পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ সপ্তম প্রতিবেদনে পড়ুন হরিদেবপুরের অজেয় সংহতির পুজো প্রস্তুতি৷
শুভময় মণ্ডল: খাস কলকাতায় এখন ফলাও ধানের চাষ৷ গোটা মাঠ জুড়ে সবুজ ধানের গাছ শরতের বাতাসে দোদুল্যমান৷ হঠাত শহুরে এলাকায় ধান চাষের মানে কী? দক্ষিণ কলকাতার হরিদেবপুরে এখন গেলে এই চিত্রই দেখতে পাবেন৷ শুধু তাই নয়, ধান গোলায় ভরে রাখারও বন্দোবস্ত রয়েছে এখানে৷
কোথাও একটা গোলমাল হচ্ছে কি?
মোটেই না, হরিদেবপুরের অজেয় সংহতিকে এবার মাটি ডাক দিয়েছে৷ তাই তো এমন আয়োজন৷
আবার হেঁয়ালি মনে হচ্ছে! নাহ, এবার সত্যি সত্যি গোলা ভরা ধান ও মাটির হাতছানি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে অজেয় সংহতি৷ এবারের পুজোয় এটাই তাদের থিম, যার নাম ‘মাটি তোদের ডাক দিয়েছে’৷ আর সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই শহরের বুকে ধান ফলিয়ে আসাধ্যসাধন করে ফেলেছেন থিমমেকার অনির্বাণ দাস৷ তাঁর সৃজনে প্রকৃতির আদিম প্রজনন কৃষ্টিকে উপলব্ধি করতে পারবেন পুজোপ্রেমীরা৷ প্রজনন কেন? রূক্ষ মাটিতে চাষ করে ফসল ফলানো মানে তো একপ্রকার তাই৷ এই প্রজননের নেপথ্যে রয়েছে কৃষকের রক্ত জল করা পরিশ্রম৷ কয়েক মাসের হাড় ভাঙা খাঁটনির পর ধান ফলানো কি চাট্টিখানি কথা! ৫৬ তম বর্ষে এবার অজেয় সংহতির পুজোতে সবকিছুই উঠে আসবে গ্রামবাংলার মাটিকেন্দ্রিক বিষয়৷ ধান, ধানের গোলা, চাষি, খড়, মাটির বাসনপত্র, গ্রামের মানুষ সবকিছুই জায়গা করে নিয়েছে এই থিমে৷ আশ্বিনের প্রথম ধান গোলায় ভরে কৃষকদের উৎসবে মেতে ওঠার গল্প রয়েছে এই ভাবনায়৷
গত বছর ছৌ নৃত্যে মেতেছিল অজেয় সংহতি৷ সৃজনে ছিলেন অনির্বাণ দাসই৷ ছোট-বড় সবমিলিয়ে বহু পালক জুড়েছিল পুজো কমিটির মুকুটে৷ এবার সম্পূর্ণ নতুন এক ভাবনা নিয়ে ফের হাজির শিল্পী৷
এবার আসা যাক থিমের কথায়৷ গোটা পুজোপ্রাঙ্গণ জুড়ে ধানগাছ ফলানো হয়েছে৷ তার সঙ্গে রয়েছে গ্রাম বাংলার মাটির ঘরের ছাউনি দেওয়ায় ব্যবহৃত খাপড়া৷ প্রায় ২৫,০০০ মাটির খাপড়া ব্যবহার করা হয়েছে৷ ধানের গোলার আদলে তৈরি করা হয়েছে মণ্ডপ৷ খড়ের উপর প্রায় ৪,০০০ মাটির হাঁড়ি এবং ২০,০০০ মাটির প্রদীপ দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ৷ হাঁড়িগুলিকে ধান দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হবে৷ মাটির প্রদীপ এখানে দেবী লক্ষ্মীর প্রতীক৷ প্রথম ধান চাষিদের কাছে দেবী লক্ষ্মীতূল্য৷ সবমিলিয়ে গ্রাম্য পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে গোটা পুজোপ্রাঙ্গণে৷ প্রতিমা এখানে রূপ পাচ্ছে শিল্পীর ভাবনাতেই৷ থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা৷ প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব৷ প্রতিমার দুই দিকে যক্ষ ও যক্ষিণীর মূর্তি থাকবে৷ যক্ষ এবং যক্ষিণীও কিন্তু প্রজননের প্রতীক৷
মাটির এই অমোঘ টানে শহরের পুজোপ্রেমীরা কতটা ছুটে আসবেন তা এখন সময়ই বলবে৷
ভিডিওয় দেখে নিন প্রস্তুতি পর্বের ঝলক-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.