ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: আল কায়েদা জঙ্গির বিরুদ্ধে গোয়েন্দাদের মূল অস্ত্র একটি পেন ড্রাইভ (Pen Drive)। ওই পেন ড্রাইভ থেকেই ভারতীয় আল কায়েদার নতুন মডিউলের সন্ধান চালাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। আবার আল কায়েদার নিয়োগের পদ্ধতিও ওই পেন ড্রাইভটির মাধ্যমে জানার চেষ্টা করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (STF)। জঙ্গি কার্যকলাপের তথ্যেই ঠাসা ও পেন ড্রাইভটি এসটিএফ আধিকারিকরা উদ্ধার করেছেন মালদহে আল কায়দার ভারতীয় শাখার সদস্য হাসনত শেখের বাড়ি থেকে। তার ভিত্তিতেই হাসনতকে টানা জেরা করছেন গোয়েন্দারা।
গত মাসের মাঝামাঝি উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের মাণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয় হাসনত শেখ। সেখানে শিক্ষকতার নাম করে সে ভারতীয় আল কায়েদা বা ‘আকিস’-এর (AQIS) স্লিপার সেল চালাত বলে অভিযোগ। বাংলাদেশ থেকে কয়েক দফায় আকিসের যে সদস্য ও নেতারা চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্য ও বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের থাকার ব্যবস্থা করছে এই স্লিপার সেলগুলি। ইতিমধ্যে হাসনত বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্যের থাকার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করার ব্যবস্থা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত জুলাইয়ে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশি জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) তথা ভারতীয় আল কায়েদার নেতা ফয়জল আহমেদকে। বাংলাদেশে ব্লগার খুনের মূল অভিযুক্ত এই ফয়জল। পলাতক ওই জঙ্গির ফাঁসির আদেশও জারি করেছে বাংলাদেশের আদালত। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের কাছ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পেয়ে এসটিএফের গোয়েন্দারা তদন্ত করতে শুরু করেন। জানা যায়, ওই নম্বরটি বেঙ্গালুরুর বোম্মানহাল্লি এলাকার বাসিন্দা শহিদ মজুমদারের। ওই মোবাইলের কললিস্টেও ছিল হাসনতের নম্বর।
বেঙ্গালুরু (Bengalore) গিয়ে তদন্ত করে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, ওই শহিদ মজুমদারই আসলে এবিটি তথা আল কায়েদা জঙ্গি নেতা ফয়জল আহমেদ। শহিদ মজুমদার নামেই জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র বের করে সে। অসমের বরাক উপত্যকায় আল কায়েদার মডিউল তৈরির কাজ করতে শুরু করে। এর মধ্যেই তার সন্ধান শুরু করে অসম পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। বেগতিক বুঝে সে গা ঢাকা দেয় বেঙ্গালুরুতে। ফয়জলকে জেরা করেই হাসনত শেখের সন্ধান মেলে উত্তরপ্রদেশে। ফয়জল এখন জেল হেফাজতে রয়েছে। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, জেরার মুখে হাসনত স্বীকার করে যে, বাড়িতে সে লুকিয়ে রেখেছে আকিস বা আল কায়েদার কার্যকলাপের বহু নথি, যেগুলি একটি পেন ড্রাইভেই বন্দি রয়েছে। সেগুলির সন্ধানে এসটিএফ আধিকারিকরা হানা দেন মালদহের কালিয়াচকে সুজাপুর এলাকার নাজিরপুর গ্রামে তার বাড়িতে। সেখান থেকেই উদ্ধার হয় ওই পেন ড্রাইভ। কোন রাজ্য থেকে কতজন যুবক ও তরুণকে ভারতীয় আল কায়েদা জঙ্গি সংগঠনে নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের বাংলাদেশ বা দেশের বাইরে কোনও জায়গায় পাঠানো হয়েছে কি না, সেই তথ্য জানা চেষ্টা হচ্ছে।
এদিকে, রাজ্য পুলিশের এসটিএফ মধ্যপ্রদেশের ভোপালের জেল থেকে একরামুল হক ও জাহিরুদ্দিন আলি নামে সন্দেহভাজন দুই বাংলাদেশি আকিস জঙ্গিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছে। তাদের আগেই গ্রেফতার করেছিলেন ভোপালের গোয়েন্দারা। তাদের সঙ্গে ফয়জল ও হাসনতের সম্পর্কও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কলকাতার আশপাশের কয়েকটি জেলায় মডিউল তৈরি করেছে আল কায়েদার জঙ্গিরা। আরও কয়েকটি জায়গায় মডিউল তৈরির ছকও কষা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই পেন ড্রাইভ থেকে ও জঙ্গিদের জেরা করে এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.