পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন সন্তোষপুর লেকপল্লির পুজো প্রস্তুতি৷
রোহন দে: শহরের দুর্গাপুজোয় প্রতিবছরই নানান থিমের বাহার। থিমের জোয়ারে গা ভাসিয়েছে ছোট-বড় সব পুজোই। ফি বছর থিমের যুদ্ধে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই। রকমারি মণ্ডপসজ্জা বা থিমের কারিকুরি থাকেই। কিন্তু মশলা দিয়ে মণ্ডপ, তাও আবার দুর্গাপুজোয়। তাও এমন মশলা যা শুভ কাজেই অগ্রগণ্য। হলুদ, আর তাই দিয়ে আস্ত পুজোমণ্ডপ! শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। দক্ষিণ কলকাতার নামী বারোয়ারি সন্তোষপুর লেকপল্লির পুজো এবার হলুদে রাঙা। এবারের থিম ‘মায়ের হেঁশেল’। থিম শিল্পী মলয়-শুভময়ের সঙ্গে এই হেঁশেলের দায়িত্ব নিয়েছেন রূপান্তরকামীরাও। সেটাও পুজোর শহরে প্রথমবার। রূপান্তরকামী শ্রী ঘটক এবং তাঁর ত্রয়ী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমার শাড়ির ডিজাইন-সবেরই দায়িত্বে। শ্রী ঘটকই হলেন এবছরের সন্তোষপুর লেকপল্লির পুজোর মুখ।
মণ্ডপসজ্জা থেকে প্রতিমা সবেতেই থাকছে হলুদের ছোঁয়া। গুজরাটের এক মশলা প্রস্তুতকারক সংস্থার উদ্যোগে প্রায় ৪ টন হলুদ দিয়ে সাজানো হবে মণ্ডপ। সেখানে থাকছে গোটা ও গুঁড়ো হলুদ দুই-ই। হলুদের উপকারিতাই তুলে ধরা হবে মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের সামনে। হলুদের ছোঁয়া থাকলেও প্রতিমা হবে সাবেকি। মায়ের অন্নপূর্ণা রূপ প্রকাশিত হবে। দুর্গাপুজো মানে অশুভর বিরুদ্ধে শুভ শক্তির জয়। দুর্গার প্রতীক এখানে হলুদ। আর অসুর রূপে থাকছে পোকামাকড়।
[নতুন ‘আমি’কে খুঁজে পেতে পুজোয় চেতলা অগ্রণীতে এবার বিসর্জনের সুর]
কেটে গিয়েছে পরিচয়হীন দীর্ঘ পথ। একটা সময় ভিড়ে ঠাসা প্যান্ডেলে রূপান্তরকামীরা প্রবেশ করলে তাদের দেখে বদলে যেত সকল দর্শনার্থীদের চোখের ভাষা। উপহার হিসেবে জুটত ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ থেকে টিকা-টিপ্পনি। বৃহন্নলা ধ্রুপদ রাজের দরবারে তারা স্থান পেলেও সমাজ বারবার ছুঁড়ে দিয়েছে কটাক্ষ। বিভিন্ন উৎসব হোক কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান সবেতেই তাঁরা ছিল ব্রাত্য। তবে সময় বদলেছে। পুজোর আকাশে এবার রামধনুর ছোঁয়া। একুশ শতকের ভারতে সদ্য স্বীকৃতি পেয়েছে সমকামিতা। তারই রেশ ধরে এবার রূপান্তরকামীরাও থিমশিল্পীদের সঙ্গে হাতে হাত রেখে সাজিয়ে তুলছে সন্তোষপুর লেকপল্লির পুজো।
পুজো উদ্যোক্তাদের কথায়, বর্তমান পৃথিবী যেভাবে এগিয়ে চলেছে সেখানে কুসংস্কার আবার কিছুটা পিছনে ঠেলে দেয় সমাজকে। সেই কুসংস্কারকে জয় করে যেভাবে তাদের পুজো কমিটি এগিয়ে চলেছে এটাকে তাঁরা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চান। রূপান্তরকামীদের পাশে নিয়েই তারা এগিয়ে যেতে চান। রূপান্তরকামীদের সমাজে সমান অধিকার পাওয়ার এই লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে তাঁদেরকেও পুজোর কাজে যুক্ত করে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে সন্তোষপুর লেকপল্লি পুজো কমিটি। সমাজের কাছে প্রায় অচ্ছুৎ রূপান্তরকামীদের পুজোয় শামিল করে এক অন্য সামাজিক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা পুজো কমিটির। সন্তোষপুর লেকপল্লির মাধ্যমে কলকাতার পুজোয় কর্পোরেট জগতের প্রবেশ আরও বাড়ল। সম্পূর্ণ কর্পোরেট পরিচালিত পুজোই আগামিদিনের ভবিষ্যৎ বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
[পুজোয় স্মৃতির রঙ্গমঞ্চে সেজে উঠছে গৌরীবেড়িয়া সর্বজনীন]
রূপান্তরকামীদের কথায়, কলকাতার মানুষ এই প্রথম দেখতে পাবে যে রূপান্তরকামীরা কিভাবে আস্তে আস্তে একটি বড় প্রতিমা থেকে তার সমস্ত বৈভবকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করে তোলে। রেড রোডে আয়োজিত পুজোর কার্নিভালেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিচালনা করবেন তাঁরা। পুজোর স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও দায়িত্ব থাকবে তাঁদের কাঁধে। সুতরাং স্বাধীনতার পর যে স্বীকৃতিও এল এবার। মূল স্রোতের সঙ্গে হাতে হাত রেখে কাজ করার আনন্দ। তাঁদের কাজ কেমন হয়েছে তা ভাল-মন্দ বিচার করবেন দর্শনার্থীরা। এবারে পুজোয় শুধুই সহযোগিতা করলেও আগামীদিনে হয়তো তাঁরাই হয়ে উঠবেন কলকাতার আরও বহু ক্লাবের পুজোর মুখ। অপমান লাঞ্ছনা থেকে এবার হয়তো তাঁরাও সম্মান পাবেন। মায়ের জন্য কাজ করেই হয়তো সমাজে আলোর মুখ দেখবেন তাঁরা।
[পুজোর টিজার নিয়ে বিতর্কে সন্তোষপুর লেকপল্লি, মণ্ডপ জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.