ছবিতে চক্রবর্তীবাড়ির গতবারের দুর্গা প্রতিমা
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল শিলিগুড়ির চক্রবর্তী বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: বনেদি বাড়ির পুজোয় থিম সং। শুনেই কেমন খটকা লাগছে, তাই না? আরে খটকা সরিয়ে রাখুন। এপার বাংলায় চক্রবর্তী বাড়ির পুজো চার বছরে পড়ল। প্রথা ভেঙে এবার বাড়ির পুজোতে থিম সংয়ের আয়োজনে নজর কেড়েছেন শিলিগুড়ির দীপজ্যোতি চক্রবর্তী। শুধু গান নয়, অতিথি অভ্যাগতরা ঠাকুর দালানে এলেই চলবে প্লাস্টিক বিরোধী স্লোগান। সেই স্লোগানের যোগ্য সঙ্গতে রয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফের প্রচার’ও। থিম সংয়ের পাশাপাশি মন্দিরে বাজবে সরকারি উদ্যোগে তৈরি পথ নিরাপত্তা সম্পর্কিত গানও।
শিলিগুড়ির বাড়িতে পুজোর বয়স চারবছর হলেও ওপার বাংলায় ধুমধামের সঙ্গেই উমার আরাধনা করতেন চক্রবর্তী বংশের পূর্বপুরুষরা। যার উদ্যোগে এই অভিনব ভাবনা সেই দীপজ্যোতিবাবু জানান, তাঁদের এই পুজো বহু পুরনো। ওপার বাংলায় থাকাকালীন দেশের বাড়িতে পুজো হত। সেই পুজোকেই নতুন আঙ্গিকে শুরু করা হয়েছে। পরবর্তীতে তাঁর পরিবার বাংলাদেশ থেকে এপার বাংলার হুগলি ও পরে শিলিগুড়িতে এসে থিতু হয়। মাঝে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। চারবছর আগে নতুন করে পুজোর পরিকল্পনা করেন দীপজ্যোতিবাবু। খুঁজে নিয়ে আসেন পুরনো ঐতিহ্য ও রীতিনীতির তালিকা। প্রথা মেনে বছর বছর ডাকের সাজের একচালা প্রতিমাই আসে চক্রবর্তী বাড়িতে। অল্প কয়েক বছরেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবার ফের এক ছাদের নিচে চলে আসে। গোটা পরিবারকে এক করতে উদ্দেশ্যগতভাবে তিনি যেমন সফল, তেমনি পাশাপাশি দীপজ্যোতিবাবুর আমন্ত্রণে তাঁর পুজোয় পা রাখেন না এমন লোক শহরে বিরল।
পুজোর চারটি দিন শিলিগুড়ির দেশবন্ধু পাড়ার চক্রবর্তী বাড়ি আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে গমগম করতে থাকে। তাঁর মুখেই শোনা গেল পারিবারিক পুজোর ইতিহাস। পুজো শুরু করেছিলেন পূর্বপুরুষরা। তবে কবে থেকে শুরু হয় তা নিয়ে স্পষ্ট কোনও ধারণা নেই। আদিবাড়ি ছিল ঢাকার বিক্রমপুরের বাঘড়া এলাকায়। ছেলেবেলায় বাবা-মায়ের মুখে শুনেছেন সেখানকার পুজোর স্মৃতি। দেশভাগের পর বিক্রমপুর থেকে গোটা পরিবার কলকাতায় চলে আসে। প্রথমে ছিন্নমূলের মতো এদিকসেদিক ঘুরে দক্ষিণবঙ্গের হুগলিতে থিতু হয়। পরে পরিবার বাড়লে চক্রবর্তীদের অনেকেই উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে চলে আসেন। এরমধ্যে ৫০ বছর কেটেছে। ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোর জন্য এবার বাংলার বাড়িতে কোনও ঠাকুর দালান ওঠেনি। বাবা অনিল চৌধুরি শিলিগুড়িতে আসার পর অনেকগুলি বছর কেটেছে। দীপজ্যোতিবাবু আইনিজীবীর পেশায় পসার লাভ করেছেন। সেইসঙ্গে চলছে পর্যটন ব্যবসাতেও গুছিয়ে নিয়েছেন তিনি। এলাকায় পরিবেশপ্রেমী হিসেবে নাম খ্যাতিও রয়েছে তাঁর। ফের গোটা পরিবার ও পরম্পরাকে একত্রিত করতে চেয়ে চার বছর আগে পুজো শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে সব গোছাচ্ছেন। নিজে পরিবেশপ্রেমী, তাই প্লাস্টিক বিরোধী স্লোগানকেই মুখ্য করলেন। লোকগানের প্রতি আলাদা টান রয়েছে তাঁর। কলকাতার লোকশিল্পী পার্থসারথি মজুমদারকে দিয়েই বাড়ির পুজোর থিম সং গাইয়েছেন। সুরও ওই শিল্পীর দেওয়া। আশা রাখেন ওপার বাংলার জনপ্রিয়তা ফিরবে শিলিগুড়িতেও। থিম সং দিয়েই যার সূচনা হল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.