নবেন্দু ঘোষ,বসিরহাট: দুর্গাপুজোর বিসর্জন মানেই দুই বাংলার মিলনক্ষেত্র উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত লাগোয়া শহর টাকি। আর তাই দেশ ও রাজ্যের মানুষের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে এই এলাকা। ইছামতীর পাড়ঘেঁষা সেই ছোট্ট শহর টাকিতে দুর্গাপুজোর তোড়জোড় একেবারে শেষের দিকে। টাকির বারোয়ারি পুজোগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, টাকি রোডের একদম পাশে থুবা মোড়ের কাছে “থুবা ব্যায়াম সমিতি”র পুজো, যা এবার ৮৮ বছরে পড়ল।
কোনও থিমের পুজো না, একেবারে সাবেকি ঘরানার পুজো হয় এখানে। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা – সবেতেই সাবেকিয়ানার ছাপ। এবছর থুবা ব্যায়াম সমিতির মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে একটি মন্দিরের আদলে। মণ্ডপ চত্বরেই প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে। জানা গেল, দেবী দুর্গাকে ডাকের সাজে সাজিয়ে তোলা হবে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্তা ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে ষষ্ঠীর দিন এই পুজোর উদ্বোধন হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে জানালেন পুজো উদ্যোক্তারা। আর উদ্বোধনের দিন প্রায় শতাধিক দুঃস্থ মানুষকে বস্ত্রদান করা হবে।
রীতিনীতি মেনে শুধু পুজো করাই নয়। পাশাপাশি থুবা ব্যায়াম সমিতির পুজো ঘিরে সাংস্কৃতিক অনু্ষ্ঠানও হয়ে থাকে। সপ্তমীতে মণ্ডপের সামনে ভিড় জমানো দর্শনার্থীদের নিয়ে একটি কুইজ প্রতিযোগিতা হবে।অষ্টমীতে অঞ্জলি শেষের পর সমস্ত দর্শনার্থীকে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা থাকবে। ক্লাব সম্পাদক কমল ঘোষ বলেন, “এমন কোনও মানুষ নেই যে দুর্গাপুজোর দিন টাকির পুজো দেখতে বেরিয়ে থুবা ব্যায়াম সমিতির পুজো দেখতে আসবেন না। প্রতি বছর প্রচুর মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের এই পুজো দেখতে আসেন। সবার কাছে মূল আকর্ষণ থাকে আমাদের দেবী প্রতিমা।”
টাকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য পুজো ইছামতীর পাড়ঘেঁষা আরকিট ক্লাবের পুজো। এই পুজো এবার ২২ বছরে পড়ছে। এই ক্লাবের সম্পাদক কৌশিক কুণ্ডু বলেন, “আগে এই ক্লাবের পুজো হত ক্লাব চত্বরেই মণ্ডপ তৈরি করে। কিন্তু বেশ কিছু বছর আগে আমাদের দুই ক্লাব সদস্যের অকাল মৃত্যু হয়।এরপর থেকে স্থানীয়রা আমাদের বলেন, আমাদের ক্লাব চত্বরে যেখানে মণ্ডপ করে পুজো হচ্ছে, তার খুব কাছেই রয়েছে টাকির বিখ্যাত জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালান। যেখানে বহু বছর ধরে জমিদাররা দুর্গাপুজো করতেন। কিন্তু শেষের দিকে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। তাই ওই ঠাকুর দালানে পুজো না হওয়ার জন্য দেবী রুষ্ট হয়েছেন। তাই আমরা এখন ওই জমিদার বাড়ির দালানেই দুর্গাপুজো করছি।” এই ক্লাবের চোখধাঁধানো আলোকসজ্জার টানে প্রত্যেকবারই দর্শনার্থীদের ভিড়ি উপচে পড়ে। অষ্টমীতে থাকে কয়েক হাজার মানুষের জন্য পেট পুরে ভোগ খাওয়ার আয়োজন।
অন্যদিকে, টাকির রিক্রিয়েশান ক্লাবের পুজো এবার ৪২ বছরে পড়ল। এবার এখানকার মণ্ডপ সেজে উঠছে রাজস্থানের একটি পুরনো মন্দিরের আদলে। কাপড় ও সোলার কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন নকশা ফুটিয়ে তোলার কাজ চলছে। প্রতিমা হবে ডাকের সাজে। ক্লাবের সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র দাস জানালেন, চতুর্থীতে উদ্বোধন। ওই দিন এলাকার বিভিন্ন স্কুলের যেসব পড়ুয়ারা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে তাদের বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে, তাদের পুরস্কৃত করা হবে।
টাকির দুর্গাপুজো মানেই টাকির পূবের বাড়ির দুর্গাপুজো। যার বয়স ২৯৭ বছর। মাঝে আড়ম্বর হারিয়ে গেলেও গত বছর থেকে আবারও জাঁকজমকের সঙ্গে টাকির এই ঐতিহ্যশালী জমিদার বাড়ির পুজো হচ্ছে। এবছর টাকিতে পুজোর দিনগুলোয় অন্যান্য বছরের তুলনায় আরও বেশি ভিড় হবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা। কারণ, হাসনাবাদে বনবিবি সেতু হওয়ায় হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাকি ও বসিরহাটের যাতায়াত কিছুটা সুবিধা হবে। তাই বিভিন্ন জায়গা থেকেও ইছামতীর পাড়ে বেশ ভিড় বাড়বে বলে আশা কর্তৃপক্ষের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.