সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিষাদের মধ্যেই যেন আগমনির সুর! মা উমাকে কৈলাসে বিদায় দেওয়ার বিষাদ ভুলতে সেই খালি বেদীতেই কুমারী পুজো করে আগমনি গানে রাত জাগল ঝালদা। নিয়মের বেড়াজালে মা বিদায় নিলেও তাঁকে যেন ছাড়তে চায় না। তাই শূন্য বেদীতে নয় কুমারীকে পুজো করে তাদের নিয়েই গানে–গানে রাত পোহাল চট্টোপাধ্যায় পরিবার। “আজকে পেলাম তোমায় উমা/ মনের মাঝে রাখতে চাই/ আঁধার ভবন করলে আলো/ এবার না মা বলবে যায়।”
পুরুলিয়ার ঝালদা পুর শহরের ন’নম্বর ওয়ার্ডের পোদ্দার পাড়ার চট্টোপাধ্যায় পরিবারে এই রেওয়াজ চলে আসছে বহু বছর ধরে। মঙ্গলবার দশমীতে রাত সাড়ে আটটা নাগাদ যখন মা দুগ্গাকে মন্দির থেকে ভাসানে নিয়ে গেলেন এলাকার পুরুষরা। ঠিক তখনই মা উমার সেই খালি পাটাতনে মহিলারা কুমারী পুজোয় মেতে উঠলেন। মা চলে যাওয়ার বিষাদ কাটাতেই সেই খালি বেদীতেই ন’জন কুমারীকে ‘উমা’ রূপে পুজো করে যেন নিজেদের কাছেই রেখে দিতে চাইলেন পোদ্দার পাড়ার মহিলারা। ওই চট্টেপাধ্যায় পরিবারের গিন্নি মায়ারানিদেবীর কথায়, “মাকে বিসর্জনে নিয়ে যাওয়ার পর সেই দুঃখ ভুলতে ওই খালি বেদীতেই আমরা কুমারী পুজো করে মেতে উঠি। ওই কুমারীদেরকেই আমরা ‘উমা’ ভাবি। তাই আবার ‘উমা’র আগমনে গানে–গানে জাগরণ হল।” কুমারীদের আলতা মাখিয়ে, মিষ্টি মুখ করিয়ে হয় এই পুজো।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের এই পুজো ঝালদার রাজা নটবর সিংয়ের। প্রায় পুজোর শুরু থেকেই দশমীতে এই কুমারী পুজোর প্রথা চলছে। মা উমাকে বিসর্জন দেওয়া হলেও ওই এলাকার মহিলাদের বিশ্বাস দুগ্গা তাঁদের কাছেই রয়েছেন। ঢাক, কাঁসর, ঘন্টার বিষাদের সুরের মধ্যেই মহিলাদের দ্বারা এই কুমারী পুজো সেই দুঃখ যেন ভুলিয়ে দেয়। তাই ওই এলাকার বাসিন্দা গীতা মুখোপাধ্যায়, কণিকা চৌধুরি, চায়না হাজরা বলেন, “মায়ের বেদী খালি পড়ে থাকতে আমরা দিই না। কুমারী মেয়েকে আমরা মা উমা রূপে বরণ করে পুজো করি। মাকে বিদায় দেওয়ার বেদনা ভুলি।” তাই এই চট্টোপাধ্যায় পরিবারে দশমীর রাতে বোঝাই যায় না মা দুগ্গাকে ভাসানে নিয়ে গিয়েছেন এলাকার পুরুষরা। শাঁখ বাজিয়ে চলে কুমারীর আরাধনা। সেই সঙ্গে–সঙ্গে আগমনি গানে জাগরণ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.