Advertisement
Advertisement

তথ্য চুরির দায় স্বীকার করলেন মার্ক জুকারবার্গ, আশ্বাস পূর্ণ তদন্তের

বিতর্কের ফলে ফেসবুকের শেয়ার নেমেছে ৯%, ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের।

Mark Zuckerberg admits data breach on Facebook
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 22, 2018 9:38 am
  • Updated:August 1, 2019 4:58 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চারদিন নীরব থাকার পর অবশেষে ডেটা চুরির প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বিশ্বের এক নম্বর সোশ্যাল সাইট ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ। এবং মুখ খুলতেই কার্যত স্বীকার করে নিলেন তথ্য চুরি যাওয়ার যাবতীয় অভিযোগ। তবে একথাও জানিয়ে দিলেন, গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ফেসবুক। জানালেন, তথ্য সুরক্ষিত রাখতে না পারলে ফেসবুকের ব্যবসা করার নৈতিক অধিকার নেই। বলেন, ‘ইউজারদের ডেটা সুরক্ষিত রাখা আমাদের দায়িত্ব। অন্যথায় আপনাদের পরিষেবা দেওয়ার যোগ্য নই।’

প্রায় ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য চুরি করে মার্কিন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র বিরুদ্ধে। তথ্য চুরির দায় কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন মার্ক। কিন্তু এত বড় চুরি যেন দ্বিতীয়বার না ঘটে, তার জন্য এবার বড়সড় পদক্ষেপ করছে ফেসবুক। এর আগেও অবশ্য তথ্য চুরি ঠেকাতে থার্ড পার্টি অ্যাপসের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে ফেসবুকে। কিন্তু সে সব পদক্ষেপ যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডেটা জালিয়াতি রুখতে পারেনি, গত মাসে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কুকীর্তি সে কথাই প্রমাণ করে দিল। জুকারবার্গ আশ্বাস দিয়েছেন, এহেন অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে আরও কড়া হবে ফেসবুক।

Advertisement

[ভারতে হামলা চালাতে শিখ যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাকিস্তান]

একটি ফেসবুক পোস্ট করে জুকারবার্গ বলছেন, এখন থেকে অডিটের মুখোমুখি হতে না চাইলে ডেভলপারদের নিষিদ্ধ করবে ফেসবুক। এখন থেকে একটানা তিনমাসের বেশি কোনও অ্যাপ ব্যবহার না করলে ওই সব অ্যাপের ডেভলপাররা গ্রাহকদের তথ্য নিতে পারবেন না। ইউজার নেম, প্রোফাইল ফটো ও ই-মেল ছাড়া অন্য কোনও তথ্য নেওয়া যাবে না। যদিও কেমব্রিজ ও ফেসবুক- কেউ-ই এই তথ্য চুরির দায় স্বীকার করছে না। বরং একে অপরের ঘাড়ে দোষ ঠেলে দিচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া আইন লঙ্ঘন করেছে দুই পক্ষই। অভিযোগ, ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের নেপথ্যে রয়েছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিক-ই। ইতিমধ্যেই আমেরিকা ও ব্রিটেনে এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। যাবতীয় বিতর্কের ফলে ফেসবুকের শেয়ারের দর নেমেছে ৯%। মার্ক জুকারবার্গের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিতর্কের ঢেউ এসে লেগেছে এ দেশেও।

খোদ সংস্থাটিই জানিয়েছে, ২০১০ সালে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে একাধিক পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধেছিল তারা। সাহায্য করেছিল ভোটে জিততে। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু কি বিহার নির্বাচনেই থেমে থেকেছে অ্যানালিটিকার রথ? না কি পরে, অন্য নির্বাচনেও কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোটারদের পছন্দ অপছন্দের তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে তারা। বুধবার এই মর্মেই উত্তাল হয়েছে দিল্লি। ফেসবুক থেকে চুরি যাওয়া তথ্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কাজে লাগানো হয়েছে কি না তা নিয়ে জোর তরজা শুরু হয়েছে বিজেপি-কংগ্রেসে। একদিকে, যখন কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে ২০১০ এর বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে। তখনই ২০১৯-এ কংগ্রেসের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি ও আইনমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ।

প্রসাদের প্রশ্ন, ২০১৯ এর নির্বাচনে জিততে কি অ্যনালিটিকার সাহায্য নিচ্ছে কংগ্রেস? গুজরাত ও হিমাচলের নির্বাচনে যে ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ব্যবহারের ইঙ্গিত কংগ্রেস দিয়েছিল তা কি অ্যনালিটিকার তথ্যই? এমনকী রাহুলের সোশ্যল প্রোফাইলে বিগত কিছু দিনে যেভাবে চড়চড় করে বেড়েছে অনুগামীর সংখ্যা, তার নেপথ্যেও অ্যানালিটিকার সাহায্য রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী। একই সঙ্গে মার্ক জুকারবার্গের উদ্দেশে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। রীতিমতো হুমকির সুরে প্রসাদ বলেন, ভারত সোশ্যাল মিডিয়ার স্বাধীনতায় বাধা দেবে না ঠিকই। তবে, জুকারবার্গ যদি ভারতের গণতন্ত্রে হাত দেন, তবে ভারতীয় আইনের হাত লম্বা হয়ে পৌঁছে যাবে ক্যালিফোর্নিয়ায়। আটলানটিক পেরিয়ে টেনে আনবে এদেশে। প্রসাদ বলেন, “আমি দেশের আইনমন্ত্রী হিসাবে বলছি, যদি তথ্যের অপব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়, তবে তিনি কখনই তা মেনে নেবেন না। কড়া আইনি পদক্ষেপ করবেন ফেসবুকের বিরুদ্ধে।

[বিস্ফোরক অন্তর্তদন্ত! এখনও দেদার বদল হচ্ছে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট]

পাল্টা আক্রমণ শানায় কংগ্রেসও। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা দাবি করেন, ২০১০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচন সহ আরও চারটি রাজ্যে অ্যনালিটিকার সাহায্য নিয়েছিল বিজেপি। সুরজেওয়ালার মতে, “কংগ্রেসকে দোষারোপ না করে  বিজেপি বরং ২০১০ সালের জবাব দিক।” সুরজেওয়ালা বলেন, ভারতে বিজেপির শরিক দল জেডিইউ-এর এক সাংসদ পুত্র অ্যনালিটিকার সঙ্গে যৌথভাবে ‘ওবলেন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স’ নামের একটি সংস্থা খোলেন। এমনকী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংও ২০০৯এ অ্যনালিটিকার থেকে সাহায্য নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন সুরজেওয়ালা। কংগ্রেস সমর্থকদের প্রশ্ন তবে কি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়েও ভূমিকা ছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার। যদিও কংগ্রেসের এই অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন রবিশঙ্কর প্রসাদ।

তথ্য ফাঁসের এই ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আসে দিন দু’য়েক আগেই। ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর নিউজ সোমবার একটি রিপোর্টে জানায়, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের একটি সংস্থা বিশ্ব জুড়ে এক অভিনব ব্যবসা ফেঁদে বসেছে। ভোটে দাঁড়ানো প্রার্থীকে এরা ভোটারদের গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে ভোটে জিততে। বিষয়টি সমস্ত সংবাদমাধ্যমের নজর টানে কারণ এই সংস্থাটিই ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, তবে কি ট্রাম্প তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই জিতেছেন নির্বাচন? এরপরেই আরও একটি খবরে এই গোটা বিষয়টির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ফেসবুক। নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ব্রিটেনের সংবাদপত্র দ্য অবজার্ভার তাদের রিপোর্টে জানায় গত কয়েকবছরে ফেসবুকের পাঁচ কোটি ইউজার প্রোফাইলের ব্যক্তিগত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামের সংস্থাটির হাতে।

২০১৪ সালে ‘দিস ইজ ইওর ডিজিটাল লাইফ’ নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আলেকজান্ডার কোগান। বুধবার তিনি বিবিসি রেডিওর কাছে স্বীকার করেছেন যে, ওই অ্যাপ মারফত ফেসবুক থেকে ৩ কোটি ইউজারের প্রোফাইলের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। সেই তথ্য তিনি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে তুলেও দিয়েছিলেন। কিন্তু, তখন তিনি জানতেন বিষয়টি আইনত বৈধ। কারণ অ্যানালিটিকা তেমনটাই বুঝিয়েছিল তাঁকে। এখন বুঝতে পারছেন, তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে।

[এবার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিলিটের ডাক দিলেন হোয়াটসঅ্যাপের সহ কর্ণধার]

যদিও তথ্য পাচারের পক্ষে কেমব্রিজের গবেষকের এমন যুক্তি দুর্বল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে কোটি কোটি ফেসবুক ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য এভাবে অবারিত হয়ে যাওয়ায় বড় বিপদের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। তার কারণ এই তথ্য ব্যবহার করে চাইলে যে কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে গোটা দুনিয়াটাই। স্বার্থসিদ্ধির সংকীর্ণ ব্যবহারে টেনে আনতে পারে ধ্বংসকে। পরিণতির কথা ভেবে তাই শিউরে উঠেছেন মার্কিন গোয়েন্দারা। তড়িঘড়ি তথ্য ফাঁসের তদন্ত শুরু করেছেন তাঁরা। তলব করা হয়েছে ফেসবুক স্রষ্টা মার্ক জুকারবার্গকেও। এই ইস্যুতেই এবার সরাসরি মুখ খুললেন জুকারবার্গ। ফেসবুকের তরফে বলা হয়েছে, তথ্য ফাঁসের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে তারা। একটি ডিজিটাল ফরেন্সিক ফার্মকে এবিষয়ে দেওয়া হয়েছে দায়িত্ব।

তথ্য চুরি কীভাবে?

ফেসবুকে মাঝে মধ্যেই ভেসে ওঠে নানা কুইজ। কোনওটিতে ইউজারের ছবি চাওয়া হয়, কোথাও চাওয়া হয় ব্যক্তিগত তথ্য। ২০১৪ সালে তেমনই একটি মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেয় একটি ফেসবুক অ্যাপ্লিকেশন। যার নাম ‘দিস ইজ ইওর ডিজিটাল লাইফ’। অভিযোগ, সেই অ্যাপ মারফতই সংগ্রহ করা হয় তিন কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য।

কোথায় প্রয়োগ?

এই তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্বে ছিল সংস্থাটি। ২০১০ সালে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজ করেছে তারা।

কীভাবে ফাঁস?

একটি সংস্থার স্টিং অপরেশনে ধরা পড়ে বিষয়টি। তাতে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সিইও থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ অফিসারদেরও বলতে শোনা গিয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্য। তাঁরা বলেছেন, ঘুষ, সুন্দরী যৌনকর্মীদের সাহায্যে সরকারি কর্তাদের মন ভুলিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও পাচারের কাজ করে থাকেন তাঁরা। পরে সেই তথ্য ব্যবহার করা হয় নির্বাচনে প্রার্থীকে জেতাতে।

স্বীকারোক্তি:

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গবেষক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে সাহায্য করেছিলেন, তিনি বিবিসিকে জানান, তাঁকে মিথ্যে বলে সংগ্রহ হয়েছে তথ্য। তবে ফেসবুক থেকে তথ্য সংগ্রহের কথা স্বীকার করেন তিনি।

[তথ্য চুরি নিয়ে ফেসবুককে সতর্ক করল কেন্দ্র]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement