প্রতীকী ছবি
আকাশনীল ভট্টাচার্য, বারাকপুর: রং-তুলি নেই৷ খবরের কাগজ আর পিচবোর্ড ও পেপারপ্লেট দিয়ে অভিনব দুর্গা তৈরি করেছেন বেলঘরিয়ার নন্দননগর আমতলার বাসিন্দা অমল পাল৷ কোনও পুজোমণ্ডপে জায়গা পায়নি তাঁর শিল্পকলা৷ যদিও ফি-বছর মানুষকে আনন্দ দিতেই অভিনব প্রতিমা গড়ে তোলেন তিনি৷
পেশায় মোটর মেকানিক৷ শখেই প্রতিমা গড়ে তোলেন৷ গত পাঁচ বছর ধরে অনেক রকম দশভুজার অভিনব মূর্তি তৈরি করেছেন৷ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাড়ির মণ্ডপে প্রতিমা রাখা হয়৷ ওইদিন অমলবাবুর বাড়িতে স্থানীয় বাসিন্দারা আসেন এবং অভিনব প্রতিমা দেখে মুগ্ধ হন৷ যদিও বিশ্বকর্মা পুজোর পরের দিন প্রতিমা ঢেকে দেওয়া হয়৷ বিশ্বকর্মা পুজো মিটতেই কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী তৈরিতে নিবিষ্ট হন এই শিল্পী৷ ষষ্ঠীর দিন থেকে বাড়ির মণ্ডপে দেবীকে স্থাপন করা হয়৷ অমলবাবুর আক্ষেপ, সামান্য উৎসাহ দেওয়ার কেউ নেই৷ কোনও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি৷ সংবর্ধনাও জানায়নি কেউ৷
হতাশ হয়ে একসময় প্রতিমা তৈরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ কিন্তু ২০১৫ সালে জেলার একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে নৈহাটির ঐকতান হলে তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়৷ এতে কিছুটা হলেও আশা পূর্ণ হয়েছিল অমলবাবুর৷ তিনি জানান, চোখ, নাক, কানের ক্ষেত্রে সাধারণত রং-তুলি ব্যবহার করতে হয়৷ কিন্তু কোনওরকম রং-তুলির সাহায্য ছাড়াই খবরের কাগজ, পিচবোর্ড, পেপার প্লেট দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হয়৷ দেবী দুর্গা ছ’ফুট কিন্তু বাকি প্রতিমা হচ্ছে দু’ফুটের মধ্যে৷ অসুরের পোশাক তৈরি হয়েছে খবরের কাগজ দিয়ে৷
প্লেট, পিচবোর্ড চার-পাঁচদিন জলে ভিজিয়ে রাখার পর তা দিয়েই মাটির মডেলের মতো প্রতিমা গড়া হয়েছে৷ কাগজ দিয়েই কার্তিক গণেশের পোশাক তৈরি হয়েছে৷ এমন অভিনব প্রতিমা তৈরির কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, “স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন মডেল তৈরি করতাম৷ পরে মোটর মেকানিকের পেশায় আসার পর অভিনব প্রতিমা তৈরি করার দিকে মন দিই৷ গৃহস্থের ফেলে দেওয়া জিনিস সংগ্রহ করে প্রতিমা তৈরি করেছি৷”
তাঁর অভিনব প্রতিমা তৈরি দেখে অনেকেই বায়না করতে এসে খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন৷ এক্ষেত্রে শিল্পীর বক্তব্য, “ফেলে দেওয়া উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করি৷ তা মণ্ডপে স্থান দেওয়ার জন্য নয়৷” মনের আনন্দেই প্রতিমা তৈরি করেন৷ শিল্পীর মাপকাঠিতেই তাঁর সৃষ্ট শিল্পের বিচার করা হোক৷ এটাই চান বেলঘরিয়ার এই মোটর মেকানিক৷
(ছবিটি প্রতীকী)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.