রোহন দে: মানুষ তাঁর নিজ নিজ আকাঙ্ক্ষার দাস। তা সে নানারকম আকাঙ্ক্ষা হতে পারে। ধনসম্পত্তি লাভের আকাঙ্ক্ষা বা ঈশ্বরলাভের। এই মানুষের জীবন অতিবাহিত হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে তাঁর কর্ম ও ভাগ্য। অভীষ্ট লাভ করতে চায় মানসিকের দ্বারা। তবে চাহিদা তো সীমাহীন। আরও চাই, আরও চাই মনোভাব। একজন্মে যেন সন্তুষ্ট হওয়া যায় না। এই সীমাহীন আকাঙ্ক্ষার তাগিদে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে কর্মব্যস্ত, আরও জটিল। অশান্তও হয়। আসলে তাঁর যাবতীয় কর্ম ও কর্মফলের নিয়ন্ত্রক তাঁর মানত। আর সেই মানসিকের লীলাখেলায় আবর্তিত হয় তাঁর জীবন। অভীষ্টলাভের তাড়নায় এই মানসিকের
গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে মানুষ। তখন সেই মানসিকের চক্রব্যুহ থেকে মুক্তির পথ খুঁজে ফেরে। যখন মুক্তির পথ দূর অস্ত তখনই শরণাপন্ন হয় মা শক্তির। পুজোর শহরে এবার সেই মানসিকের গোলকধাঁধা থেকে মুক্তির পথই বাতলে দেবে হরিদেবপুর বিবেকানন্দ পার্ক এ্যাথলেটিক ক্লাব। ৪৭ তম বর্ষে তাদের নিবেদন ‘মানসিক’। ভাগ্যের চক্রব্যুহ থেকে মুক্তি লাভে মায়ের কাছে মানসিকের আরাধনায় মেতেছে হরিদেবপুরের এই নামী পুজো।
এবছর থিমের দায়িত্বে শিল্পী বিভাস মুখোপাধ্যায়। শিল্পীর কথায়, কোনও কাজের সাফল্য কামনা করে বা মনোস্কামনা পূর্ণ করার জন্য আরাধ্য দেব-দেবীর কাছে মানুষ মানত করেন। তা কখনও গাছে ঢিল বেঁধে হোক কিংবা হাতে সুতোর ধাগা বেঁধে। মনের ইচ্ছা পূর্ণ হলে দেবতার প্রতি ঋণ শোধের অঙ্গীকারও করে মানুষ। সেই মানসিকের কাহিনিই গোটা মণ্ডপে উপস্থাপিত করা হবে। মণ্ডপে খোলা জানলার কিছু শিল্পকর্ম থাকছে যা থেকে মনের পুরো ভাবকে মায়ের কাছে জানানো হচ্ছে। একমাত্র দেবী দুর্গাই তা থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। এছাড়াও ধাগার পাকে সাজছে মণ্ডপ। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী সনাতন পাল। আবহ হিসেবে স্ত্রোত্রম থাকছে যা তৈরি করছেন পণ্ডিত মল্লার ঘোষ।
উদ্যোক্তাদের কথায়, মণ্ডপে ব্যবহৃত সুতোগুলি এলাহাবাদের লালগোপালগঞ্জ গ্রাম থেকে আনানো হয়েছে। যা কিনা মুসলমান ভাই-বোনেদের হাতে তৈরি হচ্ছে হিন্দুদের জন্য। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বাতাবরণে দাঁড়িয়ে একটুকরো সম্প্রীতির বার্তা তাঁরা দর্শনার্থীদের কাছে তুলে ধরতে চান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.