ছবিতে চৌধুরিবাড়ির দুর্গাপুজো, ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল চন্দ্রকোণার জগন্নাথপুরের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর কথা।
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: মা আসছেন পাঁঠার ঝোল খেতে৷ হ্যাঁ, পাঁঠার রং কিন্তু হওয়া চাই কুচকুচে কালো৷ গায়ে কোনও দাগ নৈব নৈব চ৷ অষ্টমী ও নবমী পুজোয় মায়ের চাই-ই চাই দুটো কালো পাঁঠার ঝোল৷ ৩০০ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে চন্দ্রকোণার জগন্নাথপুর গ্রামের চৌধুরিবাড়ির দুর্গাপুজো৷ পরিবারের ৩০০ বছরের প্রথা ধরে রাখতে চান বাড়ির প্রবীণ সদস্য রামঅরুণ চৌধুরি৷ তাঁর সাফ কথা, ‘পারিবারিক প্রথা যত কষ্টই হোক আমরা মেনে চলব৷ এ বছরও তার কোনও অন্যথা হবে না৷’ তাই চৌধুরিবাড়িতে প্রাচীন প্রথা মেনে শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর তোড়জোড়৷ পুজোর ক’দিন ঝলমলিয়ে ওঠে চৌধুরিবাড়ি৷ এককালে অভিজাত পরিবার চৌধুরিদের পুজোয় আজও শামিল হয় গ্রামের মানুষ৷
চৌধুরিবাড়ির পুজো কীভাবে শুরু হয়েছিল?
প্রাচীন দুর্গা দালানে বসে পরিবারের ইতিহাস তুলে ধরেন রামঅরুণবাবু৷ কলকাতার সখের বাজারের সাবর্ণ রায়চৌধুরিদের বংশধর রামকলি চৌধুরি এই পুজোর প্রচলন করেন৷ রামকলিবাবু ছিলেন ব্যবসায়ী৷ সঙ্গে ছিল কিছু জমিজমাও৷ ব্যবসা আর জমিজমা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন তিনি৷ গ্রামে ক্রমশ হয়ে উঠেন ‘বাবু’৷
বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের সমীহ আদায়ও করে নিয়েছিলেন রামকলিবাবু৷ রামকলিবাবু ছিলেন প্রচণ্ড ধার্মিক৷ ছিলেন শাক্ত ধর্মে বিশ্বাসী৷ তাঁর বেশ কিছু জমিজমা ছিল মেদিনীপুর জেলায়৷ সেই জমিজমা দেখতে প্রায়ই মেদিনীপুরে যাতায়াত করতে হত রামকলিবাবুকে৷ তখনকার যাতায়াতের ধকল এড়াতে মেদিনীপুরের জগন্নাথপুরে আস্তানা গেড়েছিলেন তিনি৷ সেই জগন্নাথপুরের বাড়িতে এক রাতে মা দুর্গা নাকি তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘তুই আমার পুজো কর৷ তোর সব দুঃখ ঘুচে যাবে৷’ যেই বলা সেই কাজ৷ মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে রামকলিবাবু পাকাপাকিভাবে জগন্নাথপুর গ্রামে বসবাস শুরু করেন৷ পরিবারকে নিয়ে চলে আসেন এই গ্রামে৷ জগন্নাথপুর গ্রাম ছাড়াও আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামেও প্রচুর জমি জায়গা কিনেছিলেন৷ ব্যবসায়ী রামকলি হয়ে ওঠেন প্রচুর জমিজমার মালিক৷ পেয়েছিলেন জমিদার তকমাও৷ ইংরেজি ১৭১৫ সালে শুরু করেন দুর্গাপুজো৷ তৈরি হয় স্থায়ী দুর্গা দালানও৷ ৩০০ পেরিয়ে এবার ৩০৪-এ পড়ল চৌধুরিবাড়ির পুজো৷ রামকলিবাবুর চালু করা প্রথা মেনে ফি বছর পুজোয় মায়ের জন্য বরাদ্দ হয় দুটো কালো পাঁঠা৷ অষ্টমী ও নবমীর দিন দুপুরে কালো পাঁঠার ঝোল সহযোগে মায়ের ভোগ চাই-ই চাই৷ তার আগে প্রাতঃরাশে চাই মুড়ি মুড়কি সহযোগে জল-খাবার৷ শুধু তাই নয়, মায়ের ভোজনের সময় গ্রামের পাঁচজনকে ডেকে পঙক্তি ভোজনও করাতে হয়৷ তবে আগের মতো আর পঙক্তি ভোজন হয় না৷ এখন শুধু নিয়ম পালন হয় মাত্র৷
প্রতি বছরই মায়ের মূর্তি তৈরি করতে হয়৷ দিতে হয় দেড় কুইন্টাল চালের নৈবেদ্য৷ পুরনো বড় থালায় নৈবেদ্য সাজিয়েই শুরু আয়োজন৷ প্রথা মেনে আজও চৌধুরিবাড়িতে মায়ের পুজোয় বাজে ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা৷ সঙ্গে সিঁদুর খেলাও৷ চোখে ভেসে ওঠে অতীতের জমিদার বাড়ির পুজোর ছবি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.