নন্দিতা রায়: রাজ্যসভার পরে সোমবার ভোটাভুটির মাধ্যমে লোকসভাতেও পাস হয়ে গেল পণ্য ও পরিষেবা কর বা জিএসটি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল৷ লোকসভায় বিলটি পাস হওয়া নিছকই আনুষ্ঠানিক ও সাংবিধানিক রীতি৷ তবে এদিনের বিল পাসের থেকেও তাত্পর্যপূর্ণ হল, দেশের কর কাঠামো সংস্কারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জিএসটি পতি নিয়ে সংসদে প্রথম বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ তবে উদ্দেশ্য জিএসটি হলেও এদিন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল আগোগোড়া রাজনৈতিক৷ কালো টাকা থেকে শুরু করে, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, সামাজিক ক্ষেত্রে গতি আনা, গরিবদের উন্নতি, বিজেপির ‘একভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ স্লোগান, দলের নতুন লাইন রাষ্ট্রনীতি–সবকিছুই উঠে এল মোদির বক্তৃতায়৷ নস্যাৎ করলেন কংগ্রেসের তোলা নানান অভিযোগকেও৷
এদিন মোদি বলেন, “দুর্নীতি নিয়ে আমরা অনেক কথাই বলি৷ কিন্তু তা রোধ করার জন্য তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷ জিএসটি চালু হলে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা কমবে৷ দেশে কাঁচা বিল ও পাকা বিল প্রথা চালু রয়েছে৷ জিএসটি হলে পাকা বিলের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে৷ কালোটাকা জমা হওয়ার রাস্তা বন্ধ হবে৷ সবকিছু অনলাইন হওয়ার জন্য দুর্নীতি জিরো হওয়ার দিকে যাবে৷ দেশ দুর্নীতি-মুক্ত হবে৷”
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “আমরা এখন দারিদ্রের সঙ্গে লড়ছি৷ সেই লড়াইয়ে সকলের অংশগ্রহণে জিএসটি পরিস্থিতি তৈরি করবে৷ ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসায়ীদের এখন ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে গেলে হাজার সমস্যার শিকার হতে হয়৷ জিএসটি চালু হলে তাদের সব কিছুই খাতায় কলমে থাকবে৷ এই প্রমাণ দেখিয়ে কাজ করানো তাদের পক্ষে সহজ হবে৷” তাঁর দাবি, জিএসটি কর ব্যবস্থাকে সরল করার পাশাপাশি সাম্য আনবে৷ এর মাধ্যমে ‘উপভোক্তরাই রাজা’, সেই বার্তাও সকলের কাছে পৌঁছবে৷
জিএসটি নিয়ে বক্তব্যের মাঝেমাঝেই এদিন বিরোধীদের কটাক্ষেরও জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ কংগ্রেস সাংসদ বীরাপ্পা মইলি বলেছিলেন, “লোকসভা ‘জুনিয়রদের সভা’৷ তাই সরকার আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করে না৷” জবাবে মোদি বলেন, “কেউ এই সভাকে জুনিয়রদের সভা বলেছেন৷ সেই বিষয়টি আমার খুব খারাপ লেগেছে৷ আমরা তা মনে করি না৷ আমি জিএসটি নিয়ে লোকসভা থেকে সোনিয়াজি ও রাজ্যসভা থেকে মনমোহনজিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনা করেছিলাম৷” গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি বিলের বিরোধিতা করেছিলেন বলে কংগ্রেস এতদিন ধরে বারবার প্রধানমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলেছেন৷ জবাবে এদিন মোদি বলেন, “আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন আমারও এই বিল নিয়ে সংশয় ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে আগে বিলটি দেখার জন্যই এখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজ্যের আপত্তি বুঝতে সুবিধা হয়েছে৷” কংগ্রেস জিএসটি ধারণাকে তাদের অবদান বলে দাবি করে৷ মোদি বলেন, “এটা ঠিক যে কেউ জন্ম দিয়েছে, অন্য কেউ লালন পালন করেছে৷ তবে এটা কোনও দল বা সরকারের জয় নয়৷ ভারতের গণতন্ত্রের উচ্চ পরম্পরার জয়৷ সব রাজনৈতিক দলের বিজয়৷ আগেকার ও বর্তমান সরকারের বিজয়৷ তাই কে জিতল বা হারল সেটা বড় কথা নয়৷ ভারত বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করল এটাই শেষ কথা৷”
প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদের সমালোচনার দিকে না গেলেও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এদিন তাঁর জবাবি ভাষণে কংগ্রেসের বিলের খামতি তুলে ধরে আক্রমণ শানাতে ছাড়েননি৷ জিএসটির মুল বিলটি যখন আনা হবে সেখানে রাজ্যের স্বার্থ রক্ষিত হবে বলেও এদিন জেটলি সব মহলকে আশ্বস্ত করেছেন৷ বিলের জন্য যে কমিটি তৈরি করা হয়েছে তাতে দেশের মস্ত রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে অর্থমন্ত্রীরা থাকবেন বলেও এদিন তিনি আবার উল্লেখ করেছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিলের উপর বক্তব্য রাখেন দলের মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তৃণমূল যে বিলটি প্রথম থেকেই সমর্থন জানিয়ে আসছে এবং এ বিষয়ে সরকারের পাশে রয়েছে সেকথা জানান কল্যাণ৷ রাজ্য সরকার যেমন কেন্দ্রর পাশে রয়েছে তেমনিই কেন্দ্র যাতে রাজ্যের পাশে দাঁড়ায় সেকথা দানিয়ে কল্যাণবাবু এদিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ’-র দাবি করেছেন৷ জানা গিয়েছে, জিএসটি বিল নিয়ে তৃণমূলের প্রধান যে ইস্যু ছিল, দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসাগুলি রাজ্যের হাতে থাকুক সেই বিষয়টি কেন্দ্র অন্যভাবে মেনে নিতে চলেছে৷ তবে, টাকার অঙ্কে নয় রাজ্যের ক্ষুদ্র ও ছোট ব্যবসাগুলির রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়গুলি রাজ্যের হাতে থাকবে বলেই ঠিক হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.