কৃষ্ণকুমার দাস: দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার ১০০ দিন পূর্ণ হওয়ার আগেই কেন্দ্রের কাছ থেকে একসঙ্গে ৫ হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরির প্রকল্প আদায় করে নিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক রোজগার যোজনায় এই প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরির জন্য ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে৷ সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ফের আদায় করে আনল রাজ্য সরকার৷ সোমবার নবমহাকরণে বাংলার পরিকাঠামো উন্নয়নে ফের কেন্দ্রীয় অর্থ আদায় করে আনার এই সাফল্যের খবর জানান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ একইসঙ্গে মন্ত্রী জানান, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে এবার থেকে সরাসরি পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে উন্নয়নের টাকা পৌঁছে যাবে৷ এত দিন জেলাপরিষদের মাধ্যমে জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতে টাকা পৌঁছত৷ শীঘ্রই গ্রামে গ্রামে ওই টাকা পৌঁছনো শুরু হবে বলেও পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানান৷ উল্লেখ, গত পাঁচ বছরে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকেই রাজ্যের গ্রামীণ ক্ষেত্রে প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক রোজগার যোজনায়৷ এবার বিধানসভা নির্বাচনে গ্রামের এই পাকা রাস্তাই তৃণমূল সরকারে ফিরে আসার অন্যতম ইস্যু ছিল বলে স্বীকার করেন রাজনৈতিক মহল৷
এতদিন এই প্রকল্পের রাস্তা তৈরি বাবদ ১০০ শতাংশ টাকাই দিত কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু এবার রাস্তা নির্মাণের মোট খরচের প্রায় ৩০ শতাংশ টাকা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে৷ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, “একদিকে বামজমানার দেনার টাকা কেটে নিয়ে যাচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় করের নামেও প্রচুর টাকা কাটছে কেন্দ্র৷ এর উপর গ্রামীণ উন্নয়নে মোদি সরকার আরও হাজার কোটি টাকার বাড়তি দায়িত্ব ও খরচ চাপিয়ে দিল রাজ্যের ঘাড়ে৷” বিষয়টি নিয়ে রাস্তা নির্মাণের ১০০ শতাংশ টাকা দেওয়ার জন্য ফের কেন্দ্রকে চিঠি দিচ্ছে রাজ্য সরকার৷ ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক রোজগার যোজনায় ১০০ শতাংশ টাকা দেওয়ার দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন৷ এবার মঞ্জুর হওয়া রাস্তাগুলি এক বছরের মধ্যে নির্মানের কাজ শেষ করার টার্গেট নিয়েছে পঞ্চায়েত দফতর৷ গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, দিল্লির গ্রামোন্নয়নের বরাদ্দ অর্থ আগামী মাস থেকে রাজ্যের বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ঢুকতে শুরু করবে৷ তখন আর জেলাপরিষদ বা সমিতিতে আসতে হবে না, পঞ্চায়েতে বসেই উন্নয়ন প্রকল্প চূড়ান্ত হবে৷
দ্বিতীয়বারের জন্য পঞ্চায়েত দফতরের দায়িত্ব হাতে আসতেই ফের ১৯টি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের সার্বিক উন্নয়নের টার্গেট নিয়ে জেলা সফর শুরু করেছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ ইতিমধ্যে দক্ষিণবঙ্গের বীরভূম, মুর্শিদাবাদ থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির মতো জেলাপরিষদের প্রতিনিধি ও আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক সম্পূর্ণ করেছেন৷ পুরুলিয়া জেলায় পানীয় জলের যে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তা আগামিকাল মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে উল্লেখ করা হবে৷ তবে পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, গতবার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আড়াই বছর তো উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি করা যায়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাপরিষদে বামপন্থীরা তখন ক্ষমতায় ছিলেন৷ কিন্তু এবার দু’টি বাদ দিয়ে অন্য সমস্ত জেলাপরিষদ তৃণমূলের হওয়ায় উন্নয়নে যেমন গতি এসেছে, তেমনই নবান্নের পরিষেবার বার্তা চটজলদি পৌঁছে যাচ্ছে৷ সুব্রতবাবুর কথায়, “পঞ্চায়েতের ১৯ প্রকল্প দিয়ে শুধু গ্রাম নয়, প্রতিটি গরিব মানুষের সার্বিক উন্নয়ন করা হচ্ছে৷ নারেগা দিয়ে কর্মসংস্থান, এসএসকেএস দিয়ে পড়াশোনা, ইন্দিরা আবাসে বাড়ি, নির্মল বাংলা’য় পায়খানা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়কে রাস্তার মতো প্রকল্প রয়েছে৷ আর সত্যি কথা বলতে কী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়েই গ্রামের মানুষ সরকারি প্রকল্প ও অর্থের সদ্ব্যবহার যে দেখতে পাচ্ছেন, তা বিরোধীরাও স্বীকার করছেন৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.