সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু মজুমদার: শুধুই কি অভিনয়ের পেশাগত ব্যর্থতার জন্য চরম মানসিক অবসাদ? নাকি অন্য কোনও সম্পর্কের টানাপোড়েন? বাংলা সিরিয়ালের উদীয়মান অভিনেত্রী মৌমিতা সাহার মৃত্যুর তদন্ত যতই এগোচ্ছে, মৃত্যুর আসল কারণ নিয়ে জটিলতা ততই বাড়ছে।
‘কুসুমদোলা’ থেকে শুরু করে ‘কোজাগরী’, ‘জলনূপুর’, ‘টাপুর টুপুর’। এই সমস্ত জনপ্রিয় বাংলা ধারাবাহিকের উদীয়মান অভিনেত্রী মৌমিতা সাহার মৃত্যুর হস্যের তদন্তে এবার জড়িয়ে পড়ল টলিউডের এক প্রোডাকশন ম্যানেজারের নাম। যাঁর রিজেন্ট পার্কের ফ্ল্যাটে টানা দু’বছর ধরে প্রায় একাই থাকতেন মৌমিতা। শুধু তা-ই নয়, বাড়িতে বা পরিবারে অত্যন্ত চাপা স্বভাবের এই অভিনেত্রী শুধুমাত্র ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারের কাছেই নিজের সুখ-দুঃখের কথা আদানপ্রদান করতেন। অর্থাৎ, টলিউডের ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারই অভিনেত্রীর গোপন কথা জানতেন।
সেই সঙ্গে শুক্রবার দুপুরে শুটিংয়ের জন্য স্টুডিওতে যাচ্ছি বলে রিজেন্ট পার্কের ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান তরুণী অভিনেত্রী। এরপর থেকে তাঁর আর কোনও সন্ধান মেলেনি। মাঝে একবার ব্যান্ডেলে নিজের বাড়িতে বৃদ্ধা দিদিমাকে ফোন করে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা সবাই ভাল থেকো।” এরপর থেকে আর মৌমিতার কোনও খোঁজ মেলেনি। রাতে রিজেন্ট পার্কের ফ্ল্যাট থেকে মেলে মৌমিতার ঝুলন্ত মৃতদেহ। নিখোঁজের এই সময়ে ওই অভিনেত্রী কোথায় ছিলেন? তবে কি আসল রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সেইখানেই?
তবে কি এই সময়ের মধ্যেই ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে কারও মনোমালিন্য হয়েছিল? তাই কি বাড়ি ফিরে এসে নিজের শালোয়ার কামিজের ওড়না গলায় জড়িয়ে তিনি আত্মঘাতী হন? এই সমস্ত ‘মিসিং লিংক’-এর উত্তর খুঁজতে অভিনেত্রী ঘনিষ্ঠ ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারকে এবার রিজেন্ট পার্ক থানায় ডেকে পাঠিয়ে জেরা করতে চলেছে পুলিশ।
অত্যন্ত জেদি, রগচটা ও চাপা স্বভাবের তরুণী ছিলেন ওই অভিনেত্রী। এমনকী বাবা গোপাল সাহা এবং মা শ্যামলীদেবীর সঙ্গেও কথায় কথায় ঝগড়া হত তাঁর। শনিবার মৌমিতার মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর কাঁটাপুকুর মর্গে দাঁড়িয়ে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বাবা গোপাল সাহা বলেন, “বড়ই অভিমানী ছিল আমার একমাত্র সন্তান মৌমিতা। ছোটবেলা থেকেই আমরা তার সমস্ত চাহিদাই পূরণ করার চেষ্টা করে গিয়েছি। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর তার চোখেমুখে ফুটে উঠেছিল রুপোলি পর্দার বড় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন। এরপরই পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয়ে মন দেয়। তখন থেকেই ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারের সঙ্গে মৌমিতার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। মাসখানেক ধরে ধারাবাহিকের কোনও কাজ ছিল না তার। ফ্ল্যাটে একাই থাকত সে। সেই কারণেই হয়তো মানসিক অবসাদ থেকে এত বড় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল সে।”
ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারই রিজেন্ট পার্কের দু’কামরার ওই ফ্ল্যাট মৌমিতার জন্য ছেড়ে দেন। এমনকী মৌমিতা একা থাকাকালীন ওই ফ্ল্যাটে অবাধ যাতায়াত করতেন ওই প্রোডাকশন ম্যানেজার। শুক্রবার বিকেলে মেয়ের খোঁজ না পেয়ে তাঁর মোবাইলে বারবার ফোন করেন মা শ্যামলীদেবী। তাতেও কোনও সাড়া না মেলায় তিনি ওই প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ফোন করে সমস্ত বিষয়টি জানান। মেয়ের সন্ধান জানতে চান। তখন ওই প্রোডাকশন ম্যানেজার জানান, “আমিও মৌমিতা কোথায় আছে জানি না। খোঁজ নিয়ে বলছি।” এরপর রিজেন্ট পার্কের ওই বহুতলের অন্য একজন মহিলাকে মা শ্যামলীদেবী সব কথা জানান। ওই মহিলাই মৌমিতার ফ্ল্যাটের জানালা থেকে দেখতে পান ঝুলন্ত মৃতদেহ। পুলিশ তদন্তে নেমে মৌমিতার মোবাইলের কল লিস্ট ও টাওয়ার লোকেশন করে তদন্ত শুরু করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.