সন্দীপ চক্রবর্তী: ‘বিশ্ব বাংলা’কে তুলে ধরতেই চোখ ধাঁধানো শোভাযাত্রা হবে রেড রোডে৷ তিনটি থেকে পাঁচটি লরি রাখা যাবে প্রতি পুজো কমিটিতে৷ সাকুল্যে থাকতে পারবেন একশো জন করে৷ মোটামুটিভাবে ৫০ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসতে পারেন রেড রোডের শোভাযাত্রায়৷ সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে ‘ট্যাবলো’র রুটই আদতে নিরঞ্জন-পূর্ব শোভাযাত্রার রুট৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও ভিআইপিরা থাকবেন৷ বিদেশের বহু পর্যটক এই অভিনব শোভাযাত্রা দেখতে উৎসাহী৷ থাকবেন বিদেশি ও ভিন রাজ্যের অতিথিরাও৷ কলকাতায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেলদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ আসবেন বিভিন্ন রাজ্য ও দেশের পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত কর্তারাও৷ হাজার দুয়েক ভিআইপি-সহ মোট প্রায় ১২ হাজার ৫০০ অতিথির বসার ব্যবস্থা থাকছে৷ দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে ঘিরে এমন শোভাযাত্রাকে ‘রিও কার্নিভ্যাল’-এর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে৷ রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা মনে করছেন, এই শোভাযাত্রার ফলে পর্যটনের মানচিত্রেও রাজ্যের গুরুত্ব বাড়বে৷ প্রতিমা বিসর্জনকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস শুরু হয়েছে৷ তাই ‘ব্র্যান্ডিংয়ের’ উদ্যোগ ও ব্যবস্থা ব্যাপক৷
অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পুজো কমিটি চাইছে, শোভাযাত্রায় চমক এনে তাক লাগিয়ে দিতে৷ অভিনবত্ব আনতে চাইছে তারা৷ মূল মঞ্চের পাশে অতিথিদের বসার জায়গা৷ মূল ‘এরিয়ায়’ তিন মিনিটের মতো সময় পাওয়া যাবে৷ তাই এই অল্প সময়েই সবটা বোঝাতে অনেক কমিটি আবার ‘থিম মেকার’-এর দ্বারস্থ৷ বিকেল পাঁচটা থেকে অন্তত রাত আটটা পর্যন্ত চলবে শোভাযাত্রা৷ মোটামুটিভাবে ৩৮টি পুজো কমিটি ‘গ্র্যান্ড শো’-এ অংশ নেবে৷ প্রায় সবগুলিই বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানে ভূষিত৷ এদের মধ্যে ১৫টি সেরার সেরা তকমা পেয়েছে৷ নির্দেশ রয়েছে, প্রথমে বেলা আড়াইটের মধ্যে খিদিরপুরের বঙ্গবাসী মাঠে প্রতিমা ও লরি নিয়ে চলে আসবেন উদ্যোক্তারা৷
যে যেমনভাবে আসবে, তেমনভাবেই থাকবে শোভাযাত্রার মধ্যে৷ ফোর্ট উইলিয়াম মোড় থেকে শুরু হবে শোভাযাত্রা৷ পুলিশ স্মারক পর্যন্ত গিয়ে কোনও কমিটি চাইলে তখনই বাবুঘাটে বিসর্জন দিতে পারে৷ অথবা নিজেদের এলাকায় নিয়ে যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা করে দেবে৷ নিরাপত্তার খামতি না রেখে আটটি ওয়াচ টাওয়ার থেকে চলবে নজরদারি৷ প্রায় দুই হাজার পুলিশ থাকবেন নিরাপত্তায়৷ সাধারণ মানুষের জন্য থাকবে পাঁচটি গেট৷
সেরার সেরা ১৫টির মধ্যে সুরুচি সংঘ, বোসপুকুর তালবাগান, শ্রীভূমি, হিন্দুস্থান পার্ক, কাশী বোস লেন সর্বজনীন, আহিরীটোলা সর্বজনীন, চেতলা অগ্রণী, অবসর, সমাজসেবী, ৪১ পল্লি, বড়িশা ক্লাব, ৬৬ পল্লি, ভবানীপুর ৭৫ পল্লি, সন্তোষপুর অ্যাভিনিউ সাউথ পল্লিমঙ্গল থাকছে শোভাযাত্রায়৷ সেরা মণ্ডপের পুরস্কার পেয়ে নাকতলা উদয়ন, দমদম পার্ক তরুণ দল বা সল্টলেক একে ব্লক মণ্ডপের থিম তুলে ধরবে৷ সেরা প্রতিমার সম্মানে ভূষিত ত্রিধারা ‘রেপ্লিকা’র পাশাপাশি ট্রেলারে আদিবাসী নৃত্য তুলে ধরবে বলে জানালেন উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমার৷ ৯৫ পল্লি, বাদামতলা আষাঢ় সংঘও একইভাবে ভিন্ন রুচি নিয়ে আসবে৷ সেরা আলোকসজ্জার পুরস্কার বিজয়ী কালীঘাট মিলন সংঘ, একডালিয়া এভারগ্রিন, শিবমন্দির আলোর কারসাজি দেখাতে চায়৷ একডালিয়ার সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “আমাদের প্রতিমা দেখেই মানুষ আনন্দ পাবেন৷” সুরুচির স্বরূপ বিশ্বাস অবশ্য ‘ধামাকা’য় বিশ্বাসী৷ তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “সুরুচি বরাবরই সবেতে সেরা৷ এবারও রেড রোডের শোভাযাত্রায় ধামাকা থাকবে৷ প্রযুক্তি ও পারফরম্যান্সে তাক লাগবে৷” সমাজসেবী সংঘ আবার পুজোর থিম ‘আমার দুর্গা’কেই তুলে ধরবে৷ সাবেকি বাঙালিয়ানায় মহিলারা পরবেন লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, পুরুষরা ধুতি৷ কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস দত্ত জানান, অভিনবত্ব থাকবে৷ শোভাযাত্রার একদম শুরুতে মহিলারা ‘আমার দুর্গা’ নৃত্যনাট্য করবেন৷ এমন নানা ভাবনা রয়েছে বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তাদের৷
সেরা ভাবনায় ভূষিত অজেয় সংহতি, খিদিরপুর ২৫ পল্লি, রাজডাঙা নবোদয় সংঘ যেমন শোভাযাত্রায় অংশ নেবে, তেমনই ‘সেরা আবিষ্কার’ বেহালা নতুন সংঘ ও টালা পার্ক প্রত্যয় ও ‘সেরা ঢাকেশ্রী’-র শিরোপা পাওয়া টালা বারোয়ারি, কলেজ স্কোয়ার ও ২১ পল্লিও নিজেদের মতো করে শোভাযাত্রায় অংশ নেবে৷ প্রতিটি পুজো কমিটিই চাইছে একে অপরকে টেক্কা দিতে৷
উল্লেখ্য, বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মানের জন্য বিজয়ী পুজো কমিটির নাম ঘোষণা করেছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রধান সচিব অত্রি ভট্টাচার্য৷ শোভাযাত্রার বিষয়ও তিনি প্রথম থেকে তদারকি করেছেন৷ বিসর্জনের শোভাযাত্রার মাধ্যমে যে রাজ্যের পর্যটন সম্ভাবনা আরও বাড়বে, সে বিষয়ে সংশয় নেই আধিকারিকদেরও৷ বৃহস্পতিবার শোভাযাত্রার খুঁটিনাটি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসেন৷ ছিলেন নগরপাল রাজীব কুমারও৷ নিরাপত্তায় চারটি কুইক রেসপন্স টিম, ছ’টি পুলিশ সহায়তা বুথ, দশটি অ্যাম্বুল্যান্স থাকবে৷ ৯ জন ডিসি পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার থাকবেন নিরাপত্তার তদারকিতে৷ রেড রোড ও কিংসওয়ে সাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হবে দুপুরের পর থেকেই৷ এদিকে, বৃহস্পতিবার গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে বহু বারোয়ারি পুজোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে৷ এদিন বাজে কদমতলা ঘাট পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে নির্বিঘ্নে নিরঞ্জন হয়েছে৷ দূষণের দিকে নজর রাখা হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.