দীপঙ্কর মণ্ডল: তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যের স্কুল সিলেবাসে বিজেপি নেতাদের নাম! স্কুলপাঠ্যে আছেন মুকুল রায় এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ও!স্বভাবতই ঘোর চাঞ্চল্য দানা বেঁধেছে শিক্ষামহলে। বেজায় বিড়ম্বনায় সরকারি কর্তারা। অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও কলকাতার প্রাক্তন তৃণমূল মেয়র, অধুনা বিজেপি শিবিরে যোগদানকারী শোভনবাবুর ‘উজ্জ্বল’ উপস্থিতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষাকর্তাদের ঘাম ছুটছে। এই ‘ভুল’ কীভাবে শোধরানো যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর।
অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের নাম রাখা হয়েছে ‘অতীত ও ঐতিহ্য’। এই আবশ্যিক পাঠ্য বইটি গত কয়েক বছর ধরে পড়ানো হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি সেই বইতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর নাম আছে। দু’বছরেরও বেশি আগে তৃণমূল ছেড়েছেন মুকুল। কয়েকমাস আগে গেরুয়াপন্থী হয়েছেন শোভনও। চলতি বছরের সংশোধিত বইতেও ঠাঁই পেয়েছেন দুই বিজেপি নেতা। দফতরের কর্মীদের ‘চোখ এড়িয়ে যাওয়া’ তত্ত্বই উঠে আসছে আলোচনায়। তৃণমূল ছেড়েছেন বলে সরকারি বই থেকে দুই নেতার নাম বাদ দিতে হবে, এমন তত্ত্ব মেনে নিতে নারাজ আধিকারিকদের একটি অংশ।
সিঙ্গুর আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ রাখা হয়েছে ওই বইতে। এই অংশেই মমতার পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে মুকুল এবং শোভনকে রাখা হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্কও আছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সিঙ্গুরের মতো একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি কেন স্কুলে পড়ানো হবে। অনেকের বক্তব্য, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতার নাম যদিও বা মানা যায়, অন্যদের নাম কেন থাকবে সিলেবাসে। বিষয়টি নিয়ে আগে আন্দোলনও হয়েছে। তবে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর সংশোধিত বইতে পুরনো নামগুলিই ফের ছেপে পাঠিয়েছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলিতে নতুন বই পৌঁছে গিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির প্রায় ২০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী তা পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই খুশি। কিন্তু শিক্ষা মহলের প্রশ্ন, স্কুল পড়ুয়ারা মুকুল ও শোভনকে নিয়ে নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবে। তখন শিক্ষক- শিক্ষিকারা এড়িয়ে যেতে পারবেন না। শাসক দলের সমর্থক শিক্ষকদেরও দু’জন বিজেপি নেতার বিষয়ে বলতেই হবে। এই বইতে কী করে বিজেপি নেতাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হল তা নিয়ে বিস্মিত ওয়াকিবহাল মহল। পূর্ব মেদিনীপুরের ইতিহাসের শিক্ষক সোমনাথ সামন্তর বক্তব্য, “কিশোর-কিশোরীদের দলে টানতেই তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের কথা স্কুলে পড়ানো হচ্ছে। তবে সাবালক হওয়ার পর তারা কতটা ওই নেতা-মন্ত্রীদের শ্রদ্ধা করবে তা নিয়ে সন্দেহ আছে।”
তাঁর নাম স্কুলপাঠ্যে আছে শুনে খানিকটা অবাকই হয়েছেন মুকুল। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে চাননি রাজনীতির চাণক্য।বিরোধী বাম এবং বিজেপি নেতাদের মতো মুকুল ঘনিষ্ঠদেরও বক্তব্য, সিঙ্গুর আন্দোলন স্কুলপাঠ্যে রাখা উচিত নয়। শোভনকে ফোন করলেও তিনি ফোন না তোলায় বক্তব্য জানা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও এই বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.