স্টাফ রিপোর্টার: কংগ্রেস আছে কংগ্রেসেই৷ পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএ) চেয়ারম্যান পদে সতীর্থ মানস ভুঁইয়া নয়, বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের কাছে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী অনেক ভাল! স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় কেন সিপিএমকে ওই পদ না দিয়ে মানসবাবুকে দিলেন, তা নিয়ে সোমবার কক্ষ ত্যাগ পর্যন্ত করলেন বিরোধী দলনেতা৷ সাথী হল সিপিএম৷ এই ঘটনায় তোলপাড় কংগ্রেসে৷ মানসকে পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ যদিও মানস অনড়৷ মান্নান দিল্লিতে নালিশ করেছেন৷ এখন বল এআইসিসির কোর্টে৷ মান্নানের অভিযোগ, স্পিকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত৷ মুখ্যমন্ত্রীও জড়িত আছেন৷ কংগ্রেস চায় ওই পদে সুজনই বসুন৷ তাঁর বক্তব্যের বিরুদ্ধে শাসক দল স্বাধিকারভঙ্গের নোটিস জমা দিচ্ছে৷ তৃণমূলের অভিযোগে, সিপিএমকে খুশি করতে মানস ভুঁইয়াকে অপদস্থ করেছেন মান্নান৷
সকালে অবশ্য ছবিটা ছিল অন্যরকম৷ সবং কাণ্ডে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় মানসবাবুর বিরুদ্ধে৷ দুপুরে দেখা যায় বিধানসভায় এসে ভারাক্রান্ত মুখে মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে ঢুকছেন সবংয়ের বিধায়ক৷ মিনিট ২০ পর বেরিয়ে এসে কী কথা হল তা অবশ্য বলতে রাজি হননি তিনি৷ এরপর বিকেলে পিএ কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মানসের নাম ঘোষণা করেন স্পিকার৷ মান্নানের দাবি, রাহুল গান্ধীর অনুমতি নিয়ে সিপিএমকে ওই পদ ছাড়া হয়েছিল৷ স্পিকারকে চিঠি দিয়ে তা জানানোও হয়৷ কিন্তু মানস ভুঁইয়ার নাম কেন ঘোষণা করা হল৷ তাই তাঁরা কক্ষ ত্যাগ করেছেন৷ অধিবেশনের মধ্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মান্নান৷ পাশের আসনেই ছিলেন মানসবাবু৷ সিপিএমের পক্ষ নিতে সতীর্থের বিরোধিতা করায় শাসকদলের বিধায়করা টিপ্পনি কাটতে থাকেন৷ এরপরই কক্ষত্যাগ মান্নান-সুজনদের৷ মানস অবশ্য ফোনে কথা বলার অছিলায় আগেই বেরিয়ে যান৷ পরিষ্কার বোঝা যায় দু’জনের দূরত্ব৷ বস্তুত পিএ কমিটির চেয়ারম্যান পদে এতদিন ছিলেন জ্ঞানসিং সোহনপাল৷ যেহেতু বিরোধী দলের সিনিয়র কোনও মেম্বার এই পদ পান, সেই কারণেই মানসবাবুর নাম চূড়ান্ত করেন স্পিকার৷ তাঁর বক্তব্য, এটি কংগ্রেস দলের প্রাপ্য৷ তাই তাদের দেওয়া হয়েছে ২৫৫ (ক) ধারায়৷ মানসবাবু যদি না নেন, তাহলে কংগ্রেসেরই কেউ ওই পদ পাবেন৷ সিপিএম বা অন্য কোনও দলকে দেওয়ার বিধান নেই৷ তৃণমূল পরে অভিযোগ করে, পদ প্রাপ্য কংগ্রেসের৷ তারা আবার দিতে চাইছে সিপিএমকে৷ এটা কি প্রোমোটারির সাব কণ্ট্রাক্ট নাকি?
মানস কাণ্ড নিয়েই দিনভর তোলপাড় থাকল বিধানসভা৷ শুরু থেকেই বিরোধী দলনেতার পদ নিয়ে মান্নানের সঙ্গে মানসের দ্বন্দ্ব পৌঁছল মুষলপর্বে৷ তৃণমূল অবশ্য এই দ্বন্দ্ব শুরু থেকেই উপভোগ করছে৷ এদিনের ঘটনার পিছনেও যে উর্বর মস্তিষ্কের রাজনীতিতে শাসক বিরোধীদের টেক্কা দিয়েছে তা স্পষ্ট৷ সকালে মানসের গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর বিধানসভায় আসার পর থেকেই নাটক শুরু৷ ১১টা নাগাদ বিধানসভায় হাজির হওয়ার পরই মানস ভুঁইয়া জানতে পারেন, সবংয়ের দুবরাজপুরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি জয়দেব জানা খুনের ঘটনায় তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মেদিনীপুর আদালত৷ তখন অধিবেশন কক্ষে না গিয়ে কংগ্রেসের ঘরে বসে টেলিফোনে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করতে ব্যস্ত ছিলেন মানসবাবু৷ স্বরাষ্ট্র দফতরের বাজেট শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন মানস ভুঁইয়া৷ দিনের শেষে মানসের নাম পিএ কমিটির চেয়ারম্যান পদে ঘোষণা পর পরিষদীয় দলের বৈঠকে যোগ না দিয়ে বিধানসভা ছাড়েন মানস৷ তাঁর বক্তব্য, “স্পিকার নাম ঘোষণা করেছেন৷ শুনেছি৷” মান্নান বলেন, “কেউ যদি অন্যের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলে বিশ্বাসঘাতকতা করবে৷ মানুষ তার জবাব দেবে৷” সুজন বলেন, “গণতন্ত্রে এটা বিপদজনক ইঙ্গিত৷ গভীর চক্রান্ত হতে পারে৷” অধীর চৌধুরি জানিয়ে দেন, “মানস ভুঁইয়াকে এই পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.