স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার সকাল সওয়া ন’টা৷ দমদম পার্ক বাস স্ট্যান্ডের সামনে তখন আর পাঁচটা দিনের মতোই ব্যস্ততা৷ আচমকাই এক যুবতীর চিৎকারে ছন্দ কাটল সেই ব্যস্ততার৷ বাস স্ট্যান্ড থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরেই তখন এক যুবক ছুরি দিয়ে কোপাচ্ছে এক যুবতীকে৷ ঘাড়ে, কোমরে, পিঠে৷ রক্তাক্ত অবস্থায় বাঁচার জন্য চিৎকার করছেন ওই যুবতী৷ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা হতবাক৷ কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলেন, ঘাতক ওই যুবক সেই ছুরি দিয়েই নিজের হাতের শিরা কেটে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করছেন৷ স্থানীয় বাসিন্দারা তার দিকে ছুটে যেতেই পকেট থেকে একটি শিশি বের করে বিষ খায় সে৷ সাত সকালে এমন ঘটনায় হতবাক সেখানে থাকা প্রতক্ষ্যদর্শীরা৷ পরে স্থানীয় বাসিন্দারা ওই যুবক-যুবতীকে বাইপাসের দুই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান৷ অবস্থার অবনতি হওয়ায় অভিযুক্ত যুবককে আরজিকরে স্থানান্তরিত করা হয়৷ তবে ঠিক কী কারণে ওই যুবক যুবতীকে মারার চেষ্টা করে নিজে আত্মঘাতী হতে চাইল তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, যুবক-যুবতী পূর্বপরিচিত৷ সম্পর্কের টানাপোড়েনেই এই ঘটনা৷
এদিনের ঘটনা যে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে, তা মানছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা৷ পুলিশ ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ওই যুবতীর নাম জলি খাতুন৷ তাঁর বাড়ি কাঁচরাপাড়ায় পোলবাতা এলাকায়৷ সল্টলেক সেক্টর টু’তে শরীরচর্চার একটি ক্লিনিকে যাবেন বলে এদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন৷ দমদম পার্ক বাস স্ট্যান্ডে নেমে রাস্তা পার হচ্ছিলেন৷ সেই সময়ই ওই যুবক তাঁর উপর হামলা চালায়৷ যুবকের নাম আলিম বারিক৷ তার বাড়ি নৈহাটির শিবদাসপুরে৷ তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাসস্ট্যান্ডে জলি এবং আলিম দু’জনে প্রথমে দেখা করে৷ সেখানেই তাদের বচসা হয়৷ জলি হেঁটে যাওয়ার সময় আলিম ধাওয়া করে তাঁকে৷ কিছুটা যেতেই সে সঙ্গে থাকা ছুরি বের করে আঘাত করতে থাকে জলিকে৷ জলি চিৎকার করে৷ তবুও থামানো যায়নি আলিমকে৷ একের পর এক কোপ বসাতে থাকে ওই যুবতীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায়৷ রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়েন যুবতী৷ তখনই আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন৷ কিন্তু তার আগেই নিজের হাতের শিরা কাটে যুবক৷ যদিও ততক্ষণে হাতে থাকা ছুরির একাংশ ভেঙে যায়৷ পরে বিষ খেয়ে সে বলতে থাকে, “জলি আমাকে ঠকিয়েছে৷”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে একটি ট্রেনিং সেন্টারেই এই যুবক-যুবতীর পরিচয় হয়৷ কিন্তু যুবতীর অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায়৷ তাতেই তিক্ততা বাড়ে এই দু’জনের৷ এদিন রাতে ওই যুবতীর পরিবারের তরফে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে৷ বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি ডিডি সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “দু’জনেই এখন চিকিৎসাধীন৷ একটু সুস্থ হলে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.