Advertisement
Advertisement

নস্করি মায়ের আশীর্বাদ পেতে কাঁটাতার পেরিয়ে আসেন ওপার বাংলার মানুষ

ঘন জঙ্গলে পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে নস্কর সাধু মায়ের পুজো করতেন।

Tehatta durga puja has some unique part, must visit

ছবিতে নস্করি মা।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 10, 2018 9:33 pm
  • Updated:October 10, 2018 9:33 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল  তেহট্টের নস্করি মায়ের দুর্গাপুজোর কথা।

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: সীমান্তের কাঁটাতার, ইনসাস রাইফেল, নিরাপত্তা বাহিনীর লং মার্চের মতো ঘটনাও নস্করি মায়ের মাহাত্ম্যের কাছে কিছুই না। তাই পুজো এলেই বারুদের গন্ধ কাঁটাতারের ভ্রূকুটি ভুলে সবাই উমার আগমনে মেতে ওঠেন। মেতে ওঠে গোটা তেহট্ট। পুজোর ক’টা দিন দুই বাংলার আবেগের নাম হয়ে ওঠে নস্করি মা । শিউলি ফুলের বোঁটার রঙের রণংদেহি দেবী দুই দেশের মধ্যে এক অনন্য মিলনোৎসবও গড়ে তোলে। এখনও দুই বাংলার বাসিন্দারা নস্করিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আখ্যান-উপাখ্যানে মেতে ওঠেন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, মানত করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। বর্তমানে কাঁটাতারে প্রবল কড়াকড়ির মধ্যেও বৈধ-অবৈধ উপায়ে ওপারের প্রচুর মানুষ দেবী দর্শনে আসেন। নস্করি মায়ের পুজো এবার ৪৭৫ বছরে পড়ল।

Advertisement

জানা যায়, বাংলা ৯৫০ সনে এই নস্করি মায়ের পুজো শুরু হয়েছিল। কথিত আছে, নস্কর বর্মণ নামে এক সাধু এই পুজোর সূচনা করেন। বাংলাদেশের ভেড়ামারায় এক জমিদার বাড়িতে প্রতিমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে প্রবল ঝড়, বৃষ্টি হয়। পুজো আটকে যায়। রাতে নস্কর সাধু স্বপ্নাদেশ পান। পুজো এখানেই করতে হবে। সেই মতো সাধু পুজো শুরু করেন। তারপর থেকেই নস্করি মায়ের পুজো নামে খ্যাতি লাভ করে। জন্মাষ্টমীর দিন কাঠামো পুজো করে মায়ের প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। পুরনো রীতি মেনেই কৃষ্ণনবমীতে নিমগাছ তলায় দেবীর বোধন হয়। গোটা এলাকায় একসময় ঘন জঙ্গল ছিল। শ্মশানও গড়ে ওঠে। সেখানেই পঞ্চমুণ্ডের আসনে বসে পুজো করা হত। এখন অবশ্য জঙ্গল বা শ্মশান নেই। পুজোও তান্ত্রিক মতে হয় না। কুমড়ো বা ফল দিয়েই হয় বলি। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে চট্টোপাধ্যায় পরিবার। পুজোকর্তা সৌমেন চট্টোপাধ্যায় জানান, এক সময় নস্কর সাধু নিম গাছের নিচে  বসে তপস্যা করত। তিনি মারা যাওয়ার পর এই বংশের প্রসন্ন রায়, শ্যামল চট্টোপাধ্যায়রা পুজোর হাল ধরেন। সপ্তমীর দিন অন্নভোগ, অষ্টমীতে লুচি, ক্ষীর হয়। নবমীতে খিচুড়ি, পাঁচ ভাজা, অন্নভোগ ও দশমীতে খই-দই ভোগ দেওয়া হয় মাকে।

[এবার পুজোয় আপনিও দুর্গা কিংবা অসুর, জানেন কীভাবে?]

কথিত আছে, কুঠিরঘাটে মা বালিকার রূপে বসেছিলেন। ওই রাস্তা থেকে যাওয়া এক শাঁখারিকে দেখতে পেয়ে মা ডাকেন। শাঁখারি কাছে যেতেই তিনি শাঁখা পরাতে বলেন। শাঁখারি দাম চেয়ে বসে। মা বলেন, নস্করি বাড়ির কুলুঙ্গিতে টাকা আছে। বাড়িতে গিয়ে চাইলেই দিয়ে দেবে। শাঁখারি ওই বাড়িতে পৌঁছে এক মেয়েকে দেখতে পায়। তার কাছে টাকা চাইতে সে ক্ষুব্ধ হয়। জানায়,  তাদের বাড়ির কেউ শাঁখা পরেনি। শাঁখারি পুনরায় ঘাটের কাছে ছুটতে ছুটতে যায়। কাঁদতে কাঁদতে সে শাঁখা পরা বালিকাকে খুঁজতে থাকে। এই সময় দশহাত তুলে দেবী ঘাট থেকে ওঠেন। শাঁখারি সেখানেই জ্ঞান হারান।

[সময় এগিয়েছে, তবুও জৌলুস হারায়নি ৫০০ বছরের ‘বুড়িমার পুজো’]

এরপর থেকে ওই শাঁখারির উত্তরসূরি মুরুটিয়ার বালিয়াডাঙার পালরা আজও পুজোর আগে নস্করি মায়ের শাঁখা দিয়ে আসে। দেবীকে নিয়ে এরকম অনেক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। পুজোটা আজও নিষ্ঠা ভরে আন্তরিকতার সঙ্গে করা হয়। কৃষ্ণনগর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে নস্করি মাকে দেখতে, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। দশমীতে নস্করিতলা থেকে গোদহর, হোগলবেড়িয়া বাজার হয়ে কুঠিরঘাট পর্যন্ত  প্রায় দু’কিলোমিটার পথ নস্করি মাকে কাঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। বিসর্জনের আগে দেবীকে কুঠিরঘাট থেকে হোগলবেড়িয়া বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ সাতবার অতিক্রম করা হয়। এ দৃশ্য দেখতে পথের দু’ধারে প্রচুর মানুষ দীর্ঘ সময়  দাঁড়িয়ে থাকেন। তারপর নস্করিকে কুঠিরঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়।

[স্বপ্নাদেশ মেলেনি, দেড় দশক ধরে এই বনেদি বাড়িতে বন্ধ পুজো]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement