গৌতম ব্রহ্ম: একা রামে রক্ষে নেই সুগ্রীব দোসর! এতদিন একই প্রজাতির চার ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাইরাস বা সেরোটাইপ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী ছিল৷ এবার মালয়েশিয়ায় মিলল পঞ্চম সেরোটাইপের হদিশ৷ যেকোনও মুহূর্তে ডেঙ্গুর এই নয়া ‘অবতার’ ঢুকে পড়তে পারে ভারতীয় ভূখণ্ডেও৷ সেক্ষেত্রে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠবে৷
চার ধরনের সেরোটাইপের মধ্যে এতদিন প্রথম ও তৃতীয় ধরনেরই দাপট দেখা যেত এ রাজ্যে৷ এবার দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধরনের সেরোটাইপও দাপট দেখাচ্ছে৷ হুগলির শ্রীরামপুরে এই দুই সেরোটাইপের হুলেই এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি৷ কারণ, এই দুই সেরোটাইপ মানবদেহে প্রথম ও তৃতীয় ধরনের থেকে বেশি ‘ভাইরাল লোড’ তৈরি করে৷ ফলে একে বশে আনতে বেশি বেগ পেতে হবে৷ মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেশি৷
দিল্লিতে গত বছর ডেঙ্গুর এই দ্বিতীয় ও চতুর্থ সেরোটাইপ বহু প্রাণ কেড়েছিল৷ ফলে, অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন৷ তার উপর এই মালয়েশিয়া আতঙ্ক৷ সেরোটাইপের প্রকৃতি জানতে রাজ্য ইতিমধ্যেই ৩০০ ডেঙ্গু রোগীর উপর সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল অ্যকাডেমি অফ ভেক্টর বোর্ন ডিজিজেস’-এর পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান তথা আশুতোষ কলেজের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সজল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, “যেহেতু মালয়েশিয়ায় প্রচুর ভারতীয় যাতায়াত করেন তাই ভারতে ওই সেরোটাইপ ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ সেক্ষেত্রে ডেঙ্গু আরও বেশি মারণ চেহারা নিতে পারে৷”
প্রায় একই মত বিশিষ্ট পতঙ্গবিশারদ তথা ‘স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা অধ্যাপক অমিয়কুমার হাটির৷ তিনি জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর চার ধরনের সেরোটাইপই পাওয়া যায় এ রাজ্য থেকে৷ নতুন সেরোটাইপের আবির্ভাব ঘটলে চিন্তা তো হবেই৷
আতঙ্কের এই আবহেই অজানা জ্বরে হুগলির সাড়ে ছ’বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে৷ নাম শেখ সফিক৷ বাড়ি বৈদ্যবাটি কাজিপাড়ায়৷ পরিবারের দাবি, ডেঙ্গুতেই মৃত্যু হয়েছে সফিকের৷ তবে চিকিৎসা না মেলারও অভিযোগও উঠেছে৷ সরকারিভাবে অবশ্য সফিকের মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গু বলে স্বীকার করা হয়নি৷ তবে বি সি রায় শিশু হাসপাতালে দশ বছরের এক বালিকার মৃত্যু ও বৃহস্পতিবার যাদবপুরের একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে কণিকা সূত্রধরের মত্যুকে এই তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে৷
যদিও বেসকারি মতে, মৃতের সংখ্যা অনেক বেশি৷ এদিন বিধাননগর পুরনিগমের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন্তীদেবী কলোনিতে দিশা দাস (১১) নামে এক বালিকার মৃত্যু হয়৷ পরিবারের দাবি, ডেঙ্গুতেই মৃত্যু হয়েছে দিশার৷ এদিকে, ভারতীয় বিদ্যাভবন স্কুল খোলার ব্যাপারে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি৷ বুধবার স্কুল পরিদর্শনে যাবেন অভিভাবকরা৷ তারপরই স্কুল খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা সহ অন্যান্য জেলাতেও৷ রাজ্যের স্বাস্হ্য অধিকর্তা ডা. বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “এই নিয়ে রবিবার পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা হল ১৩৷ আক্রান্ত ১৪৯৫৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.