‘আমি পরানের সাথে খেলিব আজিকে মরণখেলা/নিশীথবেলা’ – রাত গড়ায়, ভোর আসে। পরানের সঙ্গে মরণের খেলা ফুরোয়। অন্তিম ফল – ‘পরশ করিলে জাগে না সে আর, /কুসুমের হার লাগে গুরুভার’। ২০২০ এমনই একটা বছর, যার ১২টা মাসের অধিকাংশই কেটেছে মৃত্যুভয়ের আবহে। যমের নাম – করোনা ভাইরাস। তাছাড়াও ভিন্নরূপে শমন হানা দিয়েছে কারও কারও শিয়রে। বিশ্ব যেন হয়ে উঠেছে ‘মৃত্যু উপত্যকা’। ২০২০ পেরলেই নতুন ভোর। সে পথে পা বাড়ানোর আগে একবারও কি আমরা মনে করব না মৃত্যুর পরশে হিম হয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের মুখ?করব বইকী । সেই স্মরণের পথ ধরে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের শ্রদ্ধার্ঘ্য –
রাজনীতির আঙিনা শূন্য করে চলে গেলেন যাঁরা –
প্রণব মুখোপাধ্যায় (১৯৩৫ – ২০২০): বীরভূমের কীর্ণাহারের শান্তশিষ্ট ‘পল্টু’ থেকে ভারতীয় রাজনীতির ‘চাণক্য’ – প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কীর্তিময় জীবনকে যে কোনও পরিসরেই ধরা মুশকিল। কংগ্রেসি মতাদর্শের হাত ধরে রাজনীতিতে প্রবেশ, তারপর সাংসদ, মন্ত্রী, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলে দেশের রাষ্ট্রপতি। বয়সের ভারে ধীরে ধীরে কাবু হতে থাকেন কংগ্রেসের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’। মস্তিষ্কে জমাট বাঁধে রক্ত, করোনা থাবা বসায় শরীরে। অগাস্টের ৩১ তারিখ প্রয়াত হন ৮৪ বছরের চাণক্য।
যশবন্ত সিং (১৯৩৮-২০২০): ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর থেকে রাজনীতিক। বর্তমান কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তৈরির সময়ে যে ক’জন কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিলেন, তাঁর মধ্যে একজন যশবন্ত সিং। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত এই সৈনিক মন্ত্রিসভার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব ছিলেন প্রাক্তন সেনা আধিকারিক। অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা – যখন যে দায়িত্ব পেয়েছেন, দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন তিনি। পোখরানে ভারতের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নেপথ্যেও তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৮০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত মোট ৯ বার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া যশবন্ত ছিলেন দীর্ঘ সময়ের সাংসদদের মধ্যে অন্যতম। রাজনীতি থেকে বিদায়ের পরও তাঁর মতামতের বেশ গুরুত্ব ছিল। বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে গত ২৫ জুন, ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হন।
সোমেন মিত্র (১৯৪১-২০২০): আমহার্স্ট স্ট্রিটের মিত্র বাড়ির ছোট ছেলে খোকন রাজনীতির প্রেমে পড়েই পা রাখেন বাড়ির বাইরে। হয়ে ওঠেন সকলের ‘ছোড়দা’। সাতের দশকের উত্তাল সময়ে কলকাতার বুকে কংগ্রেসের দেখানো পথে হেঁটে রাজনৈতিক দাপট জারি রেখেছিলেন লৌহকঠিন মানসিকতা দিয়ে। টানা বেশ কয়েকবার শিয়ালদহের বিধায়ক, মাঝে দল ছেড়ে নতুন দল গঠন, দলবদল, প্রত্যাবর্তন – সবরকম অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ ‘ছোড়দা’ ২০১৮ সালে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন। জুলাইয়ের ৩০ তারিখ ৭৯ বছরের নেতার নিথর দেহ নিয়ে শোকযাত্রায় স্লোগান উঠেছিল – ছোড়দা অমর রহে।
রুপোলি পর্দা ফিকে যাঁদের প্রয়াণে –
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৫-২০২০): অপু নাকি খিদ্দা নাকি ফেলুদা নাকি বিশ্বনাথ মজুমদার? নাহ, বিশেষ কোনও ভূমিকা নয়। তাঁর সামগ্রিক জীবন এতটাই উজ্জ্বল, যা ফিকে হওয়ার নয়। ‘অপুর সংসার’, ‘কোনি’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ – কতশত ছবি! আদ্যন্ত শিল্পী মানুষ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শিল্পপ্রতিভার বিকাশ ঘটেছে আবৃত্তি, নাটক থেকে সাহিত্যকর্মেও। দেশ-বিদেশের স্বীকৃতি পেয়েছেন অজস্র। আবার আদর্শকে আঁকড়ে ধরে বেশ কিছু পুরস্কার প্রত্যাখ্যানও করেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আয়ু ফুরোচ্ছিল তাঁর। ১৫ নভেম্বর, রবিবার, ছুটির দিনে আজীবনের জন্য ছুটি নিয়ে নিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম নক্ষত্র।
সন্তু মুখোপাধ্যায় (১৯৫১-২০২০): পড়াশোনায় তেমন মন ছিল না। দ্বাদশ শ্রেণির পরই তা ছেড়ে দিয়েছিলেন সন্তু মুখোপাধ্য়ায়। কলকাতার ছেলেটি ওই বয়সে নাচ, গান শেখার জন্য গুরুর সন্ধানে ছিলেন। তাঁকে টেনেছিল নাটকের মঞ্চও। ১৯৭৫ সালে ‘রাজা’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু। তারপর ২০২০ পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গে বড়পর্দা, ছোটপর্দায় কাজ করেছেন সন্তু মুখোপাধ্য়ায়। তবে শরীরে বাসা বেঁধেছিল ক্যানসার। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চরক্তচাপ, সুগারের সমস্য়া। এসবের সঙ্গে লড়াই করে শেষপর্যন্ত হেরে গেলেন। ১১ মার্চ, ৬৯ বছরে নিভল তাঁর জীবনদীপ। রেখে গেলেন সুযোগ্য কন্যা অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে।
ঋষি কাপুর (১৯৫২-২০২০): কথায় বলে, জন্মগত প্রতিভা। ঋষি কাপুরের অভিনয় প্রতিভা জন্মগত বললেও অত্যুক্তি হয় না। শিশুকালে লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল তাঁর – ‘মেরা নাম জোকার’ সিনেমার হাত ধরে। সালটা ১৯৭০। পরবর্তীতে সেটাই হয়ে উঠল প্রেম। ‘দিওয়ানা’, ‘ববি’র মতো সুপারহিট ফিল্ম থেকে সাম্প্রতিক সময়ের ‘কাপুর অ্যান্ড সন্স’, ‘১০২ নট আউট’ – প্রতিটি ছবিতে পরিণত থেকে আরও পরিণত অভিনয়ের ছাপ ফেলে গিয়েছেন তিনি। শরীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ কর্কটরোগ। এপ্রিলের ৩০ তারিখ ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ঋষি।
ইরফান খান (১৯৬৭-২০২০): মনে পড়ে ‘লাইফ ইন এ মেট্রো’র একটু অদ্ভুত ধরনের মানুষ মন্টিকে? কিংবা ‘দ্য লাঞ্চবক্স’-এর গম্ভীর, হাসতে ভুলে যাওয়া সাজন ফার্নান্ডেজ? এক লহমায় যে ছবিটা চোখের সামনে ফুটে ওঠে, সেই মানুষটা রিল এবং রিয়েল লাইফ থেকে আচমকাই ‘ভ্যানিশ’। অনুরাগীদের স্মৃতির খাতায় রেখে গেলেন ‘পান সিং তোমর’, ‘লাইফ অফ পাই’, ‘পিকু’, ‘হিন্দি মিডিয়াম’, ‘তলোয়ার’, ‘ডুব’-এর মতো সুপারহিট সিনেমা। শরীরে বাসা বেঁধেছিল কর্কটরোগ। এপ্রিলের ২৯ তারিখ। এটাই তাঁর জীবনের শেষ দিন। এরপর আর কখনও রুপোলি পর্দায় ভেসে উঠবে না তাঁর সেই বলিষ্ঠ চেহারা।
সুশান্ত সিং রাজপুত (১৯৮৬-২০২০): একটি বিতর্কে ঘেরা মৃত্যু। বলিউডের উদীয়মান প্রতিভা সুশান্ত সিং রাজপুতের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু হঠাৎ সব অপেক্ষা অর্থহীন করে দিয়ে ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেল মাত্র ৩৪ বছরে তাঁর অকাল বিদায়! প্রেম, মাদকাসক্তি, নেপোটিজম – একটার পর একটা ঘূর্ণাবর্তে উথালপাথাল হল দেশ। সেসবের ঝাপটায় হয়ত বা কিছুটা পিছনপানে সরে গিয়েছিল তাঁর প্রথম ছবি ‘কাই পো ছে’র সেই প্রাণোচ্ছ্বল ছেলেটি কিংবা ‘এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র দাপুটে ক্রিকেটার অথবা ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সি’র মেধাবী গোয়েন্দা। খুব অল্প দিনেই এসে পড়েছিলেন প্রচারের আলোকবৃত্তে। কিন্তু বিনা মেঘে বজ্রপাত। জুন মাসের ১৪ তারিখ বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে উদ্ধার হল বলিউডের সম্ভাবনাময়, সদাহাস্যময় নায়কের। তবে মৃত্যুরহস্যের জট খুলল না।
তাপস পাল (১৯৫৮-২০২০): এই নামের পাশে এক বন্ধনীতে যদি কোনও একটি কথা লেখা যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে ‘দাদার কীর্তি’। বাংলা সিনেমা জগতে এই সিনেমা থেকে তাপস পালের নাম বাঙালি হৃদয়ে খচিত হয়ে গিয়েছে স্থায়ীভাবে। ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘সাহেব’, ‘পারাবত প্রিয়া’, ‘মায়া মমতা’ – আরও কত সিনেমা যে স্রেফ তাপস পালের অভিনয়ে সিনেপ্রেমী দর্শকের মনে রয়ে গিয়েছে, ঠিক নেই। অভিনেতা ছাড়া রাজনীতিক হিসেবেও তাঁর পরিচয় ছিল। বিধায়ক, সাংসদ নির্বাচিত হয়ে একাধিক বিতর্কে জড়ান। চিটফান্ড-কাণ্ডে কারাবাসও করতে হয় রুপোলি পর্দার নায়ককে। ২০১৬ সাল থেকে শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ২২ ফেব্রুয়ারি, ৬১ বছর বয়সে সমস্ত জনপ্রিয়তা, বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে।
আসিফ বাসরা (১৯৭৬-২০২০): ছকে বাঁধা পথের পথিক ছিলেন না তিনি। বরাবর ভিন্ন ঘরানার অভিনয় করেছেন। আর তাতেই আসিফ বাসরা সিনেপ্রেমীদের হৃদয়ে নিজের একটি জায়গা করে নিয়েছিলেন পাকাপাকিভাবে। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘পারজানিয়া’, ‘ওয়ান্স আপন এ টাইম ইন মুম্বই’-এর মতো ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে তাঁর অভিনয় ভুলতে পারবেন না ফিল্ম সমালোচকরা। কিন্তু জীবন তো সিনেমার মতো চিত্রনাট্য নির্ভর হয় না। ১২ নভেম্বর, ধর্মশালার এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয় আসিফের ঝুলন্ত দেহ। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে এক প্রতিশ্রুতিমান অভিনেতাকে হারাল বলিউড।
চ্যাডউইক বোসম্য়ান (১৯৭৬-২০২০): রিল লাইফের ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ হারিয়ে দিয়েছিল অনেককে। এছাড়া মার্শাল, ডিএ ৫ ব্লাডস, ব্ল্যাক বটম থেকে শুরু করে মার্ভেল সিরিজের একের পর এক সিনেমায় দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়েছেন চ্যাডউইক বোসম্যান। রুপোলি পর্দায় একের পর এক যুদ্ধ জয়ের শরীরে বাসা বেঁধেছিল কোলন ক্যানসার। আর তার থাবায় জীবনযুদ্ধে মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই হেরে গেলেন নায়ক।
এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম (১৯৪৬-২০২০): সুর আর কথার মিলন ঘটাতে পারেন ক’জন? এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম পেরেছিলেন। বহুমুখী প্রতিভা তাঁর। নয়ের দশকের ‘পহেলা পহেলা প্যায়ার’, ‘হম বনে তুম বনে’ থেকে হালফিলের ‘চেন্নাই এক্সপ্রেসে’র টাইটেল ট্র্যাক – তিনি গেয়ে উঠলেই যেন সুরের জগত আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত। সংগীত পরিচালনা, গান গাওয়া, অভিনয়, ছবি প্রযোজনা – সব কাজেই এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম রেখে গিয়েছেন স্বকীয়তার ছাপ। প্রায় ৫০ বছরের কেরিয়ারে এসপি-র গানের সংখ্যা ৪০ হাজার! অন্যান্য পুরস্কারের পাশাপাশি ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্মভূষণ’এও সম্মানিত হন এসপি। তবে ৭৪ বছরের সংগীতকারকে কাবু করে ফেলেছিল মারণ ভাইরাস করোনা। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম।
ওয়াজিদ খান (১৯৭৮-২০২০): ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ দিয়ে পথচলা শুরু। সেটা ১৯৯৮ সাল, বয়স মাত্র ২০ বছর। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি সংগীতকার ওয়াজিদ খানকে। সলমন খানের বহু ছবিতে কাজ করেছেন ওয়াজিদ। ‘গর্ব’, ‘তেরে নাম’, ‘তুমকো না ভুল পায়েঙ্গে’, ‘পার্টনার’, ‘দাবাং’ ছবিতে নিজের জাদুতে মন ছুঁয়েছেন দর্শকদের। রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’তে বিচারক ছিলেন সাজিদ-ওয়াজিদ। আইপিএল ৪-এর থিম সং ‘ধুম ধাড়াকা’ লিখেছিলেন তাঁরা। কিন্তু জুনের ১ তারিখ ওয়াজিদ খানের মৃত্যুতে ভেঙে গেল সাজিদ-ওয়াজিদ জুটি।
সরোজ খান (১৯৪৮-২০২০): মাত্র তিন বছরেই ঘুঙুরের শব্দে নিজের আজীবনের প্রেম খুঁজে পেয়েছিল মেয়েটি। তারপর আর থামেনি কোথাও। মনপ্রাণ দিয়ে নাচই করে গিয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় কোরিওগ্রাফার সরোজ খান। বলিউডের প্রচুর সিনেমা হিট হয়েছে স্রেফ তাঁর নৃত্যশৈলীর গুণে। নায়ক-নায়িকাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘মাস্টারজি’। ‘এক দো তিন’, ‘তাম্মা তাম্মা লোগে’, ‘ধক ধক করনে লাগা’, ‘বেটা’, ‘গুলাব গ্যাং’, ‘কলঙ্ক’ খুবই প্রশংসিত হয়। এছাড়া ছোটপর্দার রিয়্যালিটি শো’এর বিচারক হিসেবেও সরোজ খানকে দেখা গিয়েছে। কিন্তু বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ৭১ বছর বয়সে জুলাইয়ের ৩ তারিখ প্রয়াত হন নাচের রানি।
জীবনের ‘খেলা’মাঠ ছেড়ে গেলেন যাঁরা –
দিয়েগো মারাদোনা (১৯৬০-২০২০): ফুটবলের ‘ঈশ্বর’ যদি হন তিনি, তবে সেই ‘ঈশ্বরে’র খেলা কতটা মনোমুগ্ধকর হয়, তা বোধহয় বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি একাই। শত দারিদ্রের মাঝে বুয়েনস আয়ার্সের বসতি আলো করে জন্মেছিল ছেলেটি। ১০ বছর বয়সেই জুনিয়ার ফুটবলে এই বিস্ময় প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে। আর ষোল পূর্ণ হওয়ার আগে সিনিয়র টিমে সুযোগ। এরপর ১৯৮৬-র বিশ্বকাপ জয়; ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার সেই অবিস্মরণীয় গোল, যাকে তিনি নিজেই ‘হ্যান্ড অফ গড’-এর কীর্তি বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে তাঁর সফল জীবনেও রয়েছে বহু বিতর্ক। বছরের মাঝামাঝি থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষমেশ নভেম্বরের ২৫ তারিখ আচমকাই জীবনের খেলার ময়দান ছেড়ে চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র।
পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৩৬-২০২০): বাঙালির ময়দান মানেই পিকে, চুনী। ফুটবল জীবনে অনবদ্য সাফল্যের পাশাপাশি কোচ হিসেবেও দুর্দান্ত সফল প্রদীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৫৮ সালে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টার্ন রেলের সদস্য ছিলেন। কোনও বড় ক্লাবে না খেললেও জাতীয় দলের হয়ে একাধিক সাফল্য রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৬০, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালের এশিয়ান গেমসে তিনি ছিলেন ভারতীয় দলে। এর মধ্যে ১৯৬২ এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে ভারত। কোচ হিসেবেও তাঁর সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। তাঁর পেপ টকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেক ফুটবলার। বাঙালির প্রিয় পিকে’র জীবনদীপ নিভল ৩০ মার্চ, ৮৪ বছর বয়সে।
চুনী গোস্বামী (১৯৩৮-২০২০): ক্রিকেট এবং ফুটবল – ময়দানে সমান পারদর্শিতার সঙ্গে দুটোই সামলানো প্রায় বিরল। আর সেই ব্যতিক্রমী কৃতিত্বের অধিকারী চুনী গোস্বামী। একটা সময় বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটও খেলেছেন। রনজি দলে জায়গাও পেয়েছিলেন। কিন্তু ফুটবলকেই পরে বেশি আপন করে নেন তিনি। চলতি বছর করোনার সময়ে প্রিয় বন্ধু পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুশোক ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল চুনী গোস্বামীকে। ঠিক একমাস পর, ৩০ এপ্রিল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জীবনের ময়দান ছেড়ে চলে গেলেন ৮২ বছরের চুনী গোস্বামী।
চেতন চৌহান (১৯৪৭-২০২০): স্বাধীনতার বছরে জন্ম, লড়াইয়ের মর্ম তো তিনি বুঝবেনই। লড়াইয়ের অস্ত্র হিসেবে চেতন চৌহান হাতে তুলে নিয়েছিলেন ব্যাট। ২২ গজে উত্তরপ্রদেশের ভূমিপুত্রের অভিষেক হয় ১৯৬৯ সালে। ওপেনার চেতন দেশের হয়ে চল্লিশটা টেস্ট খেলেছেন। টেস্টে দু’হাজারের উপর রানের রেকর্ড। অর্জুন পুরস্কারপ্রাপ্ত চেতন ক্রিকেট থেকে অবসরের পর নামেন রাজনীতির ময়দানে। উত্তরপ্রদেশের ক্রীড়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন অনেকদিন। চলতি বছর আক্রান্ত হন মহামারী করোনায়। দীর্ঘ সময় ধরে লড়াইয়ের পর ২৬ জানুয়ারি, দেশের সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে ৭৩ বছর বয়সি ক্রিকেটার জীবনের ক্রিজ থেকে ‘আউট’ হয়ে যান চিরতরে।
এছাড়াও যাঁদের হারিয়েছি –
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.