টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, গ্র্যান্ড স্লাম থেকে ফেড কাপ৷ বছরভর ক্রীড়াপ্রেমীদের আনন্দের মুহূর্ত দিয়ে গেলেন ক্রীড়াবিদরা৷ আর এই একটা বছরে একঝাঁক সাফল্যের মুখ দেখল এই দুনিয়া৷ কখনও উজ্জ্বল হল খেলার দুনিয়া, কখনও আবার মহাকাশে পৌঁছে গেল স্যাটেলাইট৷ বছর শেষে আরও একবার সেই সাফল্যের দিনগুলি ফিরে দেখলে কেমন হয়! বর্ষবরণের প্রাক্কালে সেই সুখের স্মৃতিগুলি মনে করে ফের সেলিব্রেশনে মাতার সুযোগ করে দিল সংবাদ প্রতিদিন৷
১. এশিয়া সেরা:
বছর শুরু হল ধোনিবাহিনীর এশিয়া কাপ জয় দিয়ে৷ আর বছর শেষও হল সেই এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই৷ বছর শেষের ট্রফিটা আনল রাহুল দ্রাবিড়ের জুনিয়র দল৷ তবে শুধু জুনিয়র এবং সিনিয়ররাই নন, এশিয়া সেরার শিরোপা পেল মহিলা ক্রিকেট দলও৷ অর্থাৎ তিনটি দলই প্রমাণ করে দিয়েছিল পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের মতো ক্রিকেট টিমগুলির থেকে তারাই এগিয়ে৷
২. কুড়ি-বিশে বিশ্বসেরা:
বাইশ গজের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই৷ আর সবাইকে পিছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই স্বাদ এবার পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ শুধু ক্রিস গেইলরাই নন, ক্যারিবিয়ান মহিলারাও একই কীর্তি করে দেখিয়েছিলেন এ বছর৷
৩. সফল উৎক্ষেপণ:
এ বছর চূড়ান্ত সাফল্য পেল ইসরো৷ মহাকাশে সফলভাবে পাড়ি দিয়েছিল ইসরোর ‘কালামযান’, ‘দুষ্টু ছেলে’র মতো স্যাটেলাইটগুলি৷ আগামী বছর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত মোট ৮২টি উপগ্রহ একসঙ্গে উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন৷
৪. ভারতসেরা:
আই লিগটা অধরা থেকে গিয়েছিল৷ কিন্তু সঞ্জয় সেন মোহনবাগানে তাঁর কোচিংয়ের দ্বিতীয় বছরেও সবুজ-মেরুন সমর্থকদের হতাশ করেননি৷ ফেডারেশন কাপ জিতে ফের ভারতসেরা হয়ে শহরে ফিরেছিলেন দেবজিৎ, কাটসুমিরা৷ সবুজ আবিরে ঢেকে গিয়েছিল তিলোত্তমা৷
৫. ইউরো সেরা:
এই বছরের পর পর্তুগালকে আর ছোট দল হিসেবে ভুল করবে না প্রতিপক্ষ৷ ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেনের মতো বিশ্বজয়ীদের মাটি ধরিয়ে প্রথমবার ইউরো সেরার ট্রফি ঘরে তুলেছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর দল৷ ইতিহাসের পাতায় দিনটি চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷
৬. অলিম্পিকে নারীশক্তি:
পুরুষরা নন৷ রিও অলিম্পিকে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করলেন মহিলারা৷ ব্যাডমিন্টন তারকা পি ভি সিন্ধু রুপো এবং কুস্তিগির সাক্ষী মালিক ব্রোঞ্চ জিতে দেশের সম্মানরক্ষা করেন৷ জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকারের অনবদ্য পারফরম্যান্সের জন্য গর্বিত হল গোটা দেশ৷ এই সাফল্যের জন্য তিনজনকেই রাজীব গান্ধী খেলরত্ন সম্মানে ভূষিত করা হয়৷ সেই সঙ্গে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় শুটার জিতু রাইয়ের হাতেও৷ অলিম্পিকে ব্যর্থ হলেও ডাবলসে এবছর অস্ট্রেলিয়া ওপেন গ্র্যান্ড স্লামজয়ী টেনিসতারকা সানিয়া মির্জা এবং শাটলার সাইনা নেহওয়ালের পারফরম্যান্সের জন্য পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হল৷
৭. সোনায় মোড়া:
প্রথমবার অলিম্পিকে সোনা জিতে নজির গড়েছিল নেইমারের ব্রাজিল৷ পাঁচ-পাঁচটি সোনা ঝুলিতে ভরে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন কিংবদন্তি সাঁতারু মাইকেল ফেল্পস৷ আর থান্ডার বোল্টের সেই অবাক করা ভাইরাল ছবির কথা তো সকলেরই মনে আছে৷ প্রত্যাশিতভাবে তিনটি ইভেন্টেই সোনা জিতেছিলেন বিশ্বের দ্রুততম অ্যাথলিট উসেইন বোল্ট৷
৮. ওঁরাও সেরা:
এবার রিওতে প্যারা-অলিম্পিকে দু’টি সোনা ঘরে তুলে দেশবাসীকে গর্বিত করেছিলেন মারিয়াপ্পন এবং দেবেন্দ্র৷ মোট চারটি পদক নিয়ে রিও থেকে দেশে ফিরেছিলেন ভারতীয় অ্যাথলিটরা৷
৯. সাতে-সাত:
লাল-হলুদের স্বপ্নের দিন৷ পতাকা উড়িয়ে, মশাল জ্বালিয়ে প্রিয় নায়কদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা৷ কারণ এবারই টানা সাতবার কলকাতা লিগের খেতাব জিতে ইতিহাস গড়েছিল ময়দানের শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব৷ মেহতাব, ডংদের নিয়ে উৎসবে মেতেছিলেন অগণিত ফুটবলভক্ত৷
১০. ববের নোবেল:
সাহিত্যের জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন কিংবদন্তী গায়ক বব ডিলান৷ এই পুরস্কারের মাধ্যমে মার্কিনি সঙ্গীত ঐতিহ্যের ঘরানায় তাঁর অভিনব কাব্যিক অভিব্যক্তিকেই সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল৷
১১. কবাডিতে বিশ্বসেরা:
টুর্নামেন্টে তাঁরাই ছিলেন ফেভরিট৷ আর প্রত্যাশিতভাবেই ঘরের মাটিতে বিশ্বসেরার খেতাব জিতেছিল ভারতীয় কবাডি দল৷
১২. বেঙ্গালুরুর বাজিমাত:
কোনও ভারতীয় ক্লাব হিসেবে প্রথমবার এএফসি কাপের ফাইনালে পৌঁছে ছিল বেঙ্গালুরু এফসি৷ ইস্টবেঙ্গল এবং ডেম্পো সেমিফাইনাল পর্যন্ত এগোলেও একমাত্র ক্লাব হিসেবে ফাইনালে উঠেছিল দু’বারের আই লিগজয়ী দল৷ ফাইনালে পরাস্ত হলেও তাঁদের এই কীর্তিকে সম্মান জানিয়েছিল গোটা দেশ৷
১৩. জোড়া জয়:
পাকিস্তানকে হারিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা মাথায় তুলেছিলেন শ্রীজেশরা৷ বছর শেষে ফের উজ্জ্বল ভারতীয় হকি৷ এবার জুনিয়ররা৷ ১৫ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় যুব ভারত৷ গোটা টুর্নামেন্টে অপরাজিত ছিল জুনিয়র হকি দল৷
১৪. ব্রাউনওয়াশ:
৪ বছর আগের কুকবাহিনীর কাছে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশের জ্বালা মিটল এ বছর৷ ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডকে ৪-০-য় ধরাশায়ী করে মধুর প্রতিশোধ নিল বিরাট কোহলির টিম ইন্ডিয়া৷ এই সিরিজই ভবিষ্যৎ ভারতকে একঝাঁক তারকার জন্ম দিয়ে গেল৷ আইসিসি টেস্ট ব়্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর দল হিসেবে বছর শেষ করে ভারত৷
১৫. নজিরবিহীন:
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পঞ্চম তথা শেষ টেস্টে ৩০৩ রান করে নয়া নজির গড়লেন টিম ইন্ডিয়ার তরুণ তুর্কি করুণ নায়ার৷ বীরেন্দ্র শেহবাগের পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ৩০০ রানের ক্লাবে প্রবেশ করেন তিনি৷ ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির ঝুলিতেও এল একগুচ্ছ রেকর্ড৷ প্রথম ভারতীয় নেতা হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড রইল তাঁর নামের পাশে৷ বিশ্বক্রিকেট কুর্নিশ জানাল কোহলি ম্যাজিককে৷
১৬. ফের চ্যাম্পিয়ন:
বছর শেষে ফের সাফল্যের মুখ দেখল কলকাতার ময়দান৷ আইএসএল-এর তৃতীয় মরশুমে দ্বিতীয়বার এটিকে-র ঘরে ঢুকল ট্রফি৷ এবার কোচ মোলিনার হাত ধরে৷ হাসি ফুটল ফুটবলপ্রেমী বাঙালির মুখে৷
১৭. আটে আট:
বক্সিং রিং থেকে প্রফেশনাল বক্সিংয়ের সফরটা বিজেন্দারের কাছে বড়ই স্পেশাল৷ কারণ এই মঞ্চেই কোনও লড়াইতেই তাঁকে হারের মুখ দেখতে হয়নি৷ তা সে বিপক্ষে যত বড় এবং অভিজ্ঞ বক্সারই থাকুন না কেন৷ আটটি বাউটের আটটিতেই জয়ী তিনি৷ অর্থাৎ ২০১৬-য় অপরাজিত অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় বক্সার৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.