কিংশুক প্রামাণিক: বাংলার মতো ত্রিপুরাতেও পরিবর্তন সম্ভব৷ কিন্তু মানিক সরকারের বিকল্প মুখ কে? সিপিএমকে হারাতে গেলে বিশ্বাসযোগ্য মুখ চাই৷ সোমবার আগরতলায় পা দিয়েই বিমানবন্দরে রাজ্য নেতাদের বৈঠকে পরিষ্কার বলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই সঙ্গে তিনি ত্রিপুরায় কংগ্রেস থেকে আসা নেতাদের বলেছেন, তৃণমূল করতে হলে কংগ্রেসের মতো রাজনীতি চলবে না৷ ঠিক যে কারণে বাংলায় পরিবর্তন কংগ্রেস করতে পারেনি, তারই পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে ত্রিপুরায়৷ কংগ্রেসকে মানুষ বিশ্বাস করে না৷ নিজের উদাহরণ তুলে তিনি বলেন, পরিবর্তন ঘরে বসে হয় না৷ রাস্তায় নেমে লাগাতার আন্দোলন করতে হয়৷ মানুষের পাশে থাকতে হয়৷ তবেই মানুষ সাহস পায়৷
বস্তুত, নিজের সততা ও লড়াকু ভাবমূর্তির জন্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর বিকল্প হয়ে উঠেছিলেন মমতা৷ আর সে কারণে বাংলার মানুষ সিপিএমকে হারানোর ভরসা পেয়েছিল৷ বলা যেতে পারে, ত্রিপুরাতেও তিনি কার্যত একজন ‘মমতা’কে চাইছেন, যিনি মানিক সরকারের বিকল্প মুখ হয়ে উঠতে পারেন৷ বাংলায় ভোটের পর ত্রিপুরাতেও কংগ্রেসে ভাঙন ধরেছে৷ বিরোধী দলনেতা সুদীপ রায়বর্মন-সহ কংগ্রেস পরিষদীয় দল এখন তৃণমূলে৷ তাই রাতারাতি বিরোধী দল হয়ে গিয়েছে তৃণমূল৷ তবে শুধু দলবদলেই হবে না৷ কংগ্রেসি কালচারটাও ছাড়তে হবে, তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা৷
আজ, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিবেকানন্দ স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা৷ এমন নয় যে, তিনি ত্রিপুরায় প্রথম এলেন৷ কিন্তু সিপিএমের খাসতালুকে পা দেওয়ার পর এ দিন নেত্রীকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের যে আবেগ দেখা গেল, তা অতীতে দেখা যায়নি৷ বিমানবন্দর থেকে স্টেট গেস্টহাউস সোনার তরী পর্যন্ত প্রায় চারশো বাইকের মিছিল মমতাকে নিয়ে এল৷ রাস্তায় অপেক্ষমাণ মানুষ৷ মাত্র ৩৭ লক্ষ জনবসতির ত্রিপুরায় এই ছবিটাই বলে দিচ্ছে মানিক দুর্গে ফাটল ধরছে৷ ঠিক যেভাবে বুদ্ধবাবুর বিরুদ্ধে ‘বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান উঠত, তেমন শোনা গেল আগরতলায়– ‘ত্রিপুরা বাঁচাও’৷ মমতার ছবিতে মুড়ে গিয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা এই শহর৷ মমতার সঙ্গে অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেনের মতো মন্ত্রীরা এসেছেন৷ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায় তো এখানে পড়েই রয়েছেন গত কয়েকদিন ধরে৷ এখন প্রশ্ন, জনসভায় মমতা কী বলবেন? তৃণমূল সূত্রের খবর, ত্রিপুরাতে পরিবর্তনের লক্ষ্যে দুর্নীতিকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন মমতা৷ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে৷ আজকের জনসভায় মমতা সেগুলি নিয়ে সরব হতে পারেন।
এদিকে ত্রিপুরার লালদুর্গ শক্ত ঘাঁটি হলেও মমতা কতটা যে তাদের মাথা-ব্যথার কারণ, তা স্পষ্ট হয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর আগমনে৷ তাঁর কথাতেও বোঝা গিয়েছে, মমতার সফরকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা৷ সূর্যবাবু বলেছেন, “বাংলার লাইন এখানে চলবে না৷ তৃণমূলের জমানত বাজেয়াপ্ত হবে৷” উল্টোদিকে সিপিএমের জবাব আজকের জনসভাতেই দিতে চাইছে তৃণমূল৷ গোটা আগরতলাতেই মমতার জনসভা ঘিরে আগ্রহ তুঙ্গে৷ নজর রয়েছে, এ দিনের সভায় আবার নতুন করে কোন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন৷ প্রত্যন্ত উপজাতি এলাকাগুলি থেকেও জনসভায় প্রচুর মানুষ আসবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.