তন্ময় মুখোপাধ্যায়: সকালে আপনার বাজারের শখ। আদুরে শীত গায়ে মেখে ব্যাগটি নিয়ে গুটি গুটি পায়ে পৌঁছে যান বাইপাস লাগোয়া পাটুলিতে। আর পাঁচটা বাজারের মতো এটি নয়। আপনাকে এখানে জলের উপর উঠতে হবে। সাঁকোয় যখন উঠবেন তখন দেখবেন নৌকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন দোকানি। দরদামে পছন্দ না হলে আর এক নৌকায় যেতে পারেন। নতুন বছরের শুরুতে কলকাতার বুকে উঠে আসছে এক টুকরো পাটায়া। ইচ্ছে হলে ভেনিসও বলতে পারেন। যেখানে জলের উপর চলবে বিকিকিনির আসর।
[দুই ক্যানসার আক্রান্তর পাশে দাঁড়াতে এক অভিনব উদ্যোগ নাগরিক সমাজের]
প্রায় ৩০০ মিটার জলাশয় জুড়ে চলছে এমন কর্মকাণ্ড। বাইপাস চার লেন করার সময় রাস্তার দু’ধারে থাকা অস্থায়ী পাটুলি বাজার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই অংশের পাশেই তৈরি হয়েছে ভাসমান বাজার। রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য ২২৮টি দোকান অন্তরায় ছিল। সেই ২২৮ জন ব্যবসায়ীকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে এই ভাসমান বাজারে। যার দীর্ঘ ৩০০ মিটার, চওড়ায় ৩৫ মিটার। কেমন চলছে কর্মযজ্ঞ? স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, কাজ প্রায় শেষের দিকে। দুই ঝিলের মাঝের বাঁধ সরিয়ে দিয়ে চারপাশে কংক্রিটের আস্তরণে মুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ বাজারে ঢোকার জন্য মাছরাঙা রেস্টুরেন্টের পাশের গেট দিয়ে আসতে হবে। তবে অন্যান্য দিক দিয়েও এই ভাসমান বাজারে ঢোকা যাবে৷ ডোবার পূব দিকে রয়েছে ই এম বাইপাস। উত্তর পশ্চিম দিকে পাটুলি থানা। কাজ দ্রুত গতিতে চলছিল। তবে বর্ষা শেষ হওয়ার পর দফায় দফায় বর্ষণে কাজে বেশ খানিকটা ব্যাঘাত ঘটে। না হলে নভেম্বরেই কাজ গুটিয়ে ফেলা যেত। ভাসমান বাজারে বিদ্যুতায়নের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নৌকা এবং রাস্তাতেও আলো বসানোর কাজ চলছে জোর কদমে।
পাটুলির এই বাজার হুগলির বলাগড়ের নৌকাশিল্পের ছোঁয়া পাচ্ছে। বাজারে ৭০টি সরু রঙিন নৌকা তৈরি হয়েছে। কাজ করছেন বলাগড়ের শিল্পীরা। নৌকাগুলির বৈশিষ্ট্য প্রতিটি আলাদা রঙের৷ এর মধ্যে ৪০টি বড় নৌকা এবং ৩০টি ছোট৷ বিশালাকার ঝিলের জল নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে যন্ত্রও এসে গিয়েছে৷ একেক এক নৌকায় এক এক রকম জিনিস মিলবে। কোন নৌকায় কী কী সামগ্রী বিক্রি হবে তার তালিকাও সেরে ফেলা হয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই দেশের প্রথম ভাসমান বাজারের সূচনা হতে চলেছে। কেনাকেটার পাশাপাশি ক্রেতাদের মনোরঞ্জনের জন্য রয়েছে হরেক ব্যবস্থা। বাজারেই থাকবে ক্যাফেটেরিয়া, ঝরনা এবং বসার সুদৃশ্য চেয়ার। ক্রেতারা যার উপর চলাফেরা করবেন সেই সাঁকো নেহাত দুর্বল কিছু নয়। শাল কাঠের বিম বসানো হয়েছে। পাশাপাশি সাঁকোর দু’দিক ঘিরে দেওয়া হচ্ছে।
জল বদ্ধ অবস্থায় থাকবে। তাহলে দুর্গন্ধ কীভাবে সামলানো যাবে। প্রকল্পে কর্মরত ইঞ্জিনিয়ারা জানান, ডোবায় নিকাশির জল ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। জলে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং শোধন করতে থাকবে বিশেষ মেশিন। বাজার যখন নোংরাও বাড়বে। সেই আবর্জনা সামলানোর জন্য বাইরে থাকবে দু’টি বিশালাকার ভ্যাট। কোনওভাবেই জল নোংরা করতে দেওয়া হবে না। এমনই পরিকল্পনা পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের। বিস্তৃত এই জলাশয়ে জল ঢোকা-বেরনো আটকাতে লকগেট বসানো হয়েছে। থাকছে পাম্পিংয়ের ব্যবস্থা। বর্ষার সময় জলস্তর বেড়ে গেলে বাড়তি জল পাম্প করে বাইরে ফেলা হবে। উলটোদিকে শীতের সময় জলস্তর নামলে বাইরে থেকে জল দেওয়ার বন্দোবস্তও থাকছে। জলাশয়ে একটি ঝরনা থাকছে। এর ফলে জলে অক্সিজেনের জোগান থাকবে এবং জল পরিষ্কার থাকবে। জলাশয়ে যাতে মশার লার্ভা না জন্মাতে পারে তাই তেলাপিয়া, কার্পের মতো মাছ ছাড়া হবে। পাশাপাশি জলের জীব-বৈচিত্র্য ঠিকঠাক রাখতে হাইব্রিড মাগুর মাছ ছাড়া হবে। ভাসমান বাজারের পাশের রাস্তাটি তৈরির কাজ শুরু করেছে কেএমডিএ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝির মধ্যে সেই রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি থাকছে একটি ফুটপাথ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.