গৌতম ব্রহ্ম: ছোটভাই ঈশানচন্দ্রের সহযোগিতায় বীজতলা তৈরি করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর৷ জল-সার দিয়ে তাকেই অরণ্যে পরিণত করেছেন উত্তরসূরিরা৷
ঈশানচন্দ্রের ছেলে পরেশনাথ, পৌত্র প্রশান্ত, প্রপৌত্র প্রতীপ৷ চার প্রজন্ম৷ দেড়শো বছর ধরে হোমিওপ্যাথি নিয়ে সাধনা করে চলেছে একটি পরিবার৷ এমন উদাহরণ ভারত কেন, গোটা বিশ্বে নেই৷
সেই গৌরবময় পারিবারিক ঐতিহ্যকে সম্মান জানাতে কলকাতায় আসছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ আজ সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চে দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ‘প্রশান্ত ব্যানার্জি হোমিওপ্যাথি রিসার্চ ফাউন্ডেশন’৷ সেখানেই প্রধান অতিথির আসনে উপস্থিত থাকবেন ভারতের ‘ফার্স্ট সিটিজেন’৷ এমনটাই জানিয়েছে ফাউন্ডেশন৷
শুরুটা বড় অদ্ভুত৷ মাইগ্রেনের ব্যথায় দারুণ কষ্ট পাচ্ছিলেন বিদ্যাসাগর মহাশয়৷ ভাইসরয় চিকিৎসকও সারাতে পারেননি যন্ত্রণা৷ সেই সময় বাবু রাজেন দত্ত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় সুস্থ করে তোলেন বিদ্যাসাগরকে৷ সেই থেকেই শুরু বিদ্যাসাগরের হোমিওপ্যাথি-প্রেম৷ নিজে তো শিখলেনই, ছোটভাই ইশানচন্দ্রকেও শিখতে উদ্বুদ্ধ করলেন৷
বিহারের কারমাটাঁড়ে থাকার সময় বিদ্যাসাগর প্রায় ১৫ বছর গরিব মানুষের সেবায় হোমিওপ্যাথিকে কাজে লাগিয়েছেন৷ কত মানুষ যে চিকিৎসক বিদ্যাসাগরের ওষুধে ভাল হয়েছেন তার কোনও ইয়ত্তা নেই৷ ঈশানচন্দ্রের ছেলে পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেন হোমিওপ্যাথিকে৷ শুরু হয় ‘পি ব্যানার্জি’ ঘরানা৷ ঝাড়খণ্ডের মিহিজামে শুরু হয় প্র্যাকটিস৷ বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ, সর্বপল্লি রাধকৃষ্ণ, জওহরলাল নেহরু, কে ‘পি ব্যানার্জি’-র ওষুধ কে খাননি?
পরেশনাথবাবুর পর ছেলে ডা. প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় হাল ধরেন৷ মিহিজামে অবশ্য তিনি বেশিদিন থাকেননি৷ ১৯৬০ সালে কলকাতায় চলে আসেন৷ বাড়ি কেনেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে৷ চেম্বার খোলেন জগুবাবুর বাজারের কাছে স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পাশে৷ কলকাতায়ও শুরু হয় ‘ব্যানার্জি পরিবারের’ হোমিওপ্যাথি৷ আজও চলছে সেই ঘরানা৷ প্রতিদিন প্রায় বারোশো রোগী দেখে ‘টিম প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়’৷ সুদীপ্ত মল্লিক, সোমা সিংহরায়, রাজু শর্মা, অভিজিৎ ভৌমিক-সহ অনেক নামী চিকিৎসক রয়েছেন ওই টিমে৷
বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করেই যুগান্তকারী ‘ব্যানার্জি প্রেটোকল’ তৈরি করেছেন প্রশান্তবাবু৷ লিখে ফেলেছেন আস্ত একটা বই৷ যা বিপ্লব এনে দিয়েছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়৷ ২০১৩ সালে বইটি প্রকাশ করেন গুলাম নবি আজাদ৷ এখন দু’শোটি দেশে জনপ্রিয় এই ‘ব্যানার্জি প্রোটোকল’৷ প্রশান্তবাবু বিশ্বাস করেন, হ্যানিম্যানের ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিতে আটকে থাকলে হবে না৷ রোগ নির্ণয়ে আধুনিক প্যাথলজিক্যাল সায়েন্সের সাহায্য নিতে হবে৷ তবেই মিলবে সর্বোচ্চ সুফল৷
এর জন্য ‘প্রাচীনপন্থী’ চিকিৎসকদের কম গঞ্জনা সহ্য করতে হয়নি প্রশান্তবাবুকে৷ অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে৷ ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ তলব করে প্রশান্তবাবুকে৷ হোমিওপ্যাথিতে ক্যানসারমুক্তি নিয়ে মত চায়৷ ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হোমিওপ্যাথি রিসার্চ’-এর ডিরেক্টর জেনারেলের ডাকে দিল্লির বিজ্ঞানভবনে গিয়ে ক্যানসার নিয়ে ‘পেপার’ পড়েন৷ আর এবার তো স্বয়ং রাষ্ট্রপতি আসছেন প্রশান্তবাবুর অনুষ্ঠানে৷ উপস্থিত থাকছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ও রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. শশী পাঁজা৷ আসছেন দেশ-বিদেশের কয়েকশো হোমিওপ্যাথিপ্রেমীও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.