সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২০১৪ সালে মাঝ আকাশে গায়েব হয়ে যাওয়া মালয়েশীয় এয়ারলাইনসের এম এইচ ৩৭০ বিমান সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এল৷ প্রাকৃতিক, অতি-প্রাকৃতিক কিংবা বিদেশি শক্তির আক্রমণের তত্ত্বকে সমূলে খারিজ করে বছর দুই আগে মাঝ আকাশে এম এইচ ৩৭০ বিমানের রহস্য-অন্তর্ধানের কারণ হিসাবে শেষ পর্যন্ত সামনে এল বিমান-চালকের অন্তর্ঘাতের ‘থিওরি’ই৷
নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনের দাবি, ২০১৪ সালের ৮ মার্চ যে পথে বিমানটি অদৃশ্য হয়, তার এক মাসেরও কম সময় আগে বিমান-চালক ক্যাপ্টেন জাহারি আহমেদ শাহ নিজের বাড়িতে রাখা ‘হোম ফ্লাইট সিমুলেটর’ যন্ত্রে একই উড়ান-পথ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে ছিলেন৷ অর্থাত্ উড়ান-পথটি তাঁর আগে থেকেই জানা ও চেনা ছিল৷ ফলে, এ কথা দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট, যে কোনও অজানা যাত্রাপথে হঠাত্ করে গিয়ে পড়ায় ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যায়নি এম এইচ ৩৭০ ফ্লাইটটি৷ বরং পরিকল্পিতভাবেই ঘটানো হয়েছিল ওই দুর্ঘটনা৷ এই তথ্য সামনে আসাতে তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আত্মঘাতী হওয়ার পাশাপাশি গণহত্যা ঘটানোর জন্যই এই ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ৫২ বছরের জাহারি? কিন্তু কেন? কোন উদ্দেশ্যে? উত্তর সন্ধানে সন্দিহান গোটা বিশ্ব৷
২৩৯ জন আরোহী-সহ এম এইচ ৩৭০-এর মাঝ আকাশে উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় যে তদন্ত মালযেশীয় পুলিশ করেছিল, ৫৮৪ পৃষ্ঠার সেই গোপন রিপোর্টের কিছু অংশ সম্প্রতি ম্যাগাজিনটির হাতে এসেছে৷ তাতেই উল্লেখ রয়েছে ক্যাপ্টেন জাহারির এই ‘কীর্তি’-র৷ এই ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ওই রিপোর্ট থেকে ‘ডিলিট’ করে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু জাহারির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তাঁর ফ্লাইট সিমুলেটরের হার্ড ড্রাইভটি উদ্ধার করে তদন্ত চালানো হয়েছিল৷ সেই সূত্রেই এই তথ্য যথাক্রমে এফবিআই ও ম্যাগাজিনের হাতে এসেছে৷ জাহারির ফ্লাইট সিমুলেটরের হার্ড ড্রাইভে যে অজস্র উড়ান পথের সন্ধান মিলেছে, তারই একটির সঙ্গে এম এইচ ৩৭০-এর নিখোঁজ হওয়ার পথ হুবহু মিলে গিয়েছে৷ তদন্ত-রিপোর্টের একটি স্থানে মালয়েশীয় পুলিশ লিখেছে, “অনেক উড়ান পথের মধ্যে আমরা একটা অন্যতম উড়ান পথ খুঁজে পেয়েছি৷ এটা ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ অংশের দিকে যাচ্ছে৷ ঠিক ওই রুটেই এম এইচ ৩৭০ উধাও হয়ে গিয়েছিল৷” তবে দু’টি রুট এক হলেও প্রথম পথটি শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেই স্থানটি শেষেরটির থেকে অন্তত ৯০০ মাইল দূরে অবস্থান করছে বলে জানা গিয়েছে৷
কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা ঘটালেন জাহিরি? উঠে আসছে একাধিক সূত্র৷ প্রথমটিতে দাবি, জাহিরি মালয়েশীয় সরকারের বিরোধী পক্ষের সমর্থক ছিলেন৷ এমনকী, এম এইচ ৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগে এক সরকার-বিরোধী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের কারাবন্দি হওয়ার খবর পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন জাহিরি৷ প্রতিশোধ নিতেই বিমান ভুল পথে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি৷ অন্য সূত্রের দাবি, নানা ব্যক্তিগত সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন ক্যাপ্টেন জাহিরি৷ তারই স্থায়ী ‘সমাধান’ খুঁজতে ২৩৯ জন আরোহীকে নিয়ে পরিকল্পনামাফিক আত্মঘাতী হন তিনি৷ যদিও এই সব দাবি মানতে নারাজ জাহিরির পরিবার৷ লক্ষণীয়ভাবে দু’বছর ধরে তদন্ত চালিয়েও এই বিমান অন্তর্ধান রহস্যের কোনও তাৎপর্যপূর্ণ কিনারা না মেলায় যখন তদন্ত ‘সাসপেন্ড’ করার সিদ্ধান্ত নিতে উদ্যত হচ্ছিলেন মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং চিনের তদন্তকারী দল, সেদিনই জাহিরি সম্পর্কে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.