স্টাফ রিপোর্টার: ‘শবর জননী’-র ইচ্ছের মর্যাদা দিতে তাদের প্রথামত মহুল গাছ লাগিয়ে মাতা-র স্মৃতিচারণা করবে শবররা৷ শুক্রবার কেওড়াতলা শ্মশানে সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী মহাশ্বেতাদেবীর পূর্ণরাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হলেও পুরুলিয়ার কেন্দার শবরভূমি রাজানোওয়াগড়ে মহুল গাছ লাগিয়ে তাঁর ইচ্ছের মর্যাদা রাখবেন৷ কারণ ২০০৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতির সদর দফতর এই রাজনোওয়াগড়ের পাশের মাঠে শবর মেলায় ‘জননী’ বলেছিলেন, “আমার মৃত্যুর পর এখানেই সমাধিস্থ করতে হবে৷ তারপর দাহস্থলে একটি মহুল গাছ লাগবে৷” সেই ইচ্ছের জন্যই এই কর্মসূচি নিচ্ছে শবরদের এই সংগঠন৷
শবররা মাতৃহারা হওয়ায় এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ‘শবর সংসার’ কে সামলাবে৷ কারণ ১৯৬৮ সালে শবর সমিতির প্রতিষ্ঠাতা গোপীবল্লভ সিংদেও বয়সের ভারে ন্যূব্জ৷ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছেন৷ তাছাড়া এই সংগঠনটিও প্রায় ছন্নছাড়া৷ পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তায় রাজনোওয়াগড় মোড় থেকে কিছুটা দূরেই এই সংগঠনের কার্যালয়৷ এদিন সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায় চারদিক শুনশান৷ গোটা কার্যালয় এলাকা জুড়েই শূন্যতা গ্রাস করেছে৷ যে আমগাছের তলায় সিমেন্ট বাঁধানো চেয়ারে মহাশ্বেতাদেবী বসতেন সেখানে বসেই অঝোরে কাঁদছিলেন গোপীবল্লভ সিংদেও৷ এই কার্যালয়ে রান্না করা ত্রিলোচন রানা বলেন, “চোখের সামনে ভাসছে সেইসব দিনগুলো৷ মনে হচ্ছে এই সেদিনকার ঘটনা৷ লাল চা খেতে খুব ভালবাসতেন৷ মেলার সময় খিচুড়ি খেতেন৷ তেলেভাজা-মুড়িও প্রিয় ছিল৷”
মাসখানেক আগেও ‘শবর জননী’-র একবার ফোন আসে এই দফতরে৷ আসার ইচ্ছে প্রকাশও করেন৷ তাই কার্যালয়ে থাকা হালকা হলদে রঙের গ্রিল দেওয়া একতলা বাড়িটি নতুন করে পরিষ্কার করার কাজও শুরু হয়৷ কিন্তু আর ওই লম্বা টানা বারান্দার ঘরে কোনওদিনই পা রাখবেন না শবর মাতা৷ খোঁজ নেবেন না শবর শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে কি না৷ নেশা করছে না তো? সংগঠনের অধিকর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “জননী’-র ইচ্ছের মর্যাদা দিয়ে আমরা সদর দফতরে একটা মহুল গাছ লাগিয়ে স্মৃতিচারণা করব৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.