ছবিতে দাস পট্টনায়েক বাড়ির প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। ছবি: সৈকত সাঁতরা।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল দাঁতনের পোরলদার দাস পট্টনায়েকদের দুর্গাপুজোর কথা।
অংশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: ২০০ বছর পেরিয়ে আজও ঐতিহ্যে অটুট পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরের দাস পট্টনায়েকদের বাড়ির পুজো। ২০০ বছরের রীতির হেরফের বলতে শুধু দুর্গাদালানের চেহারা বদলে যাওয়া। আগে মাটির চালাঘরে মায়ের আরাধনা হত। এখন সেখানে কংক্রিটের দুর্গাদালান সপরিবারে উমা আসেন। সেই একই নিয়মে হোম-যজ্ঞ সহকারে হয় পুজো। দাঁতন দুই নম্বর ব্লকের পোরলদা গ্রামের দাস পট্টনায়েকদের পুজো হয় কৌলিক প্রথায়। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে একটি বেলতলায় আগমনী গানের মধ্য দিয়ে পুজোর শুভারম্ভ হয়৷
তৎকালীন পোরলদা গ্রামের জমিদার নারায়ণ দাস পট্টনায়েকের হাত ধরেই এই পুজোর প্রচলন। পুরী থেকে বঙ্গদেশের পাঁচটি পরগণার জমিদারির দায়িত্ব নিয়ে দাঁতনের পোরলদায় চলে আসেন নারায়ণ দাস পট্টনায়েক। সেই থেকেই এই গ্রামে বচ্ছরকার উমার আরাধনা চলে আসছে। দাস পট্টনায়েক বাড়ির আগে পোরলদায় কোনও দুর্গাপুজো হত না। তাই এই বাড়িতে পুজো মানেই গোটা গ্রামের পুজো। আগে মাটির চালাঘরে মা আসতেন। এখন প্রায় চারপুরুষ হয়ে গেল কংক্রিটের দুর্গাদালানে সপরিবারে মা আসেন। পাঁচটি দিন হইহই করে কেটে যায়।
২০০ বছরের রীতির বদল না হলেও বদলেছে পোরলদা-সহ গোটা দাঁতন। তাই বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। বাড়ির পুজোর প্রতি সেই আকর্ষণ এখন আর খুব একটা দেখা যায় না। এমনটাই দাবি দেবজ্যোতি ওরফে বর্তমান পুজোকর্তা জহর দাস পট্টনায়েকের। পুজোর প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ দাস পট্টনায়েকের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে শিবনারায়ণ পুজোর হাল ধরেন। এরপর শিবনারায়ণের মৃত্যুতে বংশের পরবর্তী প্রজন্ম সলিল দাস পট্টনায়েকের হাতে আসে পুজোর দায়িত্ব। এতদিন তিনিই সামলেছেন সবকিছু। গতবছর থেকে বাড়ির পুজোর ভার নিয়েছেন দেবজ্যোতিবাবু। তিনিই জানালেন বংশের ইতিহাস। বেলুড় মঠের পঞ্জিকামতে দাস পট্টনায়েকরা বাড়ির পুজো করে থাকেন। আগে গ্রামের একটাই পুজো হত, তা এই দাস পট্টনায়েকদের বাড়িতে। পুজো উপলক্ষে নামগান, যাত্রাপালা, বিচিত্রানুষ্ঠানের আসর বসত। এখন সেসব কিছু আর হয় না। আগে অষ্টমীর দুপুরে গ্রামের মানুষকে বসিয়ে ভোগ খাওয়ানো হত৷ বর্তমান সময়ে মানুষের এই পারিবারিক পুজোর প্রতি আকর্ষণ ও আগ্রহ হারিয়ে যাওয়ায় ভোগ খাওয়ানোর রীতি বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ তবে পুজোর কটাদিন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আত্মীয়রা ফেরেন পোরলদার বাড়িতে। দুর্গাদালানে পুজোর আয়োজনের পাশাপাশি স্মৃতিচারণে মেতে ওঠে গোটা বাড়ি। হইহই করে কেটে যায় পাঁচটি দিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.