স্টাফ রিপোর্টার: যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়া প্রাপ্য ভরতুকি পেতে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেঁধে দেওয়া সুরেই সমস্ত বিরোধী দল সংসদে এককাট্টা হল৷ ভরতুকি পেতে সব ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা চলবে না, এই দাবিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার নজিরবিহীনভাবে উত্তাল হল সংসদ৷ দফায় দফায় মুলতবি হল রাজ্যসভার অধিবেশন৷
বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা সংসদে তৃণমূলের দলীয় দফতরে বসে আধার কার্ড ইস্যুতে সরব হওয়ার নির্দেশ দেন তাঁর সাংসদদের৷ বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনও চালিয়ে যেতে বলেন৷ সেই মতো রাজ্যসভায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে আধার কার্ডের বিষয় নিয়ে আলোচনার নোটিসও দেওয়া হয়৷ এই ইস্যুতে তৃণমূলের পাশে এসে দাঁড়ায় জেডিইউ, সমাজবাদী পার্টি, বিজেডির মতো রাজনৈতিক দলগুলিও৷ বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় যখন আধার নিয়ে তুমুল হই-হট্টগোল চলছে সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁর উপস্থিতিতে দু’বার রাজ্যসভা মুলতবি হয়৷
তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, সমাজবাদী পার্টির নরেশ গুজরাল, বিজেডির দিলীপ তিরকেরা যখন ভরতুকি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে তুমুল আপত্তি জানিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তখন রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সাংসদরাও তাতে যোগ দেন৷ বাম ও এআইএডিএমকে সাংসদরাও নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিরোধিতায় সমর্থন জানান৷ ‘আধার কার্ড কম্পালসরি মত করো, মত করো’ স্লোগানে রাজ্যসভা এদিন মুখরিত হয়ে ওঠে৷ পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় আধার কার্ডের ইস্যুকে কেন্দ্র করে এদিন দফায় দফায় তিনবার রাজ্যসভার অধিবেশন মুলতবি করা হয়৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু ও ধর্মেন্দ্র প্রধান বিরোধীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন৷ আধার কার্ডের আবেদন করেছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হবে না এবং রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে তারা এখনও পর্যন্ত আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করেননি বলে যুক্তি দেন৷ কিন্তু সরকার পক্ষের কোনও যুক্তিই এদিন খাটেনি৷
ডেরেক অভিযোগ করেন, “কেন্দ্র সরকার মুখে কো-অপারেটিভ ফেডারেলিজমের কথা বলে৷ কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করে না৷ আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করলে সারা দেশে তার চরম প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে৷” তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দশেখর রায়, নায়ডুর যুক্তিকে তুলোধোনা করেন৷ তিনি বলেন, “তোমরা যাদের আধার কার্ড আছে বা যারা আবেদন করেছে তাদের কথাই বলছ৷ কিন্তু যাঁরা অজ্ঞানতাবশত বা অন্য কারণে এখন পর্যন্ত আবেদনই করতে পারেননি তাঁদের কী হবে৷” পশ্চিমবঙ্গেই যে প্রায় এক কোটি মানুষের আধার কার্ড নেই সেকথাও জানান তিনি৷ সুপ্রিম কোর্ট যে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক না করার জন্য ইতিমধ্যেই রায় দিয়েছে সেই বিষয়টি সুখেন্দুবাবু উল্লেখ করেন৷
‘জিরো আওয়ারে’ তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও আধার কার্ডের বিষয় নিয়ে সরব হন৷ পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের প্রায় সব রাজ্যই কেন্দ্র সরকারের আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তে অসুবিধায় পড়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে সকলের এই অসুবিধার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সেকথা উল্লেখ করে কল্যাণবাবু বলেন, “বাধ্যতামূলক করার ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা রয়েছে৷ তাই আমাদের. দাবি, আধার কার্ড অপশনাল করা হোক৷ যাদের আছে তাঁদের জন্য বাধ্যতামূলক হোক৷ আর যতদিন পর্যন্ত দেশের ১২৪ কোটি মানুষের আধার কার্ড হচ্ছে, ততদিন তা বাধ্যতামূলক করা যাবে না৷”
আধার কার্ডের ইস্যুটিকে তৃণমূল যে সহজে ছাড়বে না এদিন তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলীয় নেতারা৷ লোকসভা ও রাজ্যসভায় সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীকে এই বিষয়ে জবাবাদিহি করতে হবে দাবি করা হয়েছে৷ পাশাপাশি, সরকারকে তাদের সিান্ত প্রত্যাহার করতে হবে বলেই তাঁরা দাবি করেছেন৷ শুধু তৃণমূল নয়, রাজ্যসভায় এদিন যেভাবে সব দল এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে, তাতে সরকারের পক্ষে বিষয়টিকে এড়িয়ে যাওয়া সহজ হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.