মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য: ফ্রান্স-জার্মানি ম্যাচের হ্যাংওভার কাটতে না কাটতেই চলে এল ফাইনাল৷ এই ম্যাচের আগে আমার মন আর মস্তিষ্ক একদম দুই মেরুতে বসে আছে৷ মন বলছে বড় আসরে খেল দেখাতে পারেন রোনাল্ডো৷ কিন্তু ফুটবল মস্তিষ্ক বলছে এই ম্যাচে সামান্য হলেও অ্যাডভান্টেজে আছে ফ্রান্স৷
ঘরের মাঠে খেলা৷ এই সুবিধাটা ফুটবলে মারাত্মক৷ গ্রিজম্যান, পোগবাদের জন্য গোটা গ্যালারি যে আওয়াজ করবে, তাতে পা কেঁপে যেতেই পারে অনেকের৷ শব্দব্রহ্মের এই সুবিধাটা এর আগেও নিয়েছে ফ্রান্স৷ ১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জিদান, দেশঁরা৷ সেবারও খেলা হয়েছিল ফ্রান্সে৷ সেই দলের অধিনায়ক দেশঁ এখন ফ্রান্সের কোচ৷ নিজের জমানার অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার নিজের দলটার মাঝমাঠও তৈরি করেছেন অনেক যত্ন নিয়ে৷ ফ্রান্সের আরও একটা অ্যাডভান্টেজ হল গোল করার জন্য প্রচুর ফুটবলার৷ গ্রিজম্যান তো আছেনই৷ পায়েত, জিরু, পোগবারাও গোল করছে৷ উল্টোদিকে পর্তুগালের গোলের জন্য ভরসা শুধুমাত্র রোনাল্ডো আর নানি৷ ফুটবল মস্তিস্ক বলছে এই কারণগুলোর জন্যই ঘরের মাঠে আরও একটা বড় ফাইনালে সামান্য হলেও এগিয়ে থেকেই নামবে ফ্রান্স৷
উল্টোদিকে পর্তুগাল এগিয়ে থাকবে তাদের ডিফেন্সের জন্য৷ আসলে গোটা টুর্নামেন্টে সেই রোনাল্ডোকে কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি৷ কেন জানি না মনে হচ্ছে, সিআর সেভেন হয় পুরো ফিট নন৷ আর নয়তো ক্লান্ত৷ যাই হোক এই বিষয়ে পরে আসছি৷ ফ্রান্স দলটার আক্রমণ যেমন নজর কাড়ছে, তেমনই ওদের ডিফেন্সের দুর্বলতাও চোখে খোঁচা দিচ্ছে৷ তবে সবকিছুর উপরেও ব্যক্তিগত ক্যারিশমা বলে একটা জিনিস থাকে৷ গ্রিজম্যান এই মুহূর্তে ইউরোপের সেরা ৩-৪ জন ফুটবলারের মধ্যে অন্যতম৷ কিন্তু এখনও মেসি, রোনাল্ডোদের পাশে বসার মতো জায়গায় আসতে ওঁর সময় লাগবে৷
এদিকে, ফাইনালের আগে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রোনাল্ডো৷ প্যারিস থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মার্কোসিসে ফরাসি রাগবি ফেডারেশনের হেডকোয়ার্টারে যাঁর হুঙ্কার শোনা গেল, ‘ইউরো-ফাইনালে ফ্রান্স ফেভারিট৷ কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হবে পর্তুগাল৷’ ইউরোর ৫৬ বছরের ইতিহাসে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি পর্তুগাল৷ ২০০৪-এ ফাইনালে পৌঁছে গ্রিসের কাছে হারায়, কাপ আর ঠোঁটের মাঝে ফাঁক থেকেই গিয়েছে৷ সেবার ফিগোদের পাশে খেলেছিলেন রোনাল্ডো৷ ফাইনালে হারের পর মাঠে ডুকরে কেঁদে উঠেছিলেন৷ ১২ বছর পর আবার একই মঞ্চে তিনি৷ এবার আর ট্রফি ফসকাতে চান না তিনি৷ “ক্লাবের হয়ে কোনও সাফল্য আর বাকি নেই৷ ব্যক্তিগত রেকর্ডও অনেক হয়েছে৷ এবার জাতীয় দলের হয়ে টুর্নামেন্ট জিততে চাই৷ বলতে পারেন, তাহলে একটা বৃত্ত পূরণ হবে৷” বলছিলেন সিআর সেভেন৷
ইউরোর শুরুটা ভাল হয়নি, মেনে নিচ্ছেন রোনাল্ডো নিজেও৷ কী করে দলের আত্মবিশ্বাস এত বেড়ে গেল? রোনাল্ডো বললেন, ওয়েলস ম্যাচের কথা৷ “গ্রুপে আমরা ভাল খেলতে পারিনি৷ কিন্তু নক আউট রাউন্ডে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ছিল না৷ সবাই ভাল পারফরম্যান্স করার জন্য তেতে ছিল৷ এবার ইউরোতে ওয়েলসকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে৷ ওরা ভাল খেলছে৷ ওদেরকেই হারানোর পর দলের চেহারা বদলে গিয়েছে৷ তবে আমাদের সেরাটা এখনও বাকি আছে৷” বললেন পর্তুগিজ স্ট্রাইকার৷
চলতি টুর্নামেন্টে বেশ কয়েকটি রেকর্ড করে ফেলেছেন রোনাল্ডো৷ টানা চার ইউরোয় গোল রয়েছে তাঁর৷ পর্তুগিজ তারকার এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই৷ বললেন, “রেকর্ড নিয়ে ভাবতে চাই না এখন৷ ভাল খেললে এসব এমনিতেই হয়৷ আপাতত ইউরো৷ পর্তুগাল৷ এর বাইরে কিছু না৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.