অর্ণব আইচ: শহরের কোন কোন দোকানের সামনে রয়েছে সিসিটিভি? কোন বহুতলের দোতলায় সিসিটিভি বসানোর ফলে চোখে পড়ে রাস্তার দৃশ্য? কোন রেস্তোরাঁর দরজার মুখে বসানো সিসিটিভির ফুটেজেই বা দেখা যায়, কারা যাতায়াত করছেন ফুটপাথ দিয়ে?
সেই উত্তর জানা ছিল না পুলিশের৷ অথচ অপরাধীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশকে অনেক সময়ই নির্ভর করতে হয় সিসিটিভির ফুটেজের উপর৷ ট্রাফিক পুলিশের ফুটেজ দেখে অনেক সময়ই অপরাধীদের শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়৷ তাই বেসরকারিভাবে বসানো শহরের প্রত্যেকটি সিসিটিভি-র ‘ডেটাবেস’ তৈরি করছে লালবাজার৷ শহরের আনাচকানাচ, অলিগলির কোন জায়গায় ক’টি সিসিটিভি রয়েছে, তারই তালিকা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে৷ এখানেই শেষ নয়৷ ওই সিসিটিভি-র ডেটাবেস বসানো হবে ‘গুগল ম্যাপ’-এ৷ তার ফলে কোনও ঘটনা ঘটার এক মিনিটের মধ্যে লালবাজার অথবা থানায় বসে পুলিশ আধিকারিকরা জেনে যাবেন যে, কোন কোন সিসিটিভিতে উঠতে পারে ঘটনাস্থলের ফুটেজ৷ সেই ফুটেজ দেখে খুব কম সময়ের মধ্যেই শনাক্ত করা যাবে অপরাধীদের৷ লালবাজারের এক গোয়েন্দা কর্তার মতে, অপরাধীদের শনাক্তকরণের জন্য এটি কলকাতা পুলিশের একটি অনবদ্য প্রয়াস৷
কিছুদিন আগেই বালিগঞ্জে ম্যাডক্স স্কোয়ারের কাছে গভীর রাতে বাইক-আরোহী যুবকদের মারে মৃত্যু হয় সোনারপুরের বাসিন্দা এক ইঞ্জিনিয়ারের৷ অপরাধীদের শনাক্ত করতে গিয়ে দেখা যায় যে, বিশেষ কাজের জন্য রাত বারোটা থেকে ভোর পর্যন্ত বন্ধ করা ছিল ট্রাফিক পুলিশের ক্যামেরা৷ এলাকায় খুঁজে দু’টি বাড়ির সিসিটিভি-র সন্ধান মেলে৷ সেগুলি ঘেঁটে কিছু ফুটেজও পাওয়া যায়৷ একাধিকবার বড়বাজার বা পোস্তা এলাকায় বিভিন্ন দোকানের সিসিটিভি দেখেই তদন্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ৷ ধরা পড়েছে অপরাধীও৷
লালবাজারের এক গোয়েন্দা আধিকারিক জানান, কোনও ঘটনা ঘটার পর সমস্যা হয় সিসিটিভি-র খোঁজ পেতে৷ অনেক সময়ই ট্রাফিকের সিসিটিভি-র ফুটেজে তথ্য মেলে না৷ কারণ, শহরের প্রত্যেকটি রাস্তায় নেই ট্রাফিকের সিসিটিভি৷ আবার শহরের বহু গলি বা অপরিসর রাস্তার উপর বাড়ি বা দোকানেও বেসরকারি উদ্যোগে বসানো হয় সিসিটিভি৷ ওই বাড়ি বা দোকান লাগোয়া ফুটপাথ বা রাস্তার ফুটেজও ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরায়৷ এমনও দেখা গিয়েছে যে, কোনও বাড়ির ভিতর রয়েছে ক্যামেরা, কিন্তু উল্টোদিকের গলি বা রাস্তার ছবিও ফুটে উঠছে সিসিটিভিতে৷ তাই বেসরকারি সিসিটিভির সাহায্য নেন গোয়েন্দারা৷
কিন্তু সিসিটিভি ক্যামেরা কোথায় বসানো আছে, তা খুঁজতে অনেক সময় লাগে পুলিশের৷ কারণ, কোনও থানার আধিকারিকরাই জানেন না যে, তাঁদের এলাকায় ক’টি সিসিটিভি ক্যামেরা বেসরকারি উদ্যোগে বসানো হয়েছে৷ এবার সেই সমস্যা এড়াতেই তৈরি হচ্ছে ‘ডেটাবেস’৷ কোন থানা এলাকায় বেসরকারি উদ্যোগে ক’টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলি কোন রাস্তার উপর ও কোন বাড়ি বা দোকানের কোন জায়গায় বসানো রয়েছে, সেই বিস্তারিত তথ্য থাকবে ডেটাবেসে৷ এই ডেটাবেস তৈরি হওয়ার পর তা বসানো হবে ‘গুগল ম্যাপ’-এ৷ কোনও ঘটনার পর পুলিশ গুগল ম্যাপ খুললেই দেখতে পাবেন যে, ঘটনাস্থলের আশপাশে ক’টি সিসিটিভি কোন জায়গায় রয়েছে৷ ফলে আন্দাজে আর হাতড়াতে হবে না৷ কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই সিসিটিভি ফুটেজ চলে আসবে পুলিশের হাতে৷ শনাক্ত করা হবে অপরাধীদেরও৷
অনেক সময়ই সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলির হার্ড ডিস্ক অকেজো থাকে বা রেকর্ডিং সিস্টেম থাকে না৷ এই ডেটাবেস তৈরির সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকটি সিসিটিভি ও তার রেকর্ডিং সিস্টেমও যাতে কাজ করে, সেই বিষয়েও সিসিটিভি-র ‘মালিক’দের সতর্ক করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.