স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহ কি কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপাত্র হয়েছেন! আত্মসমর্পণকারী কেএলও নেতার সাম্প্রতিক ভিডিও বার্তা শুনে ওই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) নেতৃত্ব।
যখন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ’ করে ঘর গোছানো এবং শক্তি প্রদর্শনের উদ্যোগী কেপিপি তখনই সামনে এসেছে কেএলও সুপ্রিমো জীবন সিংহের ভিডিও বার্তা। ২৩ মার্চ নিম্ন অসমের কোকরাঝাড় জেলার গোসাঁইগাঁওয়ে ‘কামতাপুর স্টেট ডিমান্ড কাউন্সিল’-এর গণসমাবেশে কেএলও সুপ্রিমো ভিডিও বার্তায় যেভাবে রাজ্যের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তাতে স্তম্ভিত কেপিপি নেতৃত্ব ভিন্ন খেলাও দেখছেন। জীবন সিংহ ভিডিও বার্তায় রাজ্য সরকারকে শুধু তীব্র আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন। বিশেষত কামতাপুরীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তিনি বেশি সরব হয়েছেন। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেএলও সুপ্রিমোর ওই ধরণের পদক্ষেপ ঘিরে তাই প্রশ্ন উঠেছে কেপিপি মহলে।
২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কেএলও সুপ্রিমো ছ’জন অনুগামীকে নিয়ে নাগাল্যান্ডের মন জেলার মায়ানমার সীমান্ত লাগোয়া নয়াবস্তি এলাকায় আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁকে দিল্লিতে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শান্তি বৈঠকের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে সরকারিভাবে ওই বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি পুরোপুরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়। এছাড়াও কামতাপুরি ভাষার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং পৃথক রাজ্য গঠনের দাবিও রাজ্যের পক্ষে পূরণ করা অসম্ভব। তবে কেন জীবন সিংহ ওই বিষয়ে নীরব থেকে শুধু রাজ্যের বিরুদ্ধে বারবার সরব হচ্ছেন? প্রশ্ন তুলেছেন কেপিপি নেতৃত্ব।
তাদের অভিযোগ, কেএলও সুপ্রিমো বিজেপি মুখপাত্রের মতো কথা বলছেন। কেপিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ বর্মন বলেন, “আমি জীবন সিংহের বক্তব্যের কিছুটা শুনেছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাঁর সঙ্গে শান্তি বৈঠক করেছে কিনা জানি না। ওই বিষয়টি কেন তুলে ধরছেন না বুঝতে পারছি না। ওর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছি না।” কেপিপি নেতৃত্বের অভিযোগ, শান্তি বৈঠক হলে কবে হয়েছে, না হলে কবে হবে সেটা কেন্দ্রীয় সরকার না জানিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে। শুধু তাই নয়। ২০০৯ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলকে লিখিতভাবে কামতাপুরী ভাষার স্বীকৃতি এবং পৃথক রাজ্যের আলোচনা শুরুর আশ্বাস দেয়। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত কয়েকবার দিল্লিতে গিয়েও লাভ হয়নি।
আলোচনা দূরঅস্ত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেখাও করেননি। জীবন সিংহের সঙ্গে শান্তি বৈঠকের নামে টালবাহানা করে অযথা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সমস্যার সমাধান না-করে অযথা ঝুলিয়ে রেখে বিজেপি সামনে বিধানসভা নির্বাচনে ফায়দা তোলার চেষ্টায় নেমেছে। সুভাষবাবু বলেন, “জীবন সিংহ নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করুক বিজেপি। জীবনবাবু নিজেও বলুন কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে চাইছে কিনা।” কেপিপি নেতৃত্বের একাংশের অভিযোগ, জীবন সিংহকে নজরবন্দি রেখে নির্বাচন এলেই বিজেপি নেতৃত্ব যেভাবে ব্যবহার করছেন তার ফলে ভুল বার্তা পৌঁছাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.