Advertisement
Advertisement

Breaking News

সোনালি ফসলের আশায় সিঙ্গুর তৈরি লক্ষ্মী আরাধনায়

পুজো হবে তাপসী মালিকের বাড়িতেও৷

Singur planning a big celebration during Lakshmi puja
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:October 14, 2016 9:35 am
  • Updated:October 14, 2016 9:35 am  

নব্যেন্দু হাজরা: বেড়াবেড়ির রুইদাসপাড়ায় একচালা ঘরে নাড়ুতে পাক দিতে ব্যস্ত স্বপ্না দাস৷ পাশে বসে কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁর বড় মেয়েও৷ বিজয়া শেষে ব্যস্ত নাড়ু বাঁধতে৷ নারকেলের পুর দিয়ে নানা আইটেম বানাচ্ছেন স্বপ্নাদেবীর বড় জা৷ কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বললেন, “ব্যস্ত থাকব না৷ এতদিন পর আবার কোজাগরীর আরাধনা করব জাঁকজমক করে৷ খিচুড়ি রাঁধব৷ ভোগ বিলাব৷ জমি চলে যাওয়ার পর পুজো দিতাম ঠিকই৷ কিন্তু তা নমো নমো করে৷ কিন্তু মা লক্ষ্মীই আমাদের জমি ফিরিয়ে দিয়েছেন৷ তাই এবার তাঁর আরাধনা হবে ঘটা করে৷”

জমি হারানোর পর থেকেই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর জীবনে উৎসব ছিল না৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দুর্গাপুজো৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিশ্বকর্মা পুজোও৷ তবে বন্ধ হয়নি মা লক্ষ্মীর আরাধনা৷ জমি ফেরতের আশায় প্রতিবারই লক্ষ্মীপুজো হত সিঙ্গুরে৷ কারণ ধনের দেবী তো মা লক্ষ্মীই৷ কিন্তু পুজো হলেও তাতে জাঁকজমক ছিল না৷ ছিল শুধু ধনদেবীর কাছে আকুতি৷ জমি ফেরত পাওয়ার প্রার্থনা৷ ধান্যলক্ষ্মীর আরাধনা করেই সিঙ্গুরবাসী চাইতেন, ফের যেন ফসল ওঠে তাঁদের ঘরে৷ ফের যেন সোনালি ফসলে ভরে যায় জমি৷ হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো ফের যেন ফেরে সিঙ্গুরে৷ শুধুই ছিল অপেক্ষায় দিন গোনা৷ এভাবেই পার হত বছরের পর বছরের উৎসব৷

Advertisement

মুখ ফেরাননি ধনের দেবী৷ ফল মিলেছে৷ আদালতের রায়ে জয় হয়েছে কৃষকদের৷ হারিয়ে যাওয়া জমি ফের ফিরেছে কৃষকের হাতে৷ তাই এবারের লক্ষ্মীর আরাধনা একটু অন্যরকম৷ প্রায় ১০ বছর পর এবার আবার সিঙ্গুরে হয়েছে দুর্গাপুজো৷ সেই মণ্ডপেই এবার লক্ষ্মীর আরাধনা৷ তবে অনেক ক্লাবেই দুর্গাপুজো না হলেও লক্ষ্মীপুজো হবে৷ জমি হারানোর পর থেকেই বাজেমেলিয়া, গোপালনগর, বেড়াবেড়ির কৃষক পরিবারে লক্ষ্মীর আরাধনা হলেও তাতে প্রাণ ছিল না৷ তাঁরাও এবার ঘটা করেই করবেন ধনদেবীর আরাধনা৷ হবে ভোগ রান্না, খিচুড়ি বিতরণ৷ ফের যেন প্রাণ এসেছে সিঙ্গুরে৷ দশমীর বিষাদ ভুলে তাই এখন সিঙ্গুর অপেক্ষায় লক্ষ্মীর আরাধনায়৷

অনেকের বাড়িতেই ধান্যলক্ষ্মীর পুজো হবে৷ অনেকের বাড়িতে লক্ষ্মীর সরা কিনে৷ আবার কারও বাড়িতে মূর্তিপুজো৷ তবে এবারের উৎসবে মা-লক্ষ্মীকে আড়ম্বরের সঙ্গেই ঘরে তোলার অপেক্ষায় সিঙ্গুরবাসী৷ বেড়াবেড়ি বাজার, খাসের ভেড়ি, গোপালনগর ঘোষপাড়া, সিংহের ভেড়িতে মা-লক্ষ্মীকে আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন ক্লাবের সদস্যরা৷ সমস্ত উপাচার মেনেই হবে পুজো৷ পুজো হবে তাপসী মালিকের বাড়িতেও৷ তাপসী মারা যাওয়ার দিনকয়েক আগে ছিল লক্ষ্মীপুজো৷ সিঙ্গুরের আন্দোলন যখন মধ্যগগনে, সেই সময় গ্রামে কংগ্রেসের তরফে একটি লক্ষ্মীপুজো করা হয়েছিল৷ সেই পুজো উপলক্ষে মাঠের মধ্যে উনুন তৈরি করে খিচুড়িভোগ রান্না হয়৷ খিচুড়ি রান্নায় হাত লাগিয়েছিল তাপসীও৷ কিন্তু পুজোর ক’দিন পর ওই উনুনের মধ্যে থেকেই উদ্ধার হয়েছিল তাপসীর পুড়ে যাওয়া মৃতদেহ৷ তাই তারপর থেকে আর সেভাবে তাপসীর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়নি৷ এবার হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শ্বেতপাথরের লক্ষ্মীমূর্তি উপহার দিয়েছিলেন তাপসীর মা মলিনাদেবীকে৷ সেই মূর্তিতেই ঘটা করে পুজো দেবেন তিনি৷ রাত পোহালেই কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো৷ বেড়াবেড়ির বিমলা দাস, গোপালনগরের গীতা মালিক, বাজেমেলিয়ার বিন্দু সামন্তকে তাই দেখা গেল ধনদেবীর আরাধনার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকতে৷ কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মহাদেব দাস বলেন, “মা লক্ষ্মী এখানকার মানুষের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন৷ তাই তাঁর আরাধনা এবার হবে ঘটা করেই৷

(ছবি: অরিজিত্‍ সাহা)

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement