সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তুমি জাগো… মহালয়ার পুন্য লগ্নে গঙ্গায় তর্পন করে পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে। পরের দিন শুরু হয় দেবীপক্ষ। আর এই দেবীপক্ষে ৯দিন ধরে চলে মা দুর্গার আরাধনা। নবরাত্রিতে নবরূপে দেখা দেন দেবী। আর দশমীতে দশেরা দিয়ে শেষ হয় দেবীপক্ষ। প্রতিদিন আলাদা আলাদা ভোগ দেওয়া হয় মা-কে। এবার অক্টোবর মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হচ্ছে দুর্গার আরাধনা। এ বাংলায় দুর্গা পুজো মূলত পাঁচ দিন (ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী) হলেও বাকি রাজ্যে ন’দিন ধরে চলে রঙিন এই উৎসব। ডান্ডিয়া, গরবায় গা ভাসান উৎসবপ্রেমীরা। নবরাত্রিতে মায়ের কোন কোন অবতারের পুজো করা হয়? কী ভোগই বা দিতে হয় দেবীকে?
শৈলপুত্রী: প্রথম দিন মায়ের আগমন ঘটে শৈল অর্থাৎ হিমালয়ের কন্যা হিসেবে। পুরাণ মতে, এই রূপেই রাজা দক্ষের কন্যা সতীর পুনর্জন্ম হয়। এই অবতারে মায়ের বাহন ষাঁড়। দেবীর একহাতে ত্রিশূল ও অন্যহাতে থাকে পদ্মফুল। এই অবতার পার্বতী ও হেমাবতী নামেও পরিচিত। শৈলপুত্রীর ভোগে গাওয়া ঘি দিতে হয়। এতে ভক্তরা রোগ মুক্ত থাকেন বলে মনে করা হয়। এবারের নবরাত্রির প্রথম দিন ধূসর অথবা কমলা রঙের পোশাক আপনার জন্য শুভ হতে পারে।
ব্রহ্মচারিণী: শিবকে পেতে এই রূপেই ধ্যানমগ্না হয়েছিলেন দেবী। তাপসচারিণী, অপর্ণা, উমা নামেও পরিচিতি রয়েছে ব্রহ্মচারিণীর। দেবীর ডানহাতে অক্ষমালা ও বাঁ-হাতে থাকে কমন্ডলু। এদিন বাড়ির মহিলারা সংসাদের সুখ-শান্তির জন্য উপবাসও করে থাকেন। পরিবারের সদস্যদের দীর্ঘায়ু কামনা করে এদিন ভোগের সঙ্গে চিনি দিতে হয়। এদিনের শুভ রং সাদা।
চন্দ্রঘণ্টা: দৃঢ় মনোবল ও সাহসের প্রতীক হল মায়ের এই অবতার। চন্দ্রখণ্ড, চন্দ্রিকা, রামচণ্ডী নামেও ডাকা হয় দেবীর এই রূপকে। দেবী মাথায় চাঁদ ধারণ করে থাকায় এই নাম। দুঃখ-কষ্ট দূর করতে তৃতীয় দিন মা-কে দুধ, মিষ্টি ও ক্ষীর ভোগ হিসেবে দেন ভক্তরা। এবার তৃতীয়ায় লাল পোশাকে সাজিয়ে তুলুন নিজেকে।
কুষ্মান্ড: দেবীর দৈবিক হাসিতে মানুষের মনের ও জীবনের সমস্ত অন্ধকার দূর হয়ে যায়। বাহন বাঘকে সঙ্গে নিয়ে আবির্ভাব হন দশভুজা। চতুর্থীর বিশেষ ভোগ হল মালপোয়া। এদিন নিজেকে ও পরিবারকে নীল রঙে রাঙিয়ে তুলুন।
স্কন্দমাতা: এই অবতারকে অগ্নির দেবী বলা হয়। কার্তিকের মা হিসেবে আগমন ঘটে তাঁর। পরিবারকে সুস্থ রাখতে পঞ্চমীতে মাকে ভোগে কলা দেওয়া হয়। এবারের পঞ্চমীতে হলুদ রং আপনার জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে পারে।
কাত্যায়নী: মা দুর্গার ষষ্ঠ রূপকে যুদ্ধের দেবী হিসেবেও আরাধনা করা হয়। পুরাণ মতে, এই অবতারেই মহিষাসুরকে বধ করে সিংহের পিঠে আসীন হন দুর্গা। এদিনের বিশেষ ভোগ হল মধু যা ভক্তদের আরও সুন্দর এবং আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়। সবুজ হল এদিনের শুভ রং।
কালরাত্রি: দেবী দুর্গার হিংস্র রূপ কালরাত্রি বা শুভমকারী। কালী অবতারের মতো এই রূপেও অসুরের কাটা মুণ্ড থেকে রক্ত পান করেন মা। তবে এখানে মা আসেন গাধার পিঠে চেপে। মায়ের অন্ধকার দিকটিই এই অবতারে ফুটে ওঠে। দুষ্টের দমন করে বিশ্বকে আলোকিত করা এই অবতারের উদ্দেশ্য। দেবীকে গজা ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। ময়ূরী রঙের পোশাক পরতে পারেন এদিন।
মহাগৌরী: কথিত আছে, দেবী দুর্গা একবার একস্থানে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ তপস্যায় লিপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর পায়ের ভারে মাটি ও ধুলো উঠে এসে দেবীর সারা দেহ নোংরা করে দেয়। স্বামী শিব তাঁকে গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে তাঁর সমস্ত ধুলো ধুয়ে দেন। সেই কারণে এই অবতার ভক্তদের পাপ ধুয়ে দেয় বলে বিশ্বাস করা হয়। মা-কে এদিন ভোগে নারকেল দেওয়া হয়। এবারের পুজোয় অষ্টমীতে বেগুনি (পার্পল) রঙের পোশাকই শুভ।
সিদ্ধিদাত্রী: এই রূপে দেবী দুর্গা তাঁর ভক্তদের সামনে জ্ঞানের ভাণ্ডার উজাড় করে দেন। পদ্মাসনে বসা দেবীকে তিলের তৈরি নাড়ু বা খাবার ভোগ হিসেবে দেওয়ার চল রয়েছে। মনে করা হয়, এতে ভক্তের অপঘাতে মৃত্যু হয় না। নবমীতে আপনার গায়ের পোশাকের রংটি হোক আকাশি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.