ধ্রূবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: “ঘটনার পিছনে আত্মার সূত্র প্রমাণ হলে এ দেশে গোটা গবেষণাটা অনেকটাই পিছিয়ে যাবে…
কথা প্রসঙ্গেই বলছিলেন গৌরবের বন্ধুরা৷
দিল্লির দ্বারকার ছেলে ইন্ডিয়ান প্যারানরমাল সোসাইটির প্রধান গৌরব তিওয়ারি৷ আত্মা নিয়ে সাত বছরের গবেষণাশেষে অস্বাভাবিক মৃত্যু৷ আত্মহত্যা বলেও পুলিশ যার প্রেক্ষিতে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি৷
এক সকালে স্নানঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতেই সজোরে একটা আওয়াজ৷ ওপারে আর্ত চিৎকার৷ নিথর শরীর৷ গলায় একটা নীল দাগ৷
আত্মা নিয়ে গবেষণা করে গৌরবকে কি আত্মার হাতেই প্রাণ দিতে হল?
যুক্তিবাদীরা বলবেন, আত্মার হাত হয় না৷ বলবেন, তাদের তো শক্তিই নেই৷ তবে ‘হাত’ আবার কী? বলছেনও৷ গৌরবের পরিচিত, তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁর কাজের ধরন জানেন ইন্ডিয়ান স্পেকট্রা প্যারানরমাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা রেভারেন্ড অভিজিত্ সরকার বলছেন, “আমি বিশ্বাস করি, কোনও মানুষের স্পিরিট বা আত্মা এই ঘটনা ঘটায়নি৷” তবে? উত্তরে তিনি যা বলছেন, তা আরও আতঙ্কের৷ বলছেন, “এই ধরনের ঘটনার জন্য কোনও ডেমনিক স্পিরিট দায়ী হতে পারে৷ কারণ এমনই কোনও একটি ডেমনিক স্পিরিটকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন গৌরব৷”
তবে কি তারই প্রতিশোধ?
গৌরব সম্পর্কে কোনও ‘দুর্বল’ শব্দ ব্যবহারে রাজি নন তাঁর বন্ধুদের কেউই৷ তার পরও জানা গিয়েছে, মৃত্যুর কিছুদিন আগে থেকেই একটি নেগেটিভ এনার্জির কথা বারবার বলছিলেন তিনি৷ বলছিলেন, সেই এনার্জি তাঁকে নিজের দিকে টানছে, যা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা তাঁর নেই৷ এটাই কি তবে সেই ‘ডেমনিক স্পিরিট’?
এবং তার পরই মৃত্যু৷
নিজের কাজ নিয়ে বহুদূর এগিয়েছিলেন গৌরব৷ যে কোনও গবেষণায় একেবারে শেষ পর্যন্ত যেতেন প্রাক্তন এই পাইলট৷ এক কথায় ‘ডেয়ার ডেভিল’ বলে তাঁকে উল্লেখ করে তাঁরই সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জয় পাণ্ডের দাবি, “অত্যন্ত যুক্তিবাদী ছিলেন গৌরব৷ অশরীরী কোনও কিছুকে অযৌক্তিকভাবে বিশ্বাস করে নিতেন না৷” আত্মার গবেষণায় বিশ্বের পাঁচজনের মধ্যে নাম ছিল যে গৌরবের, তিনি কি তবে দুরাত্মারই শিকার হলেন? এর কোনও উত্তর অবশ্য এখনই দিতে রাজি নন সঞ্জয়বাবু৷ বলছেন, “পুলিশ তো দেখছে৷ আগে তাদের তদন্ত শেষ হোক৷”
কলকাতার সিস্টেমেটিক প্যারানরমাল ইনভেসটিগেশন রিসার্চ অ্যান্ড ইণ্টেলিজেন্স টিম (স্পিরিট)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সৌমেন রায়৷ গৌরবের দীর্ঘদিনের এই বন্ধুও আত্মা নিয়ে গবেষণা করেন৷
তাঁরও প্রশ্ন, “এটাকে কি তবে ডেমনিক হন্টিং বলে ব্যাখ্যা করব?”
প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হওয়া এ ধরনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে যেমনটা ব্যাখ্যা করা হয়৷ কোনও প্রমাণ থাকে না৷ কয়েকটি ক্ষত৷ যা থেকে রক্ত ঝরে৷ কিছু আঁচড়ের দাগ আর একটা মৃতদেহ৷
ব্যাখ্যাটা দিতে গিয়েও থামলেন সৌমেন৷
ততটা না হলেও গৌরবের গলায় একটা নীল দাগ মিলেছিল৷ সরু তারে ফাঁস দেওয়ার দাগ৷ তবে সাত দিন আগের এই ঘটনায় আত্মহত্যার যুক্তিতে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি পুলিশ৷ যদি সরু তার গলায় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেই থাকে সে, উদ্ধার হয়নি সেই তারও৷
‘হন্টিং’ নিয়ে একাধিক গবেষণার কথা তুলে সৌমেন বলছেন, যে ধরনের গুজব এক্ষেত্রে ছড়িয়ে থাকে তাতে সব থেকে বেশি আতঙ্ক ছড়ায় এই ‘ডেমনিক হন্টিং’৷ এ ছাড়া ‘ইণ্টেলিজেন্ট হন্টিং’ও রয়েছে৷ ধরা যেতে পারে, একটি চাবির গোছা টেবিলের উপর কেউ রেখে অন্যত্র গেলেন৷ ফিরে এসে দেখলেন সেটি বিছানায় চলে গিয়েছে৷ প্রশ্ন উঠতেই পারে, আত্মা কি চাবিটা সরিয়ে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিল? কিন্তু আত্মার ‘কার্যকলাপ’-এ একেবারেই বিশ্বাসী নন সৌমেনরা৷ তাঁদের যুক্তি, আত্মার প্রমাণ মিললেও তাদের কোনও শক্তি নেই৷ কখনও কোনও বৈদ্যুতিক ‘সার্কিট’-এর সংস্পর্শে চলে এলে তাদের জায়গা পরিবর্তন হতে পারে মাত্র৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.