জ্যোতির্ময় কর্মকার, নয়াদিল্লি: তিন তালাক প্রথা এবং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে কোনও পরিস্থিতিতেই রক্ষণাত্মক অবস্থান নেবে না সরকার৷ বরং বিভিন্ন মহলের এককাট্টা আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে এবার পাল্টা যুক্তি নিয়ে লড়াইয়ে প্রস্তুত কেন্দ্রও৷ অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড তিন তালাক প্রথা নিয়ে জনমত সমীক্ষার প্রশ্নপত্রে আপত্তি তুলে তা বয়কটের ডাক দেওয়ার পর, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দু’দিন আগেই আসরে নেমেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু৷
সব পক্ষকেই অনড় অবস্থান থেকে সরে এসে ইতিবাচক বিতর্কে অংশ নেওয়ার আবেদনের মধ্যেই মূলত নিজের বক্তব্য সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন তিনি৷ কিন্তু রবিবার কোনও রাখঢাক না রেখেই সরকারের অবস্থান চাঁচাছোলা ভাষায় স্পষ্ট করে দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ সাফ জানিয়ে দিলেন, “পার্সোনাল ল বা পারিবারিক আইনকেও সংবিধান মেনেই চলতে হবে৷ প্রত্যেকের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের অধিকার এবং লিঙ্গসাম্যকে মান্যতা দিয়েই কাজ করতে হবে৷ মৌলিক অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েই যে পারিবারিক আইন চলবে, এ বিষয়ে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের প্রায় সব সরকারই মুখ লুকিয়ে চলেছে৷ কিন্তু এখনকার সরকার এই ইস্যুর ক্ষেত্রে যে অবস্থান নিয়েছে তা অত্যন্ত সুদৃঢ়৷”
এদিন ‘তিন তালাক এবং সরকারি হলফনামা’ শীর্ষক এক ফেসবুক পোস্টে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী লেখেন, “সাম্য এবং মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকারের মাপকাঠি দিয়েই তিন তালাক প্রথাকে বিচার করতে হবে৷ এবং এটা অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না যে অন্যান্য পারিবারিক আইনও একই মাপকাঠিতে বিচার্য৷ পারিবারিক আইন সংবিধান মেনেই হতে হবে৷”
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, বহুবিবাহ এবং তিন তালাকের প্রথাকে কখনওই ধর্মের অবশ্য প্রয়োজনীয় বা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে মানা ঠিক নয়৷ এই প্রথা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত৷ এর পরই শীর্ষ আদালতের নির্দেশে তিন তালাক প্রথা নিয়ে জনমত সমীক্ষার জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করে ল কমিশন৷ এই প্রশ্নপত্র প্রকাশিত হতেই রে রে করে উঠেছে একাধিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল৷ অনেকেরই অভিযোগ, সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে ভারতের জাতি-ধর্মের রীতিনীতি, প্রথাকে মুছে দিতে চাইছে৷ সরকারের এহেন পদক্ষেপকে ‘স্বৈরাচারী’ বলেও তোপ দাগেন তাঁরা৷ কিন্তু এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলি সাফ জানিয়ে দেন, সামাজিক অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও রীতিনীতির মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে৷ প্রতিটি জনজাতিরই আলাদা আলাদা পারিবারিক আইন থাকবে ধরে নিয়েই যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে তা হল, এই পারিবারিক আইন কি সংবিধান মেনে হবে না?”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.