সাধ না মিটিল, আশা না পূরিল, বছর ফুরায়ে যায় মা…বছরশেষের মুহূর্তে এ অনুভূতিই যেন ঘিরে ধরে৷ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খেরোর খাতায় কত হিজিবিজি৷ এটা হল, তো ওটা হল না৷ সেটা হল তো ওটা হল আরও ভাল হত৷ কিন্তু সময় তো কারও জন্য অপেক্ষা করে না৷ সে তাই চলে যাবেই৷ যত অপ্রাপ্তিই জেগে থাকুক ২০১৬-কে বিদেয় দিতেই হবে৷ আর তাই ২০১৭’র ঘাড়ে চেপে বসে অনেক আশা৷ হিসেবের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে আমাদের মনে হয়, যদি এমন হয় তবে কেমন হত! তা কী কী হলে নতুন বছরের সফর সুহানা হয়ে উঠতে পারে? আসুন একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক৷
ফিরে এসো ১০০০ টাকার নোট
কালো টাকার কারবারিরা ছুঁয়েছে তাকে৷ তাই কলঙ্ক বুকে নিয়ে অসময়ে চলে যেতে হল৷ যে যায় সে আর ফেরে না৷ তবু ইতিহাস নাকি নিজেই নিজেকে ফিরিয়ে ফিরিয়ে আনে৷ আর তাই নতুন বছরে ফিরেও আসতে পারে ১০০০ টাকার নোট৷ বস্তুত ২০০০ টাকার নোট যত ত্বণ্বী, স্মার্ট, রঙচঙে রূপসী হোক না কেন, তাকে নিয়ে যে নাজেহাল আমজনতা৷ মূর্খ রূপসীর মতোই ওয়ালেটে থাকলেও সে কাজে লাগে না, কেননা ভাঙানো বড় দায়৷ অতএব, ফিরে এসো ১০০০ টাকার নোট৷ প্রধানমন্ত্রী, শুনছেন কি?
প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃথা আশা নাকি মরিতে মরিতেও মরে না৷ সেই যে বাঙালি বামপন্থীরা একবার ‘ঐতিহাসিক ভুল’ করে ফেললেন, তারপর থেকে কোনও বাঙালির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন কোথায় যেন মিলিয়ে গেল৷ তবু এই আকালেও প্রত্যাশা হাল ছাড়ে না৷ অন্তত সে স্বপ্ন জাগিয়ে রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জাতীয় রাজনীতিতে ফেডারেল ফ্রন্ট নাকি চিরকালের মরিচীকা৷ এই দেখা যায় তো ওই মিলিয়ে যায়৷ কিন্তু এতদিনে যেন তাকে মরুভূমিতে জলসত্র্রের মতো মনে হচ্ছে৷ নোট বাতিলের বিরোধিতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে যেভাবে বিরোধী জোট দানা বাঁধল, তাতে ফেডারেল ফ্রন্টের আলো দূর আকাশে বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ আর এ ফ্রন্টের মুখ যে মমতা তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ প্রথমে এককভাবে প্রয়াস নিয়েছিলেন৷ পরে প্রত্যেকটা দলের জন্য পৃথক পরিসরটা ছেড়ে দিতেই চাঙ্গা জোট৷ যদি বৃহত্তর শক্তি হিসেবে তৃতীয় ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করতে পারে তবে বাঙালির অধরা স্বপ্ন হয়তো পূরণ হতেও পারে৷
ভাইজানের বিয়ে
এবার স্টেটাসটা পাল্টেই ফেলুন সলমন খান৷ আর যেন না কেউ দঙ্গল-এর আমিরের মুখে তাঁর ছবি বসিয়ে সিঙ্গল বলে ট্রোল করতে পারে৷ এলিজেবল ব্যাচেলর হয়ে বহুদিন কাটিয়েছেন৷ তবে এবার বোধহয় সময় এসেছে৷ লুলিয়া ভান্তুরের সঙ্গে সম্পর্কটাও আর অজানা কিছু নয়৷ সুতরাং এরকম একটা বিয়েবাড়ির ভাবনা যেতেই পারে, যেখানে সাত পাকে বাঁধা পড়ছেন বলিপাড়ার চিরকেলে ভাইজান৷ আর সব যুক্তি তক্কো গপ্পো তুলে রেখে অতিথি আপ্যায়ণের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন শাহরুখ আর আমির৷ কী ভাবছেন এমনটা হওয়ার নয়! আরে ভাবতে তো আর দোষ নেই৷
ইস্টবেঙ্গলের আই লিগ
এবছর হাসি ফুটুক লাল-হলুদ সমর্থকদের মুখে৷ অনেক সাফল্যের ভিতরও এই একটা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছে মেহতাবদের৷ এ নিয়ে সবুজ মেরুন সমর্থকদের টিপ্পনিও কম শুনতে হয়না তাঁদের৷ আই লিগ বাংলার ক্লাবেই আসুক, আর নাহয় এবারটা হোক লাল হলুদেরই৷
ক্যাশলেসই ফেস
ক্যাশলেস লেনদেন বেসলেস নাকি ফেসলেস, তার উত্তর দিক সময়৷ যেভাবে নগদহীন অর্থনীতিতে সাবালক হয়ে যাচ্ছে দেশ, তাতে হয়তো ওয়ালেট থেকে উধাও হয়ে যাবে নোট৷ অন্তত আগামী বছরে সেরকম সম্ভাবনা কেউই উড়িয়ে দিতে পারছেন না৷ মোবাইলের ভিতরই ব্যাঙ্ক আর নগদ ছেড়ে নেটেই লেনদেন-আগামী বছরে তাই হয়তো অবধারিত হয়ে উঠতে চলেছে৷
ইন্টারনেটে বিপ্লব
জিও আসায় এমনিতেই ধুম লেগেছে হৃদকমলে৷ বিশেষত তরুণ প্রজন্মের৷ দুরন্ত গতির প্রজন্ম ইন্টারনেটের স্পিড থেকে খরচে আরও বিপ্লবের প্রত্যাশী৷ আর তাই এবছর ৫জি থেকে ৬জি-তে দেশ এগোক এমনটাই প্রত্যাশা৷
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি
গেল বছরটা যে পথ দেখিয়েছে, তাতে আগামী বছরে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলেজেন্সির রমরমা আরও বাড়তেই চলেছে৷ তা সে জিনিসটা খায় না মাথায় দেয়৷ আসলে কাজে দেয়৷ সোজা কথায় যাকে বলে রোবট৷ এখনই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের কাজ করে দিচ্ছে রোবট৷ তাতে মানবসম্পদের ভাঁড়ারে বেজায় সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ মানুষের কাজের সুযোগ কমবে৷ বিশেষত যে কাজগুলি একঘেয়ে, রিপিটিটিভ, যেখানে বুদ্ধিমত্তার তেমন প্রয়োজন নেই সেগুলোর দখল নেবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সিই৷ মানুষের জন্য অবশ্য থাকল সৃষ্টির পথ, সৃষ্টিশীলতায় নিজেকে বিকশিত করা সুযোগ৷ না, সে পথ আকীর্ণ করার জন্য কোনও রোবটের এখনও জন্ম হয়নি৷
ন্যুড রেস্তরাঁ
যৌনতার ছুৎমার্গ কাটিয়ে ক্রমশ সাবালক হয়ে উঠছে দেশ৷ শিল্প, সিনেমা, সাহিত্যে তার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে৷ কাজেই এ দেশে যে আগামী বছরে যে ন্যুড রেস্তরাঁ তৈরি হবে না, এমন কথা বলা যাচ্ছে না৷ বিশ্বে এ ধরনের রেস্তরাঁ ইতিমধ্যেই শোরগোল ফেলেছে৷ এ দেশে যৌনতা নিয়ে কোনওদিনই কোনও গণ্ডি ছিল না৷ কিন্তু কালে কালে মানসিকতায় শ্যাওলা জমেছে৷ সে শ্যাওলা সরে যাক, নতুন বছরের কাছে এমনটা প্রত্যাশা করাই যায়৷
উধাও তিন তালাক
রক্ষা পাক মানবাধিকার৷ কোনও নারীকেই যেন বঞ্চনার শিকার না হতে হয়৷ মুসলমান রমণীদের ক্ষেত্রেও তা যেন নয়৷ ল’ বোর্ডের যে গেরোয় আটকে আছে তাঁদের দুনিয়া, সে গেরো যেন কাটে৷ সবার উপরে মানুষ, ধর্মকে ছাড়িয়ে এই সত্যই যেন আগামী বছরকে ভরিয়ে দেয়৷
অনুর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ জয়
ভরা যুবভারতীতে বিশ্বকাপ উঠছে ভারতের হাতে৷ এ স্বপ্ন যে কোনও ভারতবাসীই দেখবে৷ এ বছরই অনুর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ হতে চলেছে ভারতে৷ দেশের ফুটবল এখনও বিশ্বের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে৷ কিন্তু এবছর হয়তো ছবিটা বদলাতে পারে৷
কিন্তু এসব কী সত্যিই হবে? হয়তো নয়৷ তবে কার তাতে কী, আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি!
আরও পড়ুন-
২০১৬ তোলপাড় হয়েছিল যেসব বিতর্কে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.