছেন তিনি। গতবছর এই পুজোর থিমমেকার ছিলেন বিমল সামন্ত। সেবার পারস্পরিক সম্পর্কের বুনিয়াদ আরও মজবুত করার বার্তা দিয়েছিলেন নিজের থিমভাবনায়। এবছরও তিনি। বাঁধন ছেঁড়া প্রাণের কথা যেমন তিনি বলেছেন থিমে। সেইভাবেই মার্কিন যুবক ডেনের এই কাহিনি কোথাও যেন মিলেমিশে একাকার। শিল্পীর শিল্পকর্মের ভাষা যেন মার্কিন যুবকের শহরের পুজোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়ার গল্পকেই বুঝিয়ে দিচ্ছে।
[২০ টন রুপোয় ৬০ ফুটের রথ, এবার পুজোয় নজর কাড়বে এই মণ্ডপ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.