গৌতম ব্রহ্ম: হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেল রোগী! তা-ও আবার মৃত্যুর পর। অবিশ্বাস্য এই ঘটনায় তোলপাড় হল কলকাতার এক সরকারি হাসপাতাল। জ্বলজ্যান্ত মড়া নিখোঁজ হলে যা হয় আর কী! মাথায় হাত হাসপাতালের। চুল ছিঁড়লেন ডাক্তারবাবু থেকে সুপার।থানায় ‘মিসিং ডায়েরি’-ও হল। ‘পলাতক’ মৃত রোগীর খোঁজে তিলজলা তোলপাড় করল পুলিশ। সন্ধান যখন মিলল তখন পঞ্চভূতে বিলীন হয়েছেন সেই রোগীর মরদেহ। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
[মৃত্যুর পরও নেওয়া হয়েছে রোগীর শরীরের রক্ত, জরিমানা কোঠারি হাসপাতালের]
রোগীর নাম মহম্মদ জিয়াউদ্দিন। বয়স ৪৮ বছর। বাড়ি তিলজলা থানা এলাকার জি জে খান রোডে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১১ ডিসেম্বর দুপুরে জিয়াউদ্দিনকে তাঁর বাড়ির লোকজন ন্যাশনালে নিয়ে আসেন। দু’টোর আগে রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয় বলেএমার্জেন্সি থেকে জিয়াউদ্দিনকে আউটডোরে পাঠানো হয়। ডাক্তাররা ভর্তি নিয়ে নেন। রামমোহন বিল্ডিংয়ের মেডিসিন বিভাগের আরএফ ১ ওয়ার্ডে ডা. পার্থ সরকারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু হয়। মিনিট কুড়ির মধ্যেই মৃত্যু হয় জিয়াউদ্দিনের। ঘড়িতে তখন দুপুর দু’টো। ডাক্তাররা ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ লিখতে বসেন। ফিরে এসে দেখেন বেড ফাঁকা। কর্পূরের মতো উবে গিয়েছেন জিয়াউদ্দিন। আকাশ ভেঙে পড়ে ডাক্তারবাবুর মাথায়। হৃৎস্পন্দন বাড়ে নার্স ও নিরাপত্তারক্ষীদের।
[চেনার ভুল! দার্জিলিংয়ের কমলা ভেবে আসলে কী কিনছেন জানেন?]
সুপার অফিসে খবর যায়। শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি। কিন্তু জিয়াউদ্দিন হাওয়া। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের তরফে বেনিয়াপুকুর থানায় ‘মিসিং ডায়েরি’ হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ রোগীর ‘বেড হেড’ টিকিট ঘেঁটে বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করা হয়। জানা যায়, ২৮ এ নম্বর জি জে খান রোডে থাকতেন জিয়াউদ্দিন। ওই ঠিকানায় পুলিশ যখন পৌঁছয় তখন জিয়াউদ্দিনকে কবরস্থ করেছে তাঁর পরিবার। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ডাক্তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করার পরই নার্সদের চোখে ধুলো দিয়ে রোগীকে পাঁজাকোলা করে চম্পট দেয় জিয়াউদ্দিনের পরিবার। অতঃপর পাড়ায় পৌঁছে স্থানীয় এক চিকিৎসকের থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নেয়। তার পরিপ্রেক্ষিতেই শেষকৃত্য হয় জিয়াউদ্দিনের। সুপার পীতবরণ চক্রবর্তী ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, “গোটা বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।”
[২৪ ঘণ্টার মধ্যে সল্টলেকে বৃদ্ধ খুনের কিনারা, গ্রেপ্তার ভাড়াটে]
কিন্তু কেন এই কাজ করল পরিবার তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, রোগীর ময়নাতদন্ত হতে পারে এই আশঙ্কায় এই কাণ্ড করেছে পরিবার। এদিকে, ঘটনার পরদিন মানে বুধবার রোগীর পরিবার পুলিশের নির্দেশে রামমোহন ব্লকের আরএফ ১ ওয়ার্ডে যায়। ওয়ার্ড মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ চায়। ওয়ার্ড মাস্টার ‘পুলিশি পারমিশন’ আনার কথা বললে জিয়াউদ্দিনের পরিবার ফের চলে যায়। আর হাসপাতালে ফেরেনি। ফলে জিয়াউদ্দিনের বেড হেড টিকিটের সঙ্গেই ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট।
প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হওয়া রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট কী করে বাইরের একজন চিকিৎসক লিখলেন। বিষয়টি যে আইনবিরুদ্ধ তা মেনে নিয়েছেন রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি ডা. নির্মল মাজি। তাঁর মত, “এটা গর্হিত অপরাধ। হাসপাতালের হেফাজতে থাকা রোগীর ডেথ সার্টিফিকেট বাইরের ডাক্তার দিতে পারেন না। চিকিৎসকের কড়া শাস্তি হওয়া উচিত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.