শুভময় মণ্ডল: তীব্র দহন জ্বালায় জ্বলছে পৃথিবী। আমাজন থেকে অ্যান্টার্কটিকা, আলাস্কা থেকে অস্ট্রেলিয়া। সর্বত্র ধ্বংসের ইঙ্গিত। ধরণীর অসুখ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। প্রশ্নের মুখে মানব সভ্যতা। অবশ্য তার জন্য মানুষই দায়ী। মানব সমাজ যান্ত্রিক সভ্যতা বিকাশের নামে বিশাল বিশাল গগনচুম্বী ইমারত, প্রাসাদোপম অট্টালিকা, চোখধাঁধানো শপিং মল নির্মাণ, নদ-নদীর গতিপথ রুখে জলাধার তৈরি। অকাতরে নির্মমভাবে ধ্বংস করা সবুজ বনানী। ঈশ্বরসৃষ্ট প্রকৃতিকে তিলে তিলে শেষ করার জন্য পৃথিবীকে দহন জ্বালায় দগ্ধ করছে মানুষ। ভয়াবহতার সেই রূপই এবার ফুটে উঠছে খিদিরপুরের ২৫ পল্লির পুজোমণ্ডপে। সমগ্র ভাবনা ও রূপায়ণে স্বনামধন্য শিল্পী সনাতন দিন্দা।
যথেচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যবহার, জলাশয় বুজিয়ে নির্মাণ, বনানী ও বন্যপ্রাণ ধ্বংস করা- এসবই ভবিষ্যতে কাল হতে চলেছে মানব সভ্যতার জন্য। অস্তিত্ব সংকট হওয়ার আগে মানুষকে সচেতন হওয়ার বার্তা দিতে মণ্ডপসজ্জা করেছেন শিল্পী। দহনে পুড়ছে পৃথিবী, মাটির নিচের জলস্তর প্রায় শেষের মুখে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে গলছে কুমেরুর হিমবাহ। এই পরিস্থিতিতে দেবী শক্তির শরণাপন্ন হতে বলছেন শিল্পী। মাতৃ আরাধনার মধ্যে দিয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার কথা বলছেন শিল্পী। সবুজ ফিরিয়ে দেওয়ার, পানীয় জলের অপচয় বন্ধ করার, ধরণীকে প্লাস্টিকের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞা নেওয়ার। সেই কারণেই গোটা মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল, ক্যারিব্যাগ, মাটির কলসী দিয়ে। ফাঁকা কলসী দিয়ে জলশূন্য পরিস্থিতি বোঝানো হচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণ হিসাবে মণ্ডপে ব্যবহৃত হচ্ছে বৈদ্যুতিক সামগ্রী।
থিম ভাবনার পাশাপাশি প্রতিমার নেপথ্যেও শিল্পী সনাতন দিন্দা। এবছর ৭৫তম বর্ষ ২৫ পল্লির পুজোর। তাই স্বনামধন্য শিল্পী সনাতন দিন্দার উপরই মণ্ডপসজ্জা ও প্রতিমা নির্মাণের ভার ন্যস্ত করেছেন উদ্যোক্তারা। সেইসঙ্গে নিজস্ব ভাবনা ও শৈলীর মাধ্যমে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও জ্বলন্ত সমস্যাকে দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরতে চলেছেন শিল্পী। শিল্পীর ভাষায়, ‘প্রগার দহনে জ্বলছে পৃথিবী। পানীয় জল প্রায় শেষ। হিমালয়ের বরফ গলছে। আরও উত্তপ্ত হচ্ছে ধরণী। তারই মধ্যে দেবী দুর্গার কাছে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই। এই দহনজ্বালা থেকে মুক্ত করব ধরণীকে।’
কীভাবে সেজে উঠছে মণ্ডপ, দেখুন ভিডিওয়-
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.