স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা: দশদিনের মধ্যে ওপার বাংলার মতো এপার বাংলাতেও বড় ধরনের হামলা চালাতে বাংলাদেশের দুই শীর্ষ জঙ্গি নেতা সুলেমান এবং মৌলনা ইউসুফের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের পরামর্শ নিয়েছিল ধৃত মসিউদ্দিন মিয়া ওরফে মুসা৷ হামলা চালাতেই সোমবার তামিলনাড়ু থেকে বীরভূমের লাভপুরে আসছিল সে৷ এই হামলায় তাকে সহযোগিতা করার কথা ছিল খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের অন্যতম পলাতক জেএমবি জঙ্গি কদর গাজির৷ লাভপুরে এসেই নিমড়া গ্রামে কদরের সঙ্গে গোপন বৈঠক করার কথা ছিল মুসার৷ ধৃত মুসা, সাদ্দাম হোসেন ওরফে কালো এবং শেখ আববাসউদ্দিন ওরফে আমিনকে বৃহস্পতিবার ভবানীভবনে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে এই তথ্যই পেয়েছেন সিআইডির গোয়েন্দারা৷
পাশাপাশি বুধবার গভীর রাতে মুসার তামিলানাডুর অন্যপূর্ণা অ্যাপার্টমেণ্টের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় সিআইডি৷ এই ফ্ল্যাট থেকে মুসার ব্যবহৃত ল্যাপটপ এবং একটি তলোয়ার উদ্ধার করা হয়৷ তাদের জেরা করতে ভবানীভবনে আসে এনআইএ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাবাহিনী৷ এই জেরায় বাংলাদেশের আরও এক জঙ্গি নেতা ‘বাংলার বাঘ-২’-এর নাম পেয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা৷ অন্যদিকে ধৃত কালো ও আমিনকে এদিন হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের আগামী ১৪ দিন পর্যন্ত সিআইডি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ বছর সাতেক আগে কলকাতাতেই থাকত মুসা৷ সে পড়াশোনা করত সুরেন্দ্রনাথ কলেজে৷ পড়ার কারণে কলকাতাতেই একটি মেস ভাড়া নিয়ে থাকত সে৷ তখন থেকেই জিহাদি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে মুসা৷ তার সঙ্গে যোগাযোগ হয় জেএমবির জঙ্গি নেতাদের৷ বিশেষ করে গ্রামের জঙ্গি যুবক আমজাদ ও কদর গাজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে মুসার৷ খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে জড়িত আমজাদ ও কদর৷ জেরায় জানা গিয়েছে, জিহাদির কারণেই মাঝপথেই পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় মুসা৷ পরিবার নিয়ে চলে যায় তামিলনাড়ুতে৷ তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমস্ত জঙ্গি নেতার সঙ্গেই তার যোগাযোগ ছিল নিয়মিত৷ ডিআইজি-সিআইডি (অপারেশন) দিলীপ আদক জানান, “মুসাকে জেরা করে আইএস এবং জামাত জঙ্গিদের অনেক নেতারই নাম উঠে এসেছে৷ তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মুসার৷”
‘জামাত-উল-মুজাহিদিন অফ বাংলাদেশ’-এর শীর্ষ নেতা সুলেমান৷ অন্যদিকে বাংলাদেশেরই ‘আনসার-উল-তৌহিদ’-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতা মৌলানা ইউসুফ৷ তাদের সঙ্গে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে যোগাযোগ রাখত মুসা৷ পাশাপাশি সিরিয়ার আইএস জঙ্গি নেতা সফি আরমারের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তার৷ তাদের নির্দেশ মতোই এ রাজ্যে জঙ্গি নেটওয়ার্ক বাড়াতে চেয়েছিল সে৷ গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দিন দশেকের মধ্যেই বীরভূমের একটি মন্দিরের বৃদ্ধ প্রধান পুরোহিত এবং তাঁর স্ত্রীকে গলা কেটে খুনের ছক কষেছিল মুসারা৷ সেই কারণেই আপ বিশ্বভারতী প্যাসেঞ্জার ধরার আগে ধর্মতলায় এসে একটি ১৩ ইঞ্চির ভোজালি কিনেছিল মুসা৷ তারই মাঝে মেটিয়াবুরুজে গিয়ে আরও এক আইএস সদস্যের সঙ্গে সে দেখা করে আসে৷
কদর জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ মডিউলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল৷ গ্রামের লোকজনের দাবি, কদরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল মুসার৷ কারণ, খাগড়াগড় কাণ্ডের পর কদর বাংলাদেশে পালিয়ে গেলেও গত সাত-আট মাস ধরে তার লাভপুরে যাতায়াত বেড়েছে৷ মুসা গত তিন বছর ধরে লাভপুরে আসা যাওয়া বাড়িয়েছিল৷ যদিও সবসময় লাভপুর এলেই নিজের বাড়িতে যেত তা নয়৷ সে লাভপুরে এসে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগও করত৷ লাভপুর এলে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে নমাজও পড়তে দেখা গিয়েছে তাকে৷ যোগাযোগ রাখত মোবাইল ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে৷ কিন্তু খাগড়াগড়-কাণ্ড নিয়ে আলোচনা স্তিমিত হলে গত এক বছর ধরে ফের লাভপুরের রেজিস্ট্রি পাড়ায় যাতায়াত শুরু হয় মুসার৷ কদর গাজি লাভপুরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি গোপন ডেরায় থাকত৷ কিন্তু টানা থাকত না সে৷ খুব বেশি হলে দু’তিন দিন৷ সেই সময়ে কদরের ডেরায় মুসার যাতায়াত ছিল বলেও মনে করা হচ্ছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.