সৌরভ মাজি, বর্ধমান: শীতে এসেই উধাও। ঠান্ডা নিয়ে হা হুতাশ অনেকেরই রয়েছে। তবুও শেষ অগ্রহায়ণে গ্রামবাংলায় গেলে শীতের অতিথিদের খবর মেলে। এই যেমন খেজুর রস বা সরষে খেত। সবুজ ঘেরা এমন পরিবেশ চোখের ক্লান্তি দূর করবে৷ মন ভাল করবে৷ খুব দূরে নয় ঘর থেকে কয়েক পা ফেললেই রয়েছেন এমন বহু গ্রাম৷ যেখানে সবুজের পাশাপাশি দেখা মিলবে হরেক ধরনের পাখি যাদের কলতানে মুখরিত হয় পরিবেশ৷ রয়েছে পুরাতাত্ত্বিক ঠিকানা৷ মন ভাল করতে আর সারা সপ্তাহের কাজের চাপ থেকে কিছুটা মুক্তি দেবে এই সব জায়গা৷
[সমুদ্রপাড়ে তাঁবুতে রাত্রিবাস, এমন দিঘা কখনও দেখেছেন?]
সামনেই বড়দিন৷ ছেলেমেয়ের স্কুলের ছুটি৷ তাহলে আর দেরি কেন রুকস্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন৷ কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার পথ৷ সকালে গিয়ে রাতে বাড়ি ফিরেও আসা যাবে৷ এক-দু’রাত স্টে করতে চাইলেও সমস্যা নেই৷ নাইট স্টে করার মতো সরকারি গেস্ট হাউসও মিলবে৷ বেসরকারি লজ বা হোটেল তো আছেই৷ ভাবছেন কোথায় যাবেন? কোথায় গেলে পাবেন শরীর-মনের তৃপ্তি৷ হাতের কাছে রয়েছে ঠিকানা৷ কালনা৷ পূর্ব বর্ধমানের কালনা শহর ও সংলগ্ন এলাকাতেই উইক এন্ড ট্যুরের সবরকম রসদ মজুদ৷ প্রাচীন মন্দির, মসজিদ, চৈতন্যদেবের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা, মানানসই জলাশয়, চুনোমাছের ঠিকানা। এর পাশাপাশি ছাড়ি গঙ্গায় সন্ধ্যারতি দর্শনেরও সুযোগ মিলবে৷ হাওড়া থেকে ট্রেনে ঘণ্টা তিনেকের পথ কালনা৷ স্টেশনের নাম অবশ্য অম্বিকা-কালনা৷ সেখানে নেমে গাড়ি ভাড়া করে নিলেই হবে৷ আবার কালনা স্টেশনে না নেমে আরও আধঘণ্টা পর পূর্বস্থলী স্টেশনে নেমেও ট্যুর ম্যাপ ঠিক করা যেতে পারে৷ সেখানেও মিলবে গাড়ি৷
[নবরূপে সাজবে নীল নির্জন, বর্ষশেষের গন্তব্য হোক বীরভূমের বক্রেশ্বর]
প্রথমে কালনা শহরের কথাই বলা যাক৷ সেখানে রয়েছে বর্ধমান রাজাদের তৈরি ১০৮ শিব মন্দির৷ মন্দিরগুলি এমনভাবে তৈরি ঠিক যেন প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের আদল৷ জিউধারা মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের পাশাপাশি কিংবা দাতনকাঠি তলা মসজিদ ছাড়াও বেশ কিছু দেবালায় ছড়িয়ে রয়েছে শহরজুড়ে৷ পূর্বস্থলী ব্লকের শ্রীরামপুর এলাকায় রয়েছে বাঁশদহ বিল, চাঁদের বিল৷ যেখানে পাখির পাশাপাশি চুনোমাছের সংরক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে৷ হারিয়ে যেতে বসা প্রায় সবধরনের মাছের স্বাদ পাওয়া যাবে এখানে৷ পর্যটন দপ্তরের এখানে ট্যুরিস্ট গেস্ট হাউসও গড়েছে৷ বড়দিনের দিন এখানে চুনোপুঁটি উৎসব হয়৷ এখান থেকে যেতে হবে পূর্বস্থলীর চুপির পাখিরালয়ে৷ যেখান বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মিলবে৷ গেস্ট হাউস, ওয়াচ টাওয়ার, পিকনিক স্পট সবই তৈরি রেখেছে প্রশাসন৷
চুপিসারে চুপি গেলেও চুপচাপ থাকার উপায় নেই। কারণ এখানে অজস্র রকমের পরিযায়ী পাখিরা ভিড় করে। পাশাপাশি খাবারের টানে পৌঁছে যায় দেশি পাখিরাও। বালিহাঁস, কাস্তেচরা, সরাল, পার্পল হেরন, গ্রে হেরন, সন্ধ্যাবক, জলপিপির কলরবে অন্যরকম মেজাজ তৈরি হয় চুপির চরে। পাখিকে সামনে থেকে দেখার জন্য রয়েছে নৌকা বিহারের ব্যবস্থা। তবে সাবধান, নৌকায় উঠে হইচই করবেন না, তাহলে বেড়ানোর আনন্দ মাটি হয়ে যেতে পারে।
ছবি: মোহন সাহা ও সইফুদ্দিন মল্লিক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.