Advertisement
Advertisement

গরু বা মাদক পাচারকারীদের সঙ্গে মিশে ভারতে ঢুকছে জঙ্গিরা!

স্মাগলিং, পাচার বা অনুপ্রবেশের ঘটনায় বিএসএফ আটক করলেও, তদন্ত দূর অস্ত এফআইআর-ও করে না স্থানীয় থানার পুলিশ৷

Terrorists wounding and killing hundreds, to enter West Bengal from Bangladesh.
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 14, 2016 3:04 pm
  • Updated:July 14, 2016 3:06 pm  

জ্যোতির্ময় কর্মকার: মালদহের মাদক ব্যবসা বা সীমান্ত এলাকার গরু পাচার৷ কোনওটাই নতুন ঘটনা নয়৷ কিন্তু এখন এই পুরনো সমস্যাই নতুন করে রাতের ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের৷ গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ঢাকা হামলার পর এমনিতেই বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে নয়াদিল্লিকে সতর্ক করেছে ঢাকা৷ এখন কাশ্মীরে হিজবুল জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর উদ্ভূত রণক্ষেত্রের পরিস্থিতিতে পাক জঙ্গিরাও যে কোনও সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকতে রীতিমতো বেপরোয়া৷ এই পরিস্থিতিতে আপাত স্থানীয় অপরাধকে মুখোশ করেই ভারতের মাটিতে বড় ধরণের নাশকতা ঘটাতে পারে জঙ্গি সংগঠনগুলি৷ মূলত মাদক পাচারকারী বা গরু পাচারকারীদের সঙ্গে মিশেই সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারে জঙ্গিরা৷ এই খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে নয়াদিল্লি৷

বুধবারই প্রতিরোধের রূপরেখা ঠিক করতে পশ্চিমবঙ্গ-সহ অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং মিজোরামের মতো বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বর্ডার ম্যানেজমেন্ট-এর সচিব সুশীল কুমার৷ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব মেহেরিসিও৷ সীমান্ত সুরক্ষা একশো শতাংশ সুনিশ্চিত করতে বিএসএফ এবং সীমান্ত এলাকার স্হানীয় পুলিশ-প্রশাসনের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্কের উপর অত্যন্ত জোর দেন তিনি৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পাঁচ রাজ্যের শীর্ষ আধিকারিকদেরই প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা দিয়ে দেন তিনি৷

Advertisement

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক না হলে শুধু বিএসএফের নজরদারিতেই জঙ্গি অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব নয়৷ এক্ষেত্রে প্রতিটি রাজ্যেরই নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার বিষয় নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের জাল নোট, মালদহের মাদক পাচার, আফিমের চাষ বা মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগণা, নদিয়ার মতো সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলির গরু পাচারের সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনই একাধিক রাজ্যেই স্থানীয় প্রশাসন বিএসএফ-এর সঙ্গে একযোগে কাজ করে না বলেও গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, অনেক জায়গাতেই সীমান্ত এলাকার অপরাধের ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা দেখানো হয়৷ স্মাগলিং, পাচার বা অনুপ্রবেশের ঘটনায় বিএসএফ আটক করলেও, তদন্ত দূর অস্ত এফআইআর-ও করে না স্থানীয় থানার পুলিশ৷ দিনের পর দিন অবাধে অন্যায়-অপরাধ চললেও গ্রেফতারির সংখ্যা কম৷ এমনকী, চার্জশিট পেশের ক্ষেত্রেও জেলা পুলিশের অনীহা রয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য প্রশাসনের এই গলদকে কাজে লাগিয়ে সীমান্তপারের অপরাধীদের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে ভারত ভূখন্ডে জঙ্গিরা পা রাখতে চেষ্টা করতে পারে বলে দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকদের৷ প্রসঙ্গত, পাঠানকোট হামলায় এনআইএ তদন্ত শুরুর পরই কথা উঠেছিল, স্থানীয় মাদক পাচারকারীদের সহায়তা নিয়েই পাকিস্তান থেকে অনুপ্রবেশ করেছে হামলাকারীরা৷ এই বিপদের পুনরাবৃত্তি যাতে দেশের পূর্ব সীমান্তেও না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই বদ্ধপরিকর নর্থব্লক৷

এদিনের বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অতিরিক্ত ডিজি কে এস ধাতওয়ালিয়া জানিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে অনুপ্রবেশ রুখতে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে বিএসএফ-এর নিয়মিত ‘কো-অর্ডিনেশন’-এর একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের ডিজিপি প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফ-এর আইজি-র সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ মূলত সীমান্তে অপরাধের ক্ষেত্রে বিএসএফ-এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্য পুলিশ কতগুলি এফআইআর দায়ের করছে সেই হিসাবের পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হবে এই বৈঠকে৷ সীমান্ত অপরাধের সুনির্দিষ্ট গ্রেফতারির সংখ্যা, তদন্ত, অভিযুক্তের তালিকা, চার্জশিট পেশ-সহ পুরো প্রক্রিয়াই ডিজিপি এবং বিএসএফ-এর আইজির মাসিক বৈঠকের নজরদারির আওতায় থাকবে৷ এমনকী, বাংলাদেশ সীমান্তে অন্তঃরাষ্ট্র অপরাধের মূল পান্ডাদের সিন্ডিকেট ভাঙতে পশ্চিমবঙ্গের ডিজিপির নেতৃত্বে আলাদা একটি টাস্কফোর্সও গঠন হয়েছে এদিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বৈঠকে৷ এই টাস্কফোর্সে থাকবেন অসমের এডিজি সীমান্ত, বিএসএফ-এর উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ এবং গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারের আইজিরা৷ সীমান্ত এলাকার অপরাধ ও তার মূল পান্ডাদের সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে একমাসের মধ্যে জমা করবে এই টাস্কফোর্স৷ এছাড়াও বিএসএফের র‍্যাডারে থাকা ভারতীয় এবং বাংলাদেশি কুখ্যাত অপরাধীদের গতিপ্রকৃতির নিয়মিত রিপোর্ট পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা মেঘালয় এবং মিজোপামের রাজ্য পুলিশকে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ধাতওয়ালিয়া৷ অনুপ্রবেশ রোধ করতে যে সব গ্রামগুলি এখনও ভারত-বাংলাদেশ দুই ভূখন্ডের মধ্যেই পড়ছে তাদের পুরোপুরি ভারতে এনে কাঁটাতাঁরের বেড়ার আওতায় আনা হবে৷ প্রয়োজনে কয়েকটি জায়গায় বাংলাদেশ বরাবর জিরো লাইনের দিকে এগিয়ে যাবে কাঁটাতাঁর৷ সীমান্ত এলাকার পরিকাঠামো তৈরির জন্য রাজ্য সরকারগুলিকে দ্রুত জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ করারও আর্জি জানিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement