পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন চোরবাগান সর্বজনীনের পুজো প্রস্তুতি৷
বিশাখা পাল: ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে.…’। সৃষ্টি সবসময় সুখের, উল্লাসের। তবে চিরন্তন নয় কোনও কিছুই। সৃষ্টিও নয়। একদিন তাকেও বিলীন হতে হয়। আদি অনন্তকাল জাগতিক কোনও কিছুই জায়গা করে নিতে পারে না। একদিন না একদিন সবকিছুই মিশে যায় মাটিতে। বিলীনের ধারক আমাদের এই ধরিত্রীই। আর এই চিরাচরিত সত্যটিই মণ্ডপে তুলে ধরেছে চোরবাগান সার্বজনীন।
থিমের পোশাকি নাম ‘বিলীন’। শিল্পীর কল্পনায় এবার ‘বিলীন’ প্রকট হয়েছে সৃষ্টির রূপে। কথায় কথায় শিল্পী দেবতোষ কর জানালেন তার ভাবনার কথা। বললেন, নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার মণ্ডপের বিশেষত্ব। সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়ার পর সবকিছুর স্থান হয় মাটিতে। ধরিত্রী তাকে ধারণ করে। তাই মণ্ডপটা তিনি তৈরি করেছেন মাটি দিয়েই। তবে শুধু মাটি নয়, মণ্ডপ তৈরি করার জন্য খড় ও বাঁশেরও সাহায্য নিয়েছেন তিনি। শুধু এই দিয়েই তৈরি হয়েছে গোটা মণ্ডপ? শিল্পী জানালেন, তিনি চেয়েছিলেন এমন কিছু দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি হোক যা সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। তাই নিজের ‘বিলীন’ সৃষ্টিতে তিনি এই সব উপাদানগুলি ব্যবহার করেছেন।
[পুজোয় ‘অন্তহীন প্রাণের’ কাহিনি বলবে উল্টোডাঙা পল্লিশ্রী]
দেবতোষ কর মনে করেন, মণ্ডপ মানে জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কে আসার একটি মাধ্যম। ছোট থেকেই তিনি মাটির কাছের মানুষ। মাটিতে তিনি উইয়ের ঢিপি দেখেছেন, পিঁপড়ের খেলা দেখেছেন। সেইগুলিকেই তিনি মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে দর্শকের কাছে তাঁর অনুরোধ, চোরবাগানে এসে যেন মনের সবকটি জানলা খোলা রাখেন তাঁরা। অচলায়তনের মতো জানলা বন্ধ করে তাঁরা যেন নিজের কল্পনাকে বাধা না দেন। কারণ তাঁর শিল্প শুধু পিঁপড়ের ঢিপি দেখায় না। দর্শক তাঁর শিল্পকে নারী পুরুষের প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখতে পারে, আবার অ্যাবস্ট্র্যাক্ট হিসেবেও বিবেচ্য হতে পারে চোরবাগানের মণ্ডপ।
[পুজোর শহরে মুক্তির স্বাদ দেবে ওয়েলিংটন নাগরিক কল্যাণ সমিতি]
নিজের এই ‘বিলীন’ সৃষ্টিকে পরিস্ফুট করতে প্রবেশ থেকে বাহির পর্যন্ত বাজবে ললিত রাগ। সৃষ্টি ও বিলীনকে একাত্ম করবে এর মূর্ছনা। এই রাগের সময়কাল রাতের শেষ ও দিনের শুরু। ‘বিলীন’-এর ধারণাকে তুলে ধরতে এর চেয়ে ভাল আলাপ আর কোনও রাগ দিতে পারত না। আর এই সবের মাঝেই সপরিবারে বিরাজমান মা দুর্গা। তিনিও সম্পূর্ণ মৃত্তিকাতেই নির্মিত। শিল্পীর এই সৃষ্টি-বিলীনের খেলা নিয়ে আশাবাদী উদ্যোক্তারাও। কল্পনার নতুন দিশারী এবছর চোরবাগান সার্বজনীন। শিল্পের মাদকতায় যারা বিভোর থাকে, তাদের অবশ্যই টানবে এই মণ্ডপ। গত বছর নগর সার্কাসের তাঁবু ফেলেছিল চোরবাগান। নেপথ্য কারিগর ছিলেন সেই দেবতোষই। এবারও তাঁর শৈল্পিক ছোঁয়ায় পুজোর শহরে চমক লাগাতে তৈরি এই চোরবাগান সর্বজনীন।
[জীবনে ওঠানামার ‘আবর্ত’-এর কাহিনি এবার হিন্দুস্থান পার্কের পুজোয়]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.