দীপঙ্কর মণ্ডল: বহুতল হোক বা একতলা বাড়ি, কলকাতার বাসিন্দাদের আপাতত ভয়ের কিছু নেই৷ ভূমিকম্পের জেরে তৈরি হওয়া গুজবে কান দেওয়ারও প্রয়োজন নেই৷ কম্পনের মাত্রা বাড়লে এ রাজ্যের উড়ালপুল বা সেতুতে বড়জোর ফাটল দেখা দিতে পারে, কিন্তু তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন ভূ-বিজ্ঞানীরা৷
তবে কলকাতাকে পুরোপুরি বিপদমুক্তও বলেননি বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের বক্তব্য, সামান্য হলেও কলকাতার মাটির নিচেও তৈরি হতে পারে ভূমিকম্পের উৎসস্থল৷ তবে তার মাত্রা বিপদসীমা ছাড়াবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা৷ ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, গভীর সমুদ্রে বা হিমালয়ে মাটির নিচে প্লেটের সংঘর্ষে যে কম্পন হবে তা অবশ্যই টের পাবেন কলকাতার মানুষ৷ বুধবার মায়ানমারে ছিল ভূমিকম্পের উৎসস্থল৷ এমন কম্পন বারবার হতে পারে৷ তবে তা মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভাবনা কম৷
স্থলভূমিতে এদিন ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষে তৈরি হওয়া কম্পনের মাত্রা বিপদসীমা ছাড়ায়নি৷ তবে সমুদ্রে কম্পনের মাত্রা সীমা ছাড়ালে সুনামির মতো বিপর্যয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’-র অবসরপ্রাপ্ত ভূ-বিজ্ঞানী জ্ঞানরঞ্জন কয়াল৷ রাজ্যের মানুষের প্রতি তাঁর আবেদন, “প্যানিকড হওয়ার কিছু নেই৷ রিখটার স্কেলে আট মাত্রা ছাড়ালে তা ভয়ের৷ কিন্তু ইন্দো-বার্মা রেঞ্জে গত ১০০ বছরে যত কম্পন হয়েছে তাতে কলকাতার ভয়ের কিছু হয়নি৷ তা হওয়ার সম্ভাবনা কম৷”
কিন্তু গত পাঁচ বছরে ঘনঘন কম্পন হচ্ছে কেন? জ্ঞানরঞ্জনবাবুর মতে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ দুই মহাদেশীয় প্লেটের সংঘর্ষ হতেই থাকবে৷ জলাশয়ের মাঝে পাথর ফেললে যেমন তার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, সেইভাবে কম্পনের রেশ দূর পর্যন্ত ছড়াবে৷
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক গৌতম ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, “ভারত উপমহাদেশীয় এলাকায় হিমালয়ান বেল্টে একাধিক চ্যুতি আছে৷ এই এলাকা সংঘর্ষপ্রবণ৷ কলকাতা সেই বৃত্তের মধ্যে পড়ছে৷ তবে দূরত্ব বেশি থাকায় কম্পনের তীব্রতা কমে যাচ্ছে৷”
অন্য এক ভূ-বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, শহরের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকার নিচে রয়েছে ঝুরঝু্রে মাটি৷ বেশ কিছু জায়গায় কাদামাটিও আছে৷ সাত কিলোমিটার মাটির নিচে রয়েছে শক্ত পাথর৷ হিমালয়ান জোনের কোনও এলাকায় ভূমিকম্প হলে কম্পনের ‘ওয়েভ’ কলকাতার এই ঝুরো মাটির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই স্তরকে তরলে পরিণত করে৷ যার জেরে কলকাতায় ভূস্তরের ভারসাম্য ব্যাহত হয়ে ভূকম্পন অনুভূত হয়৷
ভূবিজ্ঞানীরা একইসঙ্গে জানাচ্ছেন, ইন্দো-গাঙ্গেয় উপত্যকায় ভূমিকম্প হওয়ার মতো উপাদান আছে৷ কলকাতার ভূপৃষ্ঠের সাড়ে চার কিলোমিটার নিচেই একটি চ্যুতি আছে৷ যা প্রায় ২৫ কিলোমিটারেরও বেশি চওড়া৷ ১৯৬৪ সালে এই চ্যুতি থেকেই বঙ্গোপসাগরে ভূমিকম্প হয়েছিল৷ রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৫.৪৷ কলকাতার নিচে থাকা এই চ্যুতি থেকে ফের ভূমিকম্প হওয়া অস্বাভাবিক নয়৷ ভূমিকম্পের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন বাড়িতে এবং ব্রিজে ফাটল দেখা দিতে পারে৷ মাত্রা বাড়লে তা বিধ্বংসী রূপও নিতে পারে৷ তবে সেই সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন ভূ-তত্ত্ব বিদ্যার অধ্যাপকরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.