মলয় কুণ্ডু: ২১১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করার পরই দলীয় অনুশাসন নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তিনি৷ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন সিন্ডিকেট-তোলাবাজির বিরুদ্ধে৷ বস্তুত, গত ২১-এর মঞ্চে দাঁড়িয়েই স্পষ্টভাবে কর্মীদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, সিন্ডিকেট বা খাদান ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের তৃণমূল কংগ্রেসে কোনও জায়গা নেই৷ আর বৃহস্পতিবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে আরও একধাপ এগিয়ে কর্মীদের নিয়ম-শৃঙ্খলার গাইডলাইন বেঁধে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বুঝিয়ে দিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হতে গেলে মানতেই হবে দলীয় অনুশাসন৷ কোনও অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না৷
মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে তৃণমূল কংগ্রেস করা যাবে না৷ ব্যক্তিস্বার্থে দল নয়৷ কাজ করতে হবে মানুষের জন্য৷ তাঁর কথায়, “আমি তাদের চাই, যারা দু’মুঠো ভাত খেয়ে থাকে, মণ্ডা-মিঠাই খাওয়ার জন্য লোভে পা দেয় না৷” মানুষের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে সদস্যপদ এবং নিজেদের চাঁদা তুলে দল করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা৷
দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পর দলীয় কর্মীদের দায়িত্ব যে কত বেড়ে গিয়েছে, সেটাই এদিন বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা৷ তাঁর কথায়, “সব কর্মীরা এমএলএ হয় না, সব কর্মীরা এমপি হয় না৷ সব কর্মীরা মন্ত্রী হয় না৷ সব কর্মী নেতা হয় না৷ কিন্তু আমি সম্মান করি তাকে, বুথে যে কর্মীটা পার্টির পতাকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ বলে, সে-ই আমার আসল কর্মী৷” একইসঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, “আমি মানুষের বিরুদ্ধে কোনও কাজ অ্যালাও করব না৷ আমরা জনগণের পক্ষে৷ আমাদের সরকার জনগণের পক্ষে৷”
প্রতিটি কর্মীকে তাই ব্যক্তিগত জীবনে কেমন হতে হবে, তারও রূপরেখা ঠিক করে দিয়েছেন মমতা৷ বলেছেন, একজন সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে হবে৷ কেন? মমতার কথায়, “যেটুকু আছে, সেটুকু নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন৷” দলের কর্মীরা সঠিক পথে চললেও কেউ কেউ যে তা করছেন না, সেটাও যে তাঁর নজরে রয়েছে, বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা৷ তাঁদের উদ্দেশ্যে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “একজন-দু’জন ব্যক্তিস্বার্থ দেখে, সবাই দেখে না৷ ৪০০ ব্লক থাকলে, দু’টো-একটা ব্লকে সমস্যা হতে পারে৷ ৩৮০ ব্লকে সমস্যা নেই৷”
মানুষের কাজের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলিকেও শুনিয়ে দিয়েছেন সাবধানবাণী৷ বলেন, পুরসভাগুলোর নিজের ইচ্ছামতো কাজ করা যাবে না৷ জেলা পরিষদগুলোতেও তাই৷ সব কাজের কথা আগে দলকে জানাতে হবে৷ জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে হবে৷ পাশাপাশি ষড়যন্ত্র রুখে বিভেদে পা না দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ কেমন কর্মী চান তিনি, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা বলেন, “সবচেয়ে বড় কাজ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা৷ বিশ্বাসী কর্মী না হলে তাঁর রাজনীতি করার অধিকার নেই৷”
এদিন লড়াইয়ের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে কর্মীদের উদ্দেশে মমতার বক্তব্য, একুশের আন্দোলন বাংলার বুকে প্রাণের স্পন্দন প্রতিষ্ঠা করেছিল৷ পরিবর্তনের সূচনা করেছিল৷ আন্দোলন মানে কোনও সন্ত্রাস নয়, গুন্ডামি নয়৷ আন্দোলন মানে গণতন্ত্র৷ গণচেতনা৷ একুশ শিখিয়েছে সংকটের মধ্যে দিয়ে কীভাবে রাজনীতি করতে হয়৷ ছাত্রছাত্রী ও নতুন প্রজন্মকে ভরসা দিয়ে মমতা বলেন, “কলেজে কলেজে সুনামের সঙ্গে কাজ করবেন৷ যাতে কেউ কোনও বদনাম করতে না পারে৷ আগামিদিন কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যাবেন৷ তারপর রাজ্যের হাল ধরবেন৷ আমি আপনাদের পাহারাদার হয়ে রয়েছি৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.