সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: নিম্নচাপ চলে গেছে ঝাড়খণ্ডের দিকে৷ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা আপাতত নেই দক্ষিণবঙ্গে৷ কিন্তু পুরোপুরি স্বস্তি মিলল না৷ ডিভিসি থেকে জল ছাড়ায় বন্যার ভ্রুকুটি দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায়৷ হাওড়া, বর্ধমান, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে৷ বিভিন্ন ছোট নদী ছাপিয়ে জল ঢুকেছে গ্রামে৷ নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটেছেন মানুষ৷ তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেও ত্রাণ ও সামগ্রী বন্টনের পাশাপাশি জল কমাতে ডিভিসি-র সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে৷
সোমবার বিকেলে আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “নিম্নচাপ ঝাড়খণ্ডে সরে যাওয়ায় রাজ্যে এখনই ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷” রবিবার রাতভর বৃষ্টির পর এদিন সকাল থেকেই ডিভিসির আধিকারিকদের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক করে রাজ্য প্রশাসন৷ নবান্ন সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনকে মেসেজ পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডিভিসি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার এস কে মাজি৷ ডিভিসি-র বক্তব্য, পাঞ্চেৎ, মাইথন, তিলাইয়া ও ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট থেকে অবিলম্বে আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়তেই হবে৷ রাজ্য বিষয়টি জেনেই দ্রূত কেন্দ্রের জল কমিশনের দ্বারস্থ হয়৷ তার পরই ধাপে ধাপে জল ছাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়৷ সোমবার সন্ধ্যাতেই দুর্গাপুর বাঁধ থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক লক্ষ ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়৷ বিকেলের মধ্যেই মাইথন থেকে দশ হাজার ও পাঞ্চেত থেকে প্রায় ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে৷ ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট থেকে আরও জল ছাড়ার প্রক্রিয়া রয়েছে বলে ডিভিসি সূত্রে খবর৷ ফলে চার জেলার ব্যারেজ লাগোয়া নিচু এলাকার মানুষ আতঙ্কিত৷ সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্কও করা হয়েছে৷ ডিভিসির চিফ ইঞ্জিনিয়ার জানান, দামোদর সংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
এদিকে, রাজ্য ও ডিভিসি কর্তৃপক্ষের মধ্যে জল ছাড়া নিয়ে সংঘাতও শুরু হয়েছে নতুন করে৷ রাজ্যের পক্ষ থেকে ব্যারেজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা আবার তোলা হয়েছে৷ রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হওয়ায় ডিভিসি-র ‘খামখেয়ালিপনা’কে দায়ী করেছেন৷ অন্যদিকে, মাইথন বাঁধের সংস্কারের তত্ত্বকে খারিজ করে ডিভিসি-র মাইথন ডিভিশনের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বিজয় কুমারের বক্তব্য, “বুজে যাওয়া জলাধারকে নতুন করে খোঁড়া হয় না৷ খুঁড়তে যে খরচ হবে, তাতে নতুন ড্যাম তৈরি করা যায়৷” রাজ্যের ছাড়পত্র না মেলায় তিলাইয়া ও মাইথনের মাঝে প্রস্তাবিত নতুন জলাধার তৈরি করা যায়নি বলে তাঁর অভিযোগ৷
সোমবার বিকেলে মাইথনের জলস্তর ছিল ৪৮১ ফুট, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অন্তত ছ’ফুট বেশি৷ পাঞ্চেতের জলস্তর আবার স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ ফুট বেশি ছিল৷ এই অবস্থায় হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷ দুর্গাপুর ব্যারেজে আবার লাল সতর্কতা রয়েছে৷ হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুর ও হুগলির পুরশুড়া, খানাকুল, জাঙ্গিপাড়া, চাপাডাঙায় লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে৷
উদয়নারায়ণপুরে ৯টি, আমতায় একটি বন্যা-শিবির খোলা হয়েছে৷ অন্য জেলাতেও একইভাবে শিবির করা হয়েছে৷ নামানো হয়েছে নৌকা৷ স্কুলগুলিকেও ফাঁকা রাখা হচ্ছে৷ তবে জোর দেওয়া হচ্ছে, জল ছাড়া নিয়ন্ত্রণে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.