ষোলোর এজলাসে ছিল রায়ের ঘনঘটা। রায়ের অভিপ্রায়ে কাঠগড়ায় কেউ পেয়েছেন বিচার, কেউ মুক্তি, কারওবা কপালে জুটেছে শুধুই সাজা। বিচারের কিছু বাণী আবার ঠাঁই পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। বাছাই কিছু রাখা রইলো বিদায়বেলার খেরোর খাতায়। সৌজন্যে সংবাদ প্রতিদিন
১) কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডের রায় – ২০১৩ সালের ৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিল মেয়েটা। রাস্তা দিয়ে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। ৮ জুন উদ্ধার হয় ২১ বছরের ছাত্রীর রক্তাক্ত মৃতদেহ। বছরের শুরুতেই শেষ হয় সেই কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া। ২৯ জানুয়ারি ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সঞ্চিতা সরকারের এজলাসে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় আমিন আলি, আনসার আলি মোল্লা, সইফুল আলি মোল্লাকে। আমৃত্যু কারাবাস হয় ইমানুল ইসলাম, ভোলা নস্কর ও আমিনুর ইসলামের।
২) অস্ত্র মামলায় মুক্তি সঞ্জয় দত্তের – ৪২ মাস জেলে থাকার পর মুক্তি পেলেন বলিউডের খলনায়ক। একে-৫৬ রাইফেল অবৈধভাবে রাখার দায়ে সন্ত্রাসবিরোধী টাডা আইনে গ্রেফতার হয়েছিলেন সঞ্জয় দত্ত। ছয় বছরের সাজা হয়েছিল তাঁর। ‘ভাল আচরণের’ কারণে অস্ত্র মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার আট মাস আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারি পুনের ইয়েরওয়াড়া কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
৩) সৌরভ চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের রায় – বেআইনি মদের ঠেকের প্রতিবাদ করেছিলেন বামনগাছির কলেজ ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। এর মূল্য তাঁকে প্রাণ দিয়ে চোকাতে হয়েছিল। ১৯ এপ্রিল সেই মামলায় সাজা ঘোষণা করে বারাসত জেলা দায়রা আদালত। মূল অভিযুক্ত শ্যামল কর্মকার সহ-আট দোষীকে ফাঁসির নির্দেশ দেওয়া হয়। রাকেশ বর্মন নামে অপর এক দোষীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আরও তিন জনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক। সাজা শোনাতে গিয়ে বিচারক দামন প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, ‘এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ।’
৪) গুলবার্গ গণহত্যার রায় – ১৮ জুন রায় ঘোষণা হল গুলবার্গ সোসাইটি মামলার৷ ৬৬ জন অভিযুক্তর মধ্যে ২৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আহমেদাবাদের বিশেষ আদালতের বিচারপতি পিবি দেশাই৷ যার মধ্যে ১১ জনকে খুনের মামলায়, ১৩ জনকে অন্য ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত৷ উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ৩৬ জনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। দোষীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা হরেশ ভাট, অতুল বৈদ্য এবং জয়দীপ প্যাটেল৷ এছাড়া রয়েছে বিজেপি কাউন্সিলর বিপিন প্যাটেল এবং কংগ্রেস কাউন্সিলর মেঘসিং চৌধুরী৷ এছাড়া সঠিক ভাবে দায়িত্ব না পালন করায় এবং তথ্য প্রমাণ লোপাট করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মেঘানিনগর থানার পুলিশকর্মী কেজি এরদা৷ রায়ের পর সারা আহমেদাবাদ জুড়ে হাই-অ্যালার্ট জারি করা হয়৷
৫) সলমনের রেহাই – বছরটা বড় রেহাই দিয়েছে বলিউডের ভাইজানকে৷ ২৫ জুলাই বিরল প্রজাতির কৃষ্ণসার হরিণ হত্যার দায় থেকে সলমন খানকে মুক্তি দিয়েছে রাজস্থান হাই কোর্ট৷ ঘটনা ১৯৯৮ সালের৷ মরুশহরে শুটিং করার সময় বিরল প্রজাতির প্রাণী হত্যার দু’টি আলাদা ঘটনায় জড়ায় সলমনের নাম৷ ১৮ বছর পর এই অভিযোগ থেকে মুক্তি পেলেন তিনি৷ এই অপরাধের জেরে পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণা হয়েছিল দাবাং স্টারের৷
৬) সিঙ্গুর ঐতিহাসিক রায় – ৩১ শে আগষ্ট ২০১৬৷ দিনটা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে দেশের ভূমি আন্দোলনের ইতিহাসে৷ ২০০৬ সালের টাটাগোষ্ঠীর জমি অধিগ্রহণকে অবৈধ ঘোষনা করে ১২ সপ্তাহের মধ্যে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেবার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ভি. গোপালা গৌড়া ও অরুণ মিশ্রদের বেঞ্চ। এবার আমি শান্তিতে মরতেও পারি, রায় ঘোষণার পরই এই প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীনেত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধুমধাম করে পালন করা হয় সিঙ্গুর বিজয় দিবস। শুধু ভারতই নয়, সিঙ্গুরের ৯০০ একরের ইতিবৃত্ত সারা বিশ্বেই জমি সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দিয়েছে৷
৭) জামিন পেলেন মদন মিত্র – বহু টালবাহানার পর সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ জামিন পেলেন মদন মিত্র৷ প্রভাবশালী তকমার জেরে এর আগে বারবার নাকচ হয়েছিল তাঁর জামিন৷ শেষমেশ গ্রেফতারের ২২ মাস পরে ৩০ লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে মঞ্জুর হয় তাঁর জামিন৷ সারদা-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রীকে৷ যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ এখনও প্রমাণিত হয়নি৷
৮) হাজি আলিতে মহিলাদের প্রবেশাধিকার – দরগায় প্রবেশ করতে পারতেন৷ কিন্তু হাজি আলির অভ্যন্তরীণ কক্ষে ২৪ অক্টোবরের আগে পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল মহিলাদের প্রবেশ৷ সেদিন সুপ্রিম কোর্টে দরগা কমিটি মহিলাদের প্রবেশাধিকারের বিষয়ে সায় দেয়৷ পাশাপাশি, তাঁদের তরফ থেকে আদালতের কাছে চার সপ্তাহ সময় চেয়ে নেওয়া হয় প্রবেশাধিকারের বিষয়টিকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি টি এস ঠাকুর, ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় এবং নাগেশ্বর রাওয়ের ডিভিশন বেঞ্চ দরগা কমিটিকে এই সময় নেওয়ার অনুমতি দেয়৷ নির্দিষ্ট সময়ে মুসলিম মহিলা আন্দোলনের ৭০-৮০ জনের একটি প্রতিনিধিদল হাজি আলি দরগায় প্রবেশ করেন৷ দরগার প্রার্থনায় অংশও নেন মহিলারা৷
৯) প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় সঙ্গীত বাধ্যতামূলক – পক্ষে-বিপক্ষে এখনও অনেকে রয়েছেন৷ তবে নিয়ম ৩০ নভেম্বর থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে৷ সেদিনই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, যে কোনও প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত বাজাতে হবে। সুর বদলানো জাতীয় সঙ্গীত অথবা কোনও অতিরঞ্জিত ভার্সন শোনানো যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি জাতীয় সঙ্গীত চলার সময় স্ক্রিনে জাতীয় পতাকার ছবি দেখাতে হবে বলেও নির্দেশ। সেই সময় কোনও বিজ্ঞাপন চালানো যাবে না। হলে উপস্থিত প্রতিটি দর্শককে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন উঠে দাঁড়াতে হবে।
১০) মদের দোকানে নিষেধাজ্ঞা – পয়লা এপ্রিল থেকে আর হাইওয়েগুলির পাশে গড়ে উঠবে না কোনও মদের দোকান৷ ১৫ ডিসেম্বর জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট৷ বর্তমান দোকানগুলির লাইসেন্সও আর বাড়ানো হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি টিএস ঠাকুরের অধীনস্থ বেঞ্চ৷ বলা হয়েছে, এখন থেকে হাইওয়েগুলি থেকে অন্তত ৫০০ মিটার দূরেই মদের দোকান খোলা যাবে৷ এই দোকানগুলির কোনও পোস্টার বা হোর্ডিংও হাইওয়েতে থাকবে না৷ বর্তমানে যে বিজ্ঞাপনগুলি আছে সেগুলিও খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
১১) তিন তালাক অসাংবিধানিক – তিন তালাক অসাংবিধানিক৷ মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলাদের স্বাধিকারভঙ্গ করছে এই তিন তালাক৷ ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখ এই কথা জানিয়ে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট৷ শুধু তাই নয়, মুসলিম ল’ বোর্ডকে তোপ দেগে নিয়ে আদালতের বক্তব্য, কোনও বোর্ড সংবিধানের উর্ধ্বে নয়৷ মুসলিম ল’ বোর্ড নিজের মতো করে আইন তৈরি করতে পারে না৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.