টিটুন মল্লিক,বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুরী হাতের কাজে এবার দেবী দুর্গার মণ্ডপ সেজে উঠবে হাওড়ায়। তৈরি হচ্ছে দশাবতার তাস। হাওড়ার শিবপুরের কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায় লেনের ষষ্ঠীতলা বারোয়ারি দুর্গাপূজা কমিটি এবার নিজেদের মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ হিসেবে বেছে নিয়েছেন মল্ল রাজাদের সময়কার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে।প্রাচীন মল্লরাজ দরবারের ঐতিহ্য দশাতারের ছবি দেওয়া তাস দিয়ে সাজানো মণ্ডপই দর্শনার্থীদের নজর কাড়বে বলে দাবি করছেন উদ্যোক্তাদের একাংশ।
ষষ্ঠীতলা বারোয়ারি দুর্গাপূজা কমিটি সূত্রে খবর, ছোট-বড় মোট ৯৭টি তাস দিয়ে সাজানো হবে এই মণ্ডপ। মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুরের মনসাতলার ফৌজদার সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রায় তিন মাসের নিরলস পরিশ্রমে দশাবতারের তাস তৈরি হয়েছে। বিষ্ণুপুরের দশাবতার তাস শিল্পী শীতল ফৌজদার বলেন, ‘বৈশাখ মাসে হাওড়ার ওই পুজো উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে দশাবতার তাস তৈরি করার বরাত পাই। সময় নষ্ট না করে তখন থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।’
দশাবতার তাস তৈরির বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে। শুধুমাত্র তুলির টান নয়, অনেক আচার-আচরণ মেনে তবেই তাস তৈরিতে হাত দেন শিল্পীরা। ধৈর্য ধরে তুলির টানে ফুটিয়ে তুলতে হয় দশ অবতারের রূপ। এই কাজ বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই বাড়ির মহিলারাও হাত লাগান এই শিল্পকর্ম সম্পূর্ণ করতে। জানা গেল, বছর পাঁচেক আগে বেহালার একটি পুজো মণ্ডপ প্রাচীন বাংলার এই ঐতিহ্য আজকের দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরতে দুর্গাপূজার মণ্ডপ সাজিয়ে ছিলেন। এবার হাওড়ার ষষ্ঠীতলার এই পুজো মণ্ডপটি সাজবে বিষ্ণুর দশ অবতারের ছবি দেওয়া তাসে।
ইতিহাস বলছে, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুপুরের রাজা বীর হাম্বির জমিদারী লাভ করেন। আকবরের সঙ্গে বীর হাম্বিরের সুসম্পর্ক থাকায় বিভিন্ন সময়ে তিনি আকবরের রাজ দরবারে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি তাসের খেলা দেখতেন। এবং সেই অবসর যাপনের সঙ্গে অধ্যাত্মভাবনা মিশিয়ে এক নতুন কোরক সৃষ্টি করেন। মল্ল রাজারা অবসর সময়ে এই তাস খেলতেন। হিন্দু শাস্ত্রমতে প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, জগন্নাথ বা বুদ্ধের স্থান ছিল নবমে। কিন্তু দশাবতার তাসের ক্রম অনুসারে, জগন্নাথ বা বুদ্ধদেবের স্থান পঞ্চম। জানা গেল, একপ্রস্ত দশাবতার তাস তৈরি করতে মোট ১২০ টি তাস লাগে। প্রতিটি অবতারের জন্য ১২ টি করে তাস থাকে। প্রচলিত পদ্ধতিতে সারা বছরের মতো এই মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত তাসগুলি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
হাওড়ার ষষ্ঠীতলা বারোয়ারি দুর্গাপূজা কমিটির সম্পাদক দীপঙ্কর সাহা জানান, এবারের বাজেট ১৪ লক্ষ টাকা। এই বাজেটেই এবারের পুজোয় একটু ইতিহাসের ছোঁয়া দিয়ে দর্শকদের আকর্ষণ করতে চান তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.